দেশজুড়ে পুলিশ-র‌্যাব-কে দিয়ে তান্ডবলীলা চালাচ্ছে : নাটক করে শেষ রক্ষা হবে না—- রিজভী

আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২২
0
এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার মর্জিমাফিক আর কিছুই হবে না। বিরোধী আন্দোলনের ঝড়ো হাওয়া তিনি আর স্থির করতে পারবেন না। নতুন নতুন প্রহসন ও নাটক করে শেষ রক্ষা হবে না।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সমাবেশ নিয়ে পুলিশের আইজিপির বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘নয়াপল্টনেই বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সোহওরাওয়ার্দী উদ্যান চার দিক থেকে ঘেরা একটা খাঁচার মতো। সেখানে নেতাকর্মীরা নিরাপদ মনে করছেন না। নয়াপল্টনকেই তারা নিরাপদ মনে করছেন। সরকার বা পুলিশের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক না কেন বিএনপির সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে।’

রিজভী বলেন, ‘আজ রাজশাহী মহানগরে বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রচন্ড রকম বাড়াবাড়ি করেছে। তিন দিন আগে থেকেই জনগন সমাবেশের মূল মাঠে আসার জন্য চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদেরকে ঢুকতে দেয়নি এবং প্রচন্ড রকমের হয়রানী করেছে। প্রশাসন ও সরকারী দলের নির্দেশেই গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার পর গতকাল থেকে বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় তিন চাকার পরিবহনও। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, দাবী-টাবি কিছুই না, বিএনপি’র সমাবেশ বন্ধ করতেই গরীবের পেটে লাথি মারা। এর মধ্যেও কিছু কিছু সিএনজি চালক ও অটো চালক তাদের গাড়ী বের করলে তাদেরকে প্রচন্ড রকম হয়রানী ও মারধর করেছে পুলিশ।’

রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘সকল বাধা, হামলা-মামলা ভেদ করে রাজশাহীর সমাবেশে যোগ দিয়েছে লক্ষ-লক্ষ জনতা। পদ্মা বিধৌত রাজশাহী ছিল জনসমাগমে পূর্ণ। তারা গতকাল পর্যন্ত সমাবেশ মাঠে ঢুকতে না পারলেও পাশের ঈদগাহ মাঠ, পাশের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে চাল-ডাল-মুড়ি-চিড়া-গুড় সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছে সমাবেশ ময়দানে। খিচুড়ি রান্না করে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে দেখা গেছে স্বত:স্ফুর্তভাবে। এ এক বিস্ময়কর অভূতপূর্ব দৃশ্য-যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। গতকাল গোটা রাজশাহী ছিল মিছিলের নগরী। আজকে রাজশাহীর ভোর ছিল জনমানুষের কোলাহলে এক অনন্য ভোর। রাজশাহীর মানুষ কতটা অতিথিপরায়ণ তা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আশপাশের জেলাগুলো থেকে ট্রেনে-মোটরসাইকেল ও ট্রলারে করে দলে দলে মিছিলসহ যোগ দেয় সমাবেশে। সমাবেশে আসার পথে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নাটোরে জনতার ওপর সহিংস আক্রমণ করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীসহ জনগণের ওপর। বিভিন্ন স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পুলিশ সড়ক আটকিয়ে দিলেও কিংবা মিছিলে বাধা দিয়ে ও হামলা করেও জনতার স্রোত রোধ করা যায়নি। বিএনপি’র চলমান এই ধারাবাহিক সমাবেশগুলো মানুষের উপচে পড়া ভিড় প্রমাণ করে-জনগণ সরকারকে আর এক মূহুর্তের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘অর্থনৈতিক ধাক্কা ও দুঃশাসনের কষাঘাতে ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বেসামাল হয়ে গেছে। সরকারবিরোধী হাওয়া প্রবল আকার নিচ্ছে। তাই ছলে-বলে কৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশজুড়ে পুলিশ-র‌্যাব-কে দিয়ে তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ‘কো-অপারেটিভ ফ্যাসিজম’ রুপে আত্মপ্রকাশ করেছে। এক ধরণের দুর্ভাবনা থেকেই স্বাধীন কন্ঠস্বরকে নিবৃত্ত করতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবী মামলা ও গণ গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। পথে-ঘাটে চলছে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের মিলিত অপমান, অত্যাচার এবং সহিংস পৈশাচিকতা। মিথ্যা ককটেল বিস্ফোরণ মামলা, কবর থেকে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে হাস্যকর মামলা দায়ের, অক্ষত গাড়ী ভাঙচুরের মামলা দায়ের, ছাত্রলীগ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা মিছিল করে নিজেরা ককটেল ফাটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের, কোনো ঘটনা না ঘটলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের বাদী করে মিথ্যা ককটেল বিস্ফোরণের মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটছে সমানতালে।’

এ সময় গত তিন দিনে ৭৭৬জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।