ধামরাই থেকে অপহৃত ৭ দিনের নবজাতককে যশোর থেকে উদ্ধার : ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ারসহ গ্রেফতার ২

আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩
0

আলোচিত ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে ৭ দিনের নবজাতক শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবীর ঘটনায় জড়িত ২ অপহরনকারীকে যশোরের অভয়নগর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব; নবজাতক শিশু উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে রাত ৮টার ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকায় মিলি আক্তার নামের এক নারীর বাসায় পরিচিত রুবেল ও তার স্ত্রী দেখা করতে আসলে তাদের নিকট তার ৭ দিনের নবজাতক ছেলেকে রেখে ঔষধ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ভিকটিমের মা বাসা থেকে বের হয়। পরবর্তীতে ২০ মিনিট পর ফিরে এসে মিলি আক্তার তার বাসায় শিশুসহ রুবেলকে না পেয়ে সারা রাত পাশর্^বর্তী বিভিন্ন স্থানে তাদের সন্ধান করে। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ ঢুলিভিটা বাজার কমিটির কাছ থেকে রুবেল এর বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায় এবং একই সাথে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পায়।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ রুবেল মোবাইল ফোন চালু করে নবজাতক শিশুকে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ০১ মার্চ ২০২৩ তারিখে রুবেল অন্য একটি নাম্বার দিয়ে ভুক্তভোগী মিলি আক্তারকে ফোন করে জানায় নবজাতক ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ০১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। ভুক্তভোগী মিলি আক্তার তার নবজাতক শিশুকে ফিরে পেতে র‌্যাব-৪ এর সহায়তা চেয়ে উক্ত বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। আলোচিত এই অপহরণের ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব অপহরণকৃত নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধারসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন আমতলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী দম্পতি মোঃ রুবেল শেখ (৩৫), পিতাঃ মৃত আব্দুল মজিদ শেখ এবং তানিয়া আফরোজ (২৩), স্বামী-রুবেল দিঘলীয়া, খুলনাদের’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা হয় অপহৃত ৭ দিনের নবজাতক শিশুটিকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত অপহরণের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, ভুক্তভোগী মিলি আক্তার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢুলিভিটা বাজারের পাশে থাকার কারণে একই এলাকার ভাড়াটিয়া রুবেল ও তার স্ত্রীর সাথে তার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেফতারকৃত রুবেল মিলি আক্তারকে ফুফু বলে ডাকত। তিনি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। পরবর্তীতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ সন্ধায় রুবেল ও তার স্ত্রী ভুক্তভোগীর সাথে দেখা করতে তার বাসায় আসে। ভুক্তভোগী অসুস্থ থাকায় তার ০৭ দিনের নবজাতক শিশুকে রুবেল ও তার স্ত্রীর নিকট রেখে ঔষধ ক্রয়ের জন্য টাকা আনতে সে যে বাসায় কাজ করে ঐ বাসায় যায় এবং টাকা নিয়ে ঔষধ ক্রয় করে বাসায় ফিরে আসে। পরবর্তীতে ২০ মিনিট পর বাসায় ফিরে ভুক্তভোগী মিলি আক্তার রুবেল ও তার স্ত্রীকে তার বাসায় দেখতে পায় না এবং নবজাতক ছেলেকেও খুঁজে না পেয়ে সে পাশ^বর্তী বিভিন্ন স্থানে রুবেল এর সন্ধান করে। পরবর্তীতে ঢুলিভিটা বাজার কমিটির সহায়তায় রুবেল এর বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায় এবং রুবেল এর মোবাইল ফোন বন্ধ পায়। রুবেল মোবাইল ফোন চালু করলে প্রথমে নবজাতক শিশুকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে ফোন করে ভুক্তভোগীর নিকট তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে ০১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা ২-৩ মাস যাবত ঢুলিভিটা বাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছে। গ্রেফতারকৃত রুবেল ধামরাই এর ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের নিকট থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করত না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় সে ঢুলিভিটা এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সাথে সু-সম্পর্ক থাকায় কৌশলে ভুক্তভোগী মিলি আক্তারের নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ তারা ভুক্তভোগীর বাসায় যায়। ভুক্তভোগী ঔষধ ক্রয় করতে বাহিরে গেলে তারা সুযোগ বুঝে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হয়ে যায় এবং ধামরাই এলাকা থেকে প্রথমে বাস যোগে খুলনায় গমন করে। সেখানে আত্মগোপনের জন্য তারা সুবিধামত ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে খুলনার অদূরে রূপসা নদীর অপর পাশে যশোরের আমতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠে। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্নভাবে শিশুটির মা’কে মুক্তিপনের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরই মধ্যে নবজাতক শিশুটি তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবে।

গ্রেফতারকৃত রুবেল খুলনার একটি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে। জীবিকার তাগিদে ০৭/০৮ বছর পূর্বে রাজধানী ঢাকায় আসে। সে পেশায় একজন গামেন্টর্সকর্মী পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করত। রুবেল ইতিপূর্বে একাধিক বিবাহ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও, স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, সে ইতিপূর্বে ধর্ষণ চেষ্টা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল।

গ্রেফতারকৃত তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। গত ০৩ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত রুবেল তানিয়ার পরিবারের অমতে তানিয়াকে বিবাহ করে ধামরাই ঢুলিভিটা এলাকায় বসবাস করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

র‌্যাব জানায় , নারী ও শিশু পাচার/নির্যাতন/অপহরণ এর কোন ঘটনা ঘটেছে; র‌্যাব তৎক্ষণাৎ ভিকটিম অথবা নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছে। শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে বিল পরিশোধ সংক্রান্ত দ্বন্দে চিকিৎসাধীন জমজ ২ শিশুর একজন মারা গেলে র‌্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে এবং অপর জমজ শিশুর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে এবং সাম্প্রতিক সময়ে খুলনায় ৬ মাসের শিশুকে অপহরণের ঘটনায় ২ জন অপহরণকারীকে গ্রেফতারসহ বিভিন্ন সময়ে শিশু অপহরণ ও নির্যাতনের মত মানবতা বিবর্জিত অপরাধে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এযাবত পর্যন্ত অপহরণের সাথে জড়িত ০৪ হাজারের অধিক আসামিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এযাবত পর্যন্ত অপহরণকৃত প্রায় তিন হাজার নারী-পরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে।