তিন পয়েন্ট অপরাধীদের জন্য অভয়ারণ্য : ধ্বংসের পথে বন-পাহাড়

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩
0

॥ কাঠ পাঁচারকারীদের সাথে রেঞ্জ কর্তাদের সখ্যতাসহ অভিযোগের পাহাড় ॥

আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির তিন পয়েন্ট এখন অবৈধ কাঠ পাঁচারকারীদের জন্য অভয়ারণ্য। রাঁতের আঁধারে গোল গাছ,রদ্দা,মূল্যবান গাছের বিশেষ অংশ,ঢালপালা,কঁচিকাচা গাছের বেঁড়ে গাছসহ দেদারছে পাঁচার করছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। এ অবৈধ গাঠ পাঁচারকারী সিন্ডিকেট চক্রটি স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোঁখ ফাঁকি দিতে ব্যবহার করছে বিভিন্ন আঁধা কাঁচা পাকা বিকল্প সড়ক।

দিনের পর দিন অবৈধ এ কাঠ পাঁচারের কেন্দ্র বিন্দু খাগড়াছড়ির গুইমারা জালিয়াপাড়া,মানিকছড়ি সড়ক হয়ে গাড়িটানা ও রামগড়ের সোনাইপোল সড়ক। অবৈধ কাঠ পাঁচার বন্ধে সরকার রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় স্থাপন করলেও প্রভাবশালী,বনখেকো সিন্ডিকেন্ট চক্রের অদৃশ্য কারনে নীরবতা পালন করছে বন কর্তারা, তারা এতোটাই শক্তিশালী যে বন বিভাগ অবৈধ কাঠ পাঁচারকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ফরেস্ট অফিসারদের সাথে কাঠ পাঁচারকারীদের সখ্যতার কারনে অর্থে অসহায় রেঞ্জ কর্তারা। এসব বিষয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রচার হলেও নেই কোন যথাযথ ব্যবস্থা। ফলে সরকার হারাচ্ছে বছরে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। ধ্বংস হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের বন-পাহাড়ের মূল্যবান বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি পাহাড় এক সময় বসবাস অউপযোগি হয়ে উঠবে বলে মনে করছে সচেতন সমাজ।

বিভিন্ন সময় পাহাড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান ও অবৈধ কাঠ জব্দ করলেও ধরা-ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে অবৈধ কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্র। অন্যদিকে পাহাড়ের আরেক বন খেকো ইটভাড়া এরই মধ্যে হাই কোর্টের রিটের ফলে কাঠ পোড়ানো বন্ধসহ ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বসে নেই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র।

নামে-বেনামে সরকার দলের নাম ব্যবহার করে অবৈধ গাছ পাঁচারকারীরা নিজেদের প্রভাবশালী বলে ঝাঁহির করতে নিজেদের সরকার দলকে কলঙ্কিত করলেও অদৃশ্য শক্তির জোরে তাদের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেয় না কোন প্রশাসন। বরং তারা প্রতিটি সেক্টর ম্যানেজ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে হুংকার দিয়ে বেড়ান প্রকাশ্যে। এসব কারনে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বন বিভাগ থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী প্রশাসনও। তাই অচিরেই অবৈধ কাঠ পাঁচার বন্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী বলে মনে করছে পার্বত্যবাসী।
গুইমারা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: আইয়ুব আলী বলেন,অবৈধ কোন কাঠ পাঁচারের সাথে আমাদের সংগঠনের কেউ জড়িত নয়। কাঠ-বাঁশ পাহাড়ের প্রধান ব্যবসা ক্ষেত্র। বৈধ কাগজে কাঠ নেওয়ার সময় অনেক সময় ভুল বুঝাবুঝি হয়ে যায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জালিয়াপাড়া চার রাস্তার মুল পয়েন্টে রেঞ্জ অফিসারের কার্যালয় থাকার পরও কিভাবে অবৈধ কাঠ পাচার দিনের পর দিন চলে আসছে এবং কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না তা জানতে চাইলে জালিয়াপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মহসিন তালুকদার জানান, বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এখানে কাঠ পাঁচার অসম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন প্রশাসনিক বেষ্টনি এবং জালিয়াপাড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি ও গুইমারা-সিন্দুকছড়িতে সেনাবাহিনীর চোঁখ ফাঁকি দিয়ে কাঠ পাঁচারের চেষ্টা রীতিমত অসম্ভবই নয় শুধু এটি নিজ হাতে বিপদকে স্বাগত জানানোর মত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মানিকছড়ির (গাড়িটানা) রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী তামিল রসুল বলেন,কাঠ পাঁচার বন্ধে আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর মানিকছড়ির সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে বুধবার প্রায় ৩ গাড়ি গোল গাছ জব্দ করা হয় বলে তিনি জানান। এ সময় তিনি সিক্রিকেট চক্রের সাথে রেঞ্জ কর্মকর্তাদের সখ্যতা অভিযোগ অবান্তর বলে জানান। সে সাথে তিনি পাঁচার রোধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান।

রামগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: রোকনুজ্জামান জানান, অবৈধ কাজ পাচার রোধে আমার স্টেশন শতভাগ সক্রিয় আছে। এই রেঞ্জ এলাকায় প্রশাসনিক বেষ্টনি থাকায় পাঁচারকারীরা সফল হওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রশাসন ও বন বিভাগের নজরদারী এরিয়ে পাঁচার সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান। একই সাথে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে তিনি সব সময় তৎপর বলে জানান।

খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির বলেন, পাহাড়ের বন রক্ষাসহ কাঠ পাঁচার প্রতিরোধে বন বিভাগ,বিডিআর,সেনাবাহিনী, প্রায় অভিযান পরিচালনা করে থাকে। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া বা পাঁচার বন্ধে আমার প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। এরই মধ্যে অবৈধ কাঠ পাচারকারীদের দৌরত্ম,বৃদ্ধি পাওয়া অপচেষ্টা বন্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। একই সাথে প্রশাসনের সাথে স্থানীয়দের আইনের প্রতি সচেতরতার বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করে অচিরেই অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।

আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি