দুনিয়াতে রোগ-ব্যাধি মুমিনদের গুনাহ মাফের বড় মাধ্যম

আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১
0

মুফতি মুহাম্মদ আব্দুচ্ছালাম চাটগামী

দুনিয়াতে সকল রোগ-ব্যাধি মুমিনদের জন্য গুনাহ মাফের বড় মাধ্যম। এ প্রসঙ্গে আবু দাউদ শরীফে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম রাখা হয়েছে এভাবে- باب الامراض مكفرات للذنوب
রোগ-ব্যাধি গুনাহের কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ। অর্থাৎ সমস্ত রোগ-ব্যাধি রোগীদের গুনাহ মাফের মাধ্যম।

ইমাম আবু দাউদ রহ. এ শিরোনামের অধীনে দলিল হিসেবে এ হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَصَابَهُ السَّقَمُ ثُمَّ أَعْفَاهُ اللَّهُ مِنْهُ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى مِنْ ذُنُوبِهِ وَمَوْعِظَةً لَهُ فِيمَا يَسْتَقْبِلُ وَإِنَّ الْمُنَافِقَ إِذَا مَرِضَ ثُمَّ أُعْفِىَ كَانَ كَالْبَعِيرِ عَقَلَهُ أَهْلُهُ ثُمَّ أَرْسَلُوهُ فَلَمْ يَدْرِ لِمَ عَقَلُوهُ وَلَمْ يَدْرِ لِمَ أَرْسَلُوهُ.

মুমিন বান্দার উপর যখন কোনো রোগ-ব্যাধি আসে, এরপর যদি আল্লাহ তাকে সুস্থ করে তুলেন, তাহলে এ রোগ তার পেছনের সমস্ত গুনাহের জন্য ক্ষমার কারণ হবে এবং ভবিষ্যতে তার জন্য উপদেশ হবে। কিন্তু কাফের ও মুনাফিকদের যখন কোনো রোগ-ব্যাধি হয়, এরপর সুস্থ হয়, তখন তারা সেই চতুষ্পদ জন্তুর মতো হয়ে যায়, যাকে তার মালিক একবার বেঁধে রাখে, আবার ছেড়ে দেয়। কিন্তু সে জানে না, কেন তাকে বেঁধে রেখেছিল, আর কেনই-বা ছেড়ে দিল।

হাদীসের ব্যাখ্যা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিন বান্দার উপর যখন কোনো রোগ-ব্যাধি আসে, আর বান্দা সেটাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনে করে সবর করে, অতঃপর আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেন, তাহলে এ রোগ তার পেছনের সমস্ত গুনাহের জন্য ক্ষমার কারণ হবে এবং ভবিষ্যতে তার জন্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ হবে।

কিন্তু কাফের ও মুনাফিকদের যখন কোনো রোগ-ব্যাধি হয়, তখন তারা সবরের পরিবর্তে হা-হুতাশ করে, চিৎকার-চেঁচামেচি করে এবং দিশেহারা হয়ে পড়ে। রোগ যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে তা বিশ্বাস করে না। এরপর চিকিৎসা ইত্যাদির মাধ্যমে যখন সুস্থ হয়ে ওঠে, তখন মনে করে, রোগ হয়েছিল, তাই ঔষধ খেয়েছি। ফলে রোগ সেরে গেছে। ব্যস, এতটুকুই। সুস্থতা যে আল্লাহ দান করেছেন, তা বিশ্বাস করে না। ফলে আগে যে গুনাহ করত, তা-ই করতে থাকে।’

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এই কাফেররা মূলত একটা জানোয়ারের মতো। জানোয়ারকে যখন মালিক রশি থেকে ছেড়ে দেয়, তখন সে অন্যের ফসলের মাঠে চলে যায়। মালিক যখন দেখে, এই জানোয়ার তো এক জায়গায় থাকে না, নির্দিষ্ট খাবার ও চারণভূমিতে সন্তুষ্ট থাকে না, তখন সে জানোয়ারটাকে বেঁধে ফেলে। এক-দুদিন পর যখন আবার ছেড়ে দেয় এবং নির্দিষ্ট খাবার সামনে দেয়, তখন জানোয়ার আবারও এদিক-সেদিক ছুটোছুটি শুরু করে, অন্যের ফসলের মাঠ নষ্ট করতে শুরু করে। জানোয়ার বোঝে না যে, প্রথমবার অন্যের মাঠে যাওয়ার কারণেই মালিক তাকে বেঁধে রেখেছিল। আবারও যদি অন্যের মাঠে যাই, তাহলে মালিক আমাকে আবারও বেঁধে রাখবে। এটা না বোঝার কারণে যখন মালিক রশি ছেড়ে দেয়, তখনই জানোয়ার অন্যের মাঠে চলে যায়।

কাফের ও মুনাফিকের অবস্থা ঠিক এমনই। তারাও বোঝে না যে, কেন তারা রোগে আক্রান্ত হল, কেনই-বা আল্লাহ আবার সুস্থ করলেন। এসব তারা জানে না, চিন্তাও করে না। ফলে ওই জানোয়ারের মতো এ কাফের ও মুনাফিকও গুনাহ থেকে, কুফুর ও শিরক থেকে তাওবা করে না। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- اُولٰٓئِكَ کَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ ؕ اُولٰٓئِكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ এরা হল চতুষ্পদ জন্তুর মতো, বরং এরা তার চেয়েও নিকৃষ্ট, এসব লোকই গাফেল ও উদাসীন।

হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কাফেররা রোগাক্রান্ত হয়ে বোঝে না যে, এই রোগ আল্লাহ তাআলা তাদের অবাধ্যতার কারণে দিয়েছিলেন। যার ফলে সুস্থ হয়ে যখন আবার নতুন জীবন শুরু করে, তখন ওই জানোয়ারের মতো আগের অভ্যাস অনুযায়ী অন্যদের মাঠে চলে যায়। অন্যের উপর জুলুম ও বাড়াবাড়ি করে। মানুষের হক নষ্ট করে। ফলে কিছুদিন পর আল্লাহ আবার রোগে আক্রান্ত করেন। কিন্তু তখনও সে আগের মতো হা-হুতাশ করতে থাকে। আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে না। আল্লাহর কালামের বিধানাবলি মানে না। ফলে আল্লাহ তাদেরকে কঠোরভাবে আটক করেন এবং কঠিন শাস্তি দেন।

বিপদের ফযীলত
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদি. থেকে বর্ণিত আরেক হাদীসে আছে, তিনি বলেন, আমি নবীজির মুখে শুনেছি, মুমিন বান্দার যখন কোনো বিপদ আসে, বড় হোক বা ছোট, তার বিনিময়ে গুনাহ মাফ করা হয়, মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। এমনকি যদি তার দেহে একটি কাঁটাও ফোটে, তার বদলায়ও গুনাহ মাফ করা হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। অর্থাৎ বিপদ মুমিনের জন্য কোনো বিপদ নয়; বরং আল্লাহর রহমতে পরিণত হয়ে যায়।

রোগ ও দুর্যোগ মোকাবিলা করতে চাওয়া নির্বুদ্ধিতা

কাফের ও মুনাফিকরা অনেক সময় অজ্ঞতার দরুন রোগ-ব্যাধি ও বিপদের মোকাবিলা করতে চায়। মূলত এটা তাদের চরম নির্বুদ্ধিতা ও দুর্ভাগ্যেরই পরিচায়ক। কারণ, আল্লাহ যখন বান্দাকে কোনো রোগ বা বিপদ দেন, মূলত তার উদ্দেশ্য থাকে বান্দা যেন আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তাওবা করে। কিন্তু যদি তাওবা না করে, ফিরে না আসে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চায়, বরং আরও অবাধ্য হয়ে নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতাবশত আল্লাহর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হয়, তাহলে এটা তাদের ধ্বংসই তরান্বিত করবে।