দু’চামচ দুঃখ বেচি !!

আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২৩
0

তাহমিনা আমিন:

এই বলে আমি ক্রয় মুল্য ঠিকঠাক করতে করতেই দেখি আমি আমার লম্বা আয়ুর চেয়েও বেশি দুঃখ কিনে গভীর ব্যথাবোধ নিয়ে জমে গাছ হয়ে গেছি।
আমার রান্নাঘরের জানালায় রাখা ছোট্র টবের গাছ না !

ভরা বাজার জমে উঠা ঐ শত বছরের পুরোনো বট গাছটার মতো।
আজকাল ইচ্ছে হয় আবার মানুষ হই –
মানুষ হয়ে
ঢাকা শহরের হুট করে এসে মাথা ভিজিয়ে না দেয়া বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে ,
ঘন পাহাড়ের গাছ দিয়ে ডেকে যাওয়া দিনের অন্ধকারের হাড় কাঁপানো
ঐ বৃষ্টির জন্যে হৃদয় আর পেট পুড়াইয়ে দুঃখি হই,
ধবধবে দুধ সাদা জামার মধ্যে কিশোরির রক্তে লাল হওয়া মূহর্তের মতো দুঃখ হই ।

তোমার এক কাপ চায়ের তৃষ্ণা হই
আর তোমাকে হারানোর দীর্ঘ বোবা কান্না র মতো দুঃখি !

মাঝামাঝে ইচ্ছে হয় ,স্লোগান আর মিছিলের সবচেয়ে আগে থাকি !
বুক পেতে পুলিশের লাঠিপেটা খাই ,
ভেঙ্গে যাই ,বা গুলি খেয়ে রক্ত জরায়ে শেষ হই ,
এরপর আবার বেড়াল হয়ে ঘুটিশুটি মেরে মায়ের আলমারির সবচেয়ে লুকানো কোনটাতে শাড়ীর ভাজে ঘুমিয়ে পড়ি!
কি অদ্ভুত এক যন্ত্রনা ।

এই রোদ ভালো লাগে তো ,এই বৃষ্টি ,
এই মেঠোপথ ভালো লাগে তো ,এই অসহ্য লাগে সব।
আমার এলোমেলো লাগে সব । সব ।সব ।
বৃষ্টির সময় কখনও কি পানিতে ডুব দিয়ে কান পেতে পানির উপরিভাগে পরতে থাকা বৃষ্টির শব্দ শুনেছিলে?
কেমন যেন !মনে হয় খুব দূরের অন্ধকার এক ভারী আবেগের গভীর ঘুমে চেপে আছে
দুচোখ আর আত্মা জুড়ে ।
অসহনীয় ব্যাথা থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ যেমন করে ঘুমায় কোন চেতনা নাশক ঔষধ ছাড়াই ।
তেমন ভারী আর গভীর ও।
শোন নি তো? শুনিও না ।

এ এক অদ্ভুত অন্যরকম !
আমি এক জ্বর লাগা দুপুরে শুনেছিলাম !
এরও পর ,বা সেই জ্বরে ক্লান্ত দুপুর থেকে –
বেশ কতদিন ,কত মাস ,কত বছর এই শব্দ,এই গভীর ঘুম , আমার মাথার ভেতরে একটানা বসত করেছিলো ,আমাকে স্তব্দ করা পর্যন্ত।
ডাক্তার বললেন ,ভয় না পেতে ।

আমি রিনরিন শব্দ করে হাসি
দীর্ঘক্ষণ হাসি
রোজ আত্মার সামনে দাড়ায়ে চুল টেনে টেন দেখি ,
রোজ দেখি
তারপর মনে পড়ে
আমার দু’চামচ দুঃখ বেঁচার কথা !
দু’চামচ দুঃখ বেচি ?


তাহমিনা আমিন