দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১
0

অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠনসহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকালে দলের আয়োজনে শিক্ষা বিষয়ক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সরকারের প্রতি বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, “ এই করোনার সময়ে এই যে ক্ষতিটা হয়েছে তা মারাত্মকভাবে। আজকে শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেটা আমাদের অর্থনীতিকে, আমাদের রাজনীতিকে, আমাদের ভবিষ্যতকে একেবারে প্রভাবিত করছে।”
“ এজন্য একটা জাতীয় কমিশন গঠন করা দরকার। শিক্ষাবিদ, অভিভাবক, শিক্ষার্থী তাদেরকে নিয়ে একটা জাতীয় কমিশন অবিলম্বে তৈরি করা প্রয়োজন এবং অবিলম্বে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিকল্পনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রয়োজন। শিফট করে, বিভিন্নরকম ক্যারিকুলাম প্রণয়ন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “ এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয় বলেই আজকে জনগনের প্রতি এতো অনীহা। সত্যিকথা বলতে কী? কথাটা হালকা শুনাবে- এটা একটা ফ্রড সরকার। জনগনকে প্রতারনা করা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই।প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা প্রতারনা করছে। জনগনের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য, মূল জায়গা থেকে সরিয়ে নেবার জন্য …।”
“ আপনারা নির্বাচন থেকে দেখুন, কোভিড-১৯ সমস্যা থেকে শুরু করে তাদের একটাই প্রধান কাজ হচ্ছে জনগনকে মিথ্যা কথা বলা, প্রতারিত করা। এটাতে তারা সিদ্ধহস্ত হয়ে গেছে। কারণটা হচ্ছে একটা-এদের কোনো কমিটমেন্ট নেই, এদের জনগনের প্রতি কোনো জবাবদিহিতা নেই, জনগনের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না। তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।”
করোনা প্রকোপের পর থেকে অসংখ্য মানুষ যেভাবে বেকার হয়েছে ঠিক একইভাবে অসংখ্য শিক্ষকও বেকার হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে অসংখ্য শিক্ষক বেকার হয়ে গেছে, কর্মহীন হয়ে গেছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে তাদের নেগলেট করেছে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষক যারা কিন্ডার গার্ডেট চালাতেন, গ্রামেও কিন্তু কিন্ডান গার্ডেন চলে সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে সরকার পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ আজেকে আমরা যদি সত্যিকার অর্থে সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাই, আমরা সত্যিকার অর্থে যদি শিক্ষিত জাতি নির্মাণ করতে চাই, সত্যিকার অর্থে জনগনের ভবিষ্যত আলোকিত করতে চাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই এই ভয়াবহ দানবকে সরাতে হবে জনগনকে সম্পৃক্ত করে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। যেকথা আমাদের প্রধান অতিথি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব আহবান জানিয়েছেন এই কাজে এগিয়ে আসতে আমাদের যুবকদেরকে, আমাদের তরুনদেরকে যারা পরিবর্তন আনবে, যারা পরিবর্তনের সূচনা করবে।”
“এটা বিএনপির জন্য নয়, আমাদের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে। মানুষের মুক্তির জন্য, তাদের বেঁচে থাকার জন্য, তাদের ভবিষ্যতদের সুন্দর করবার জন্যে এবং আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্র্রতিষ্ঠিত করবার জন্যে, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার জন্যে।”
বিএনপির উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯ বিপরযস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা-সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় মহাসংকটে জাতির ভবিষ্যত’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “ আমি বলতে চাই যে, সরকারের আন্তরিকতা অভাব, সরকারের এখানে দুরভিসন্ধি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। এটা ক্ষতি। আগামী ২০ বছর এই ক্ষতি আমাদেরকে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে শ্রেনী শিক্ষা চালুর দাবি তিনি বলেন,“ শ্রেনীর শিক্ষার কোনো বিকল্প নাই। আইপি বা অনলাইনের মাধ্যমে যে শিক্ষার পাঠদান করার চেষ্টা করা হচ্ছে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, এটাতে ফলাফল ভালো নয়। সেই অতিদ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত। যেখানে সব কিছু খোলা, কলকারখানা খোলা, দোকান-পাট খোলা সেখানে আর কোনো যুক্তি নাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা।”
স্লেভ ও ডাবল শিফট করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শ্রেনী শিক্ষা চালু, উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে অনলাইন ও সরাসরি শ্রেনীর শিক্ষার সমন্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহন, শিক্ষার্থীদের অতি দ্রুত টিকা প্রদানের ব্যবস্থা, ড্রপ আউট দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রণোদণা ঘোষণা, যোগ্য, উপযুক্ত ও মেধাবী প্রজন্ম তৈরি করার জন্য যুগোপযুগী সিলেবাস প্রণয়ন এবং শিক্ষাখাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করাসহ ৬ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক খন্দকার মোশাররফ।
অভিভাবক ফোরামের পক্ষে অধ্যাপক কামরুল হাসান এবং এএনএম মাহিদ উদ্দিন ভুঁইয়া দীর্ঘ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভাবনা ও সমস্যাগুলো তুলে ধরে বলেন, “ এভাবে যদি একটা শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয় এবং এভাবে যদি আমাদের অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে তাহলে ভবিষ্যতে আমরা যাদের পাবো তারা কিভাবে দেশ পরিচালনা করবেন সেটা ভাবতেই ঘা শিউরিয়ে উঠে।”
“ ঘরবন্দি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপরযস্ত হচ্ছে, মোবাইল, ট্যাব, ভিডিও গেইমসে আসক্ত হচ্ছে, শিশু শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি অমনোযোগী ও তাদের পড়াশুনার প্রতি অনীহা চলে এসেছে, বাচ্চার স্কুলের পরিবেশটা খুব মিস করে। এতে করে তারা দিনকে দিন আপসেট হয়ে যাচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ছোট্ট বাচ্চারা সম্পূর্ণ এবং সঠিকভাবে শিক্ষা গ্রহন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।”
ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক দূর্বলতার কারণে ‘অনলাইন শিক্ষা কার্য্ক্রম’ এর কোনো সুফল শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এই দুই অভিভাবক।
তারা বলেন, “ দেখুন শিক্ষার্থীদের ক্লাসের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে-এটা নজিরবিহীন ঘটনা যে, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে চায় সেটার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এক পর্যায়ে আমাদের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে, শিক্ষকরা চেষ্টাও করছেন। কিন্তু এটা এতো বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা যা টিকে থাকতে পারে না।তার কারণ হচ্ছে যে, গাছের ডালে, ভবনের ছাদে কিংবা মাঠে মাঝ খানে গিয়ে যদি আমাদের ইন্টারনেট কানেকশন পেতে হয় এবং সেটা যদি গ্রাম পর্যায় ডাটা ব্যবহার করে এবং ডিভাইসের অভাবে দরিদ্র শিক্ষার্থী ক্রয় করতে না পারে তাহলে কত শতাংশ শিক্ষার্থীকে আপনি যুক্ত করবেন। ফলে দৃশ্যত এই প্রক্রিয়া আসলে অভিভাবক হিসেবে প্রথমে সাদুবাদ জানালেও আমরা ভুলে গেছি যে, এটা আমাদের অস্থির চিত্রকে শান্ত করার জন্য একটি অদূরর্শী পরিকল্পনা ছিলো।”
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় চার ঘন্টার অধিক সময়ের এই ভার্চুয়াল আলোচনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ‍উপ-উপাচারয অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম ও শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম ভুঁইয়াও তাদের মতামত রাখেন।