‘দিনে পাঁচ বার আজানে মুসলমানদের যে মঙ্গলের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে সেদিকে খেয়ালই করিনি’

আপডেট: জুন ১৫, ২০২২
0


মাহমুদুর রহমান

সম্পাদকীয়র শিরোনাম পড়ে পাঠক চমকে উঠতে পারেন। প্রশ্নও করতে পারেন, প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশ হিন্দুত্ববাদি হয় কি করে? অর্ধ শতাব্দির সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলেই বাংলাদেশের আজ এই অশুভ পরিণতি। তথাকথিত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ছত্রছায়ায় বাঙ্গালী মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনে হিন্দু সংস্কৃতির বিস্তার ঘটায় আমরা মুসলমানের ধর্ম, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি ভুলতে বসেছি। পত্রপত্রিকা এবং সাহিত্যে আমরা পানি শব্দ ভুলে জলে অভ্যস্ত হয়েছি। নববর্ষ পালনের নামে হিন্দু রীতিকে আলিঙ্গন করেছি। মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে পৌত্তলিকতা মেনে নিয়েছি। অথচ, দিনে পাঁচ বার আজানে মুসলমানদের যে মঙ্গলের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে সেদিকে খেয়ালই করিনি। করবই বা কি করে? আজানের শব্দের অর্থ কোনদিন জানারই চেষ্টা করি নাই। যারা আমার আজকের সম্পাদকীয় পড়ছেন তারা অনুগ্রহ করে আজানের বাক্যগুলোর অর্থ আজই জানার চেষ্টা করুন। দেখবেন আজানের মধ্যে মানুষকে অবিরত মঙ্গল এবং কল্যাণের দিকেই আহ্বান করা হচ্ছে। কোন মুসলমান মূর্তিপূজার মধ্যে মঙ্গল খুঁজতে পারে না। এটা একেবারেই পৌত্তলিকদের সংস্কৃতি। বিশেষ করে গত চৌদ্দ বছরে হিন্দুত্ববাদি শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের যাবতীয় আচারকে ক্রমাগত পৌত্তলিকতার দিকে নিয়ে গেছেন। দেশের সর্বত্র শেখ মুজিবের বেসুমার মূর্তিসহ নানারকম মূর্তি বানিয়ে বাংলাদেশের ইসলামী পরিচয়কেই লঘু করে ফেলা হয়েছে।
পবিত্র কোরান শরিফে ইবলিশের চেহারা কিংবা আকৃতির কোন বর্ণনা নাই।পবিত্র গ্রন্থ পড়ে আমার অতি সামান্য জ্ঞানে যতটুকু বুঝেছি তা হলো, আল্লাহতায়ালা ইবলিশকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে বিপথগামী করার জন্য তাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছেন। অনেক হাদিসে আছে, জ্বীন নাকি মানুষের আকৃতি নিতে পারে। ইবলিশ মানুষের আকৃতি নেয় কিনা সে সম্পর্কে আমি কোথাও পড়ি নাই। তবে বিপথগামী মানুষকে সচরাচর ইবলিশের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। গত চৌদ্দ বছরে বাংলাদেশের শাসকশ্রেণি দেশের জনগণের উপর যে ভয়াবহ জুলুম চালিয়েছে, দেশের সম্পদ যেভাবে লুটপাট করেছে, তাতে করে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, স্বয়ং ইবলিশের শাসনও এর চেয়ে অধিক পীড়াদায়ক হতো কিনা। কিংবা ইবলিসের স্বগোত্রীয়রাই বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে কিনা?

বাংলাদেশ যে মুসলিম উম্মাহ থেকে কতখানি পথভ্রষ্ট হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুত্ববাদি ভারতে আমাদের প্রাণপ্রিয় রসূল হযরত মোহাম্মদ(সা: আ:)কে অবমাননার ঘটনায় পূনর্বার প্রমাণিত হয়েছে। মোদির বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর মুসলমানরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেও বাংলাদেশের হিন্দুত্ববাদের সমর্থক সরকার একটি শব্দও উচ্চারণ করে নাই। দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান, মালদ্বীপ এবং পাকিস্তান ভারত সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানালেও বাংলাদেশ কোনরকম মৃদু প্রতিবাদ করা থেকেও বিরত রয়েছে। আমাদের স্মরণে রাখা দরকার যে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ইসলামবিদ্বেষী হাসিনা সরকারের ইন্ধনেই শাহবাগের নাস্তিক ব্লগারগোষ্ঠী ভারতের বিজেপির নেতাদের মত করেই আমাদের মহানবীর (সা: আ:) বিরুদ্ধে চরম অশ্লীল কুৎসা প্রচার করেছিল।

সেই সময় একজন ব্লগার রহস্যজনকভাবে নিহত হলে শেখ হাসিনা তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ঘোষণা করেছিলেন। হাসিনার নির্দেশে সকল সরকারী কর্মচারী এবং সংসদ সদস্যরা ঘৃন্য ইসলামবিদ্বেষী চক্রের সমর্থনে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের তাবৎ ইসলামবিদ্বেষী প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া মহানবী (সা: আ:)র অসন্মানকারিদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দিয়ে তাদের পক্ষে দিবারাত্র প্রচার করতে থাকলে একমাত্র ‘আমার দেশ’ ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীকে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে দেশের আলেম-ওলামারা সেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই প্রতিরোধ সংগ্রামের দুই মুমিন সেনাপতি, মরহুম আল্লামা আহমেদ শফি এবং মরহুম জুনায়েদ বাবুনগরীকে উত্তম পুরষ্কার প্রদানের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা জানাই। রসূলের (সা: আ:) অবমাননাকারিদের বিরুদ্ধে বীরোচিত সংগ্রামে অংশগ্রহনকারীদের উপর ইসলামবিদ্বেষী সরকারের জুলুম আজ পর্যন্ত চলছে। হাজার হাজার আলেম এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের বানোয়াট মামলায় বছরের পর বছর ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ইসলামের সৈনিকদের উপর এমন জুলুম আর কোন মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে দেখা যাবে না।
শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মাত্র দুই দিন আগে দিল্লির নির্দেশে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ঘোষণা করেছে যে, সার্কের যে কোন কর্মসূচিতে ঢাকা আফগানিস্তানের অংশগ্রহণের জোর বিরোধিতা করবে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছেন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের এই নতজানু পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে মুসলিম স্বার্থবিরোধী। আফগানিস্তানের বীর, স্বাধীনচেতা জনগণ অনেক রক্তের বিনিময়ে তাদের দেশকে বিদেশি দখলদার বাহিনী থেকে মুক্ত করেছে। আফগান জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা তার হিন্দুত্ববাদি চরিত্রকেই উন্মোচিত করেছেন।

সুতরাং, আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই ইসলামের পক্ষে বৃহত্তর সংগ্রামেরই অংশ। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপি’র নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ইসলাম প্রশ্নে একপ্রকার দোদুল্যমানতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সমস্ত মুসলিম বিশ্বে ইন্ডিয়ার চরম ইসলামোফোবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হওয়ার বেশ পরে দলটি একটি দায়সারা বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছে। বাংলাদেশের অনেকগুলো ছোট দল হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ করলেও বিএনপি এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনও করে নাই। স্বাধীনতার মহান ঘোষক মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামের আদর্শে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলেও দলটির বর্তমান শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারত প্রশ্নে এক ধরনের ভীরু, আপোষকামিতা লক্ষ্যণীয়। তাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, এই ধরনের আদর্শচ্যুতি নিয়ে কোন ফ্যাসিস্ট শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
লেখক: সম্পাদক আমার দেশ

লেখাটি আমার দেশ অনলাইন ইউকে থেকে নেয়া