দ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে সরকারের পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হবে–মির্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ২৬, ২০২২
0

‘দ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে সরকারের পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হবে’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার নয়া পল্টনে স্বাধীনতার র‌্যালী পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা এই র‌্যালীর মাধ্যমে আমরা যে কথা বা বানী পৌঁছিয়ে দিতে চাই হাসিনার কানে, এই অবৈধ সরকারের কানে যে, তোমার দিন শেষ। এই র‌্যালী থেকে আমরা হুশিয়ার করে দিতে চাই, এখনো সময় আছে আমরা হাসিনা এবং তার সরকারকে বলতে চাই-পদত্যাগ করুন, দ্রুত নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগনের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।”

‘‘অন্যথায় আপনারা পালাবারও পথ খুঁজে পাবেন না। সকল ডিক্টেটার, সকল স্বৈরাচারী, সকল ফ্যাসিবাদীর যে পরিণতি হয়েছে আপনাদেরও সেই একই পরিণতি হবে। আসুন এই লক্ষ্যে আমরা সকলকে ঐক্যবদ্ধ হই।’’

স্বাধীনতা দিবসের দিন জিয়াউর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ আজকে সারাদেশের মানুষ এই ৫০ বছর পরে এই আক্ষেপ করছে, যে আমরা ৫০ বছর হলো স্বাধীন হলাম, একটা স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনলাম কী পেয়েছি আমরা? আজকে আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা নেই, আজকে আমাদের নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবার স্বাধীনতা নেই। মানুষের গণতান্ত্রিক কোনো অধিকার নেই।”

‘‘ আজকে অর্থনীতি ধবংসের পথে চলে গেছে, চাল-ডাল-তেল-লবন সব কিছুর দাম এমন ভাবে বেড়ে গেছে যে, সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারে না। আজকে জ্বালানি তেলের দাম হুহু করে বাড়ছে। আবার নাকী গ্যাসের দাম নতুন করে বাড়াবে?”

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা, ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গুম-খুনসহ সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আজকে সকল অন্যায়কে পরাজিত করতে হলে, গণতন্ত্র ফিরে পেতে হলে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত জাতি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ভয়াবহ দানবীয় যে ফ্যাসিস্ট সরকার আছে তাকে পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠান করতে হবে।

দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। ২৫ মিনিট সমাবেশ করে র‌্যালী শুরু হয়। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এই র‌্যালী শুরু হয়ে বিজয় নগর ও তোপখানা রোড হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

এই র‌্যালীতে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে অংশ নেয়। তাদের হাতে ছিলো জাতীয় পতাকার পাশাপাশি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।

ব্যান্ড সঙ্গীত দলের সুরের মূর্ছনা, পুরনো ঢাকার ঘোড়া গাড়ি, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে নানা দৃশ্য প্রদর্শন, লাল- সবুজ-হলুদ ক্যাপ পরা নেতা-কর্মীদের এই স্বাধীনতার র‌্যালী দেখতে ফুটপাতে দুই পাশে মানুষজনও ছিলো ব্যাপক। তারা করতালি দিয়ে র‌্যালীকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়।

এই র‌্যালী শুরুর দুই ঘন্টা আগে থেকেই ফকিরেরপুল থেকে কাকারাইলের নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরা মোড় পর্যন্ত তিল পরিমান ঠাই ছিলো না, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে র‌্যালী জনসমাবেশে রুপ নেয়। র‌্যালীর অগ্রভাগ যখন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তখন শেষ ভাগ কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় অতিক্রম করেছিলো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আজকে সময়ের দাবি, জনগনের দাবি এই সরকারকে হটাতে হবে। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, দাবি করতে চাই, অনতিবিলম্বে এই সরকারের পদত্যাগ চাই, নির্দলী-নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে একটা নির্বাচন চাই।”

‘‘ যে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। দেশের জনগন নিজের হাতে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি তারা নির্বাচিত করবে।জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ভবিষ্যতে এদেশের যত সংকট সব সমস্যার সমাধান করবো। তাই সেজন্য আপনাদেরকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করার আহবান জানাচ্ছি।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ আজকে সত্য কথা বলতে পারে না গণমাধ্যম। ডিজিটাল আইন, সেই আইন-এই আইন করে আজকে বাংলাদেশের গণমানুষের মুখকে চেপে ধরা হয়েছে। আসল কোনো সংবাদ দেশের মানুষ পায় না। আজকে দেশে দ্রব্যমূল্যের যে ঊধর্বগতি কি অবস্থা দেশের মানুষের সেটা আজকে পত্র-পত্রিকায়-মিডিয়াতে রিফলেক্ট হচ্ছে না।”

‘‘ সেদিন একমন্ত্রী বলেন, কী সুন্দর আবদার। কিছুদিনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়বে, গ্যাসের দাম বাড়বে আপনারা প্রস্তুত থাকেন। চিন্তা করতে পারেন কত বড় সাহস এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের, এই বড় বেহায়া এই আওয়ামী লীগ সরকার। যেহেতু ওরা মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি, সেহেতু তারা মানুষের কথা চিন্তা করে না।”

মহানগর উত্তর ও দক্ষিন বিএনপির আয়োজিত এই র‌্যালীতে উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান ও দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালামও বক্তব্য রাখেন।

পরে র‌্যালীতে পায়ে হেটে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিবসহ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামারুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম আলীম, শামীমুর রহমান শামীম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, অঙ্গসংগঠনের মহানগরের আমিনুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম মাহতাব,শাহ নেসারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতারা অংশ নেন।

বিএনপির র‌্যালী উপলক্ষে দুপুর ১টা থেকে নয়া পল্টনের সড়কে যানচালাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে মতিঝিল, কাকরাইল, শাহজাহানপুর, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

র‌্যালী উপলক্ষে এই এলাকা ব্যাপক পুলিশসহ সাদা পোষাকের সদস্যরা মোতায়েন ছিলো।