দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে মিথ্যাচার করছে সরকার– মীর্জা ফখরুল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২
0

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার জনগনকে মিথ্যা পরিসংখ্যান দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার বিকালে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে যারা দেশ শাসক করছে তারা(আওয়ামী লীগ সরকার) পুরো ফ্যাক, প্রতারণা। আপনার রিজার্ভের কথা বলছে। তারা রিজার্ভের যে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের কথা বলছে। আইএমএফ বলছে আসলে এটা ফেফটিন পারসেন্ট বাড়িয়ে বলা হয়েছে। এটা একটা ভুয়া সংখ্যা দেয়া হয়েছে। অর্থাত তার চাইতে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার কম। এটা গেলো পরীক্ষিত একটা ব্যাপার।”

‘‘ তারা মাথাপিছু আয় বাড়ার কথা বলছে। তাই যদি হবে আমার শফিউদ্দিন ভাই তিনি আত্মহত্যা করলেন কেনো? আজকে তিনি সেচের ব্যবস্থা পাননি। এভাবে আপনি যদি লক্ষ্য করে দেখবেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার যারা আজকে জোর করে ক্ষমতায় এসছে তারা রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে বন্দুক পিস্তল নিয়ে তারা জোর করে মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছে, মিথ্যাচার করছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারা(সরকার) কথায় কথায় উতপাদনের কথা বলছে, উন্নয়নের কথা বলছে। এমন মনে হয় যেন, আপনার উন্নয়নের দাপটে বাংলাদেশে যেন সব কিছু তারা সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ গতকালই আমরা দেখেছি যে, কৃষিখাতে শষ্য উতপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এখনো ৬৭ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। যেটা প্রমাণ করে তারা যে সমস্ত দাবি করে যে, তারা খাদ্য শষ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা লাভ করেছে এটা সম্পূর্ণ একটা ভাওতাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়।”

‘‘ আওয়ামী লীগের চরিত্রটাই এটা। মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, জনগনকে বিভ্রান্ত করে তারা একটা চমক সৃষ্টি করে এগিয়ে যেতে চায়। পুরো জিনিসটা প্রতারণা।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কৃষক দলের সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

এর আগে তিনজন মাঠ পর্যায়ের কৃষক জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য ফরম পুরণ করে বিএনপি মহাসচিবের হাত থেকে কৃষক দলের সদস্যপদ গ্রহন করেন।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কৃষক ভাইদেরকে সরকার চরম বিপাকের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আপনাদের মনে আছে যে, তারা(সরকার) বলেছিলো যে আমরা ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াব।তারা কি খাইয়েছে? এখন কত? ৬০/৭০ টাকা। কৃষকভাইদের বলেছিল যে, আমরা বিনা পয়সায় সার দেবো। বিনা পয়সায় কি সার দিয়েছে? এখন তিন/চার গুন সারের দাম।”

‘‘ ঘরে ঘরে চাকুরি দেবে তারা বলেছিলো। সেই চাকুরি তো সাধারণ মানুষ পায়ই না। যারা চাকুরি পায় তাদের ২০/২৫ লক্ষ পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে চাকুরি পায়।”

কৃষক দলের নতুন কমিটির নেতৃত্বে কৃষকদের সংগঠিত করার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির সবচেয়ে বড় অংশ হচ্ছে কৃষক। আমাদেরকে এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সাহস সঞ্চয় করতে হবে। এটা জরুরী।”

‘‘ বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য আছে, এদেশের কৃষকরা বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব যিনি প্রতিদিন ১৮/২০ ঘন্টা কাজ করেন আমাদের দলকে সুসংগঠিত করবার চেষ্টা করছেন। তার প্রমাণ কৃষকদলকে কত দ্রুত নতুন নেতৃত্ব তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। একইভাবে প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে সংগঠিত করছেন, বিএনপিকে সংগঠিত করছেন।”

দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতিতে জনজীবনের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম ১০/১৫ গুন বেড়ে গেছে। আজকে গ্যাস-পানি-বিদ্যুত তার দাম বেড়ে গেছে। মানুষ এখন আজ বিক্ষুব্ধ, তার দূর্বিসহ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে চায়।”

‘‘আসুন সংগঠনকে শক্তিশালী করুন। শিগগিরই কর্মসূচি দেয়া হবে, সেই কর্মসূচিতে যেন আমরা যেন কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে পারি তার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই অন্ধকার কেটে যাবে, আলো সামনে এসে দাঁড়াবে এবং আমরা অবশ্যই জয়ী হবো।”

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির ‍তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত এই অনুষ্ঠানে কৃষক দলের হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, গৌতম চক্রবর্তী, মোশাররফ হোসেন, ওমর ফারুক শাফিন, ওবায়দুর রহমান টিপু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।