নলডাঙ্গা রাজবাড়ির সম্পতি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
0

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ-
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা রাজবাড়ির সম্পতি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। বিকেলে রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে এ মানববন্ধন করা হয়।একসময় যে বাড়ির দিকে তাকাতে মানুষ ভয় পেত, আজ সেই রাজবাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানকার মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। রাজাদের রেখে যাওয়া মূল্যবান বিশাল ভূসম্পত্তি লুটেপুটে খাচ্ছেন দখলদারেরা। দেরি করে হলেও প্রতœতাত্বিক নিদর্শনের অংশ হিসেবে জায়গাটি সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছেন ওই এলাকার লোকজন। রাজবাড়টি সংরক্ষণের দাবিতে তাঁরা বুধবার বিকেলে রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। এর আয়োজক ছিল নলডাঙ্গা রাজবাড়ির সম্পত্তি উদ্ধার ও উন্নয়ন কমিটি। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ইউপি চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু।

বক্তব্য দেন বাবু মন্টু গোপাল, আশরাফুজ্জামান লাল, মাসুদুর রহমান প্রসুথ।ঝিনাইদহের ইতিহাস নামের বই থেকে জানা যায়, দিল্লির জনৈক সেনাপতির অনুগ্রহে নলডাঙ্গায় জমিদারি পত্তন করেন নলডাঙ্গাতে বিষ্ণুদাস হাজরা নামের এক সাধক পুরুষ। ১৬ পুরুষ পর্যন্ত এই জমিদারি স্থায়িত্ব লাভ করে। বাংলার নবাব কর্তৃক উপাধি প্রাপ্ত হয়ে ওই জমিদারের বংশধরেরা ‘নলডাঙ্গার রাজা’ হিসেবে অভিহিত হন। সেই সময়ে মামুনশাহী পরগনার বড় অংশসহ বিশাল এলাকা নলডাঙ্গার রাজার অধীনে ছিল। নলডাঙ্গার সর্বশেষ রাজা প্রমথ ভূষণ দেবরায় ১৯৬১ সালের দিকে সপরিবার দেশ ত্যাগ করেন। আন্দোলনকারীরা জানান, জমিদারদের ফেলে যাওয়া বিপুল সম্পত্তি শত্রুসম্পত্তি (ভিপি) হিসেবে ঘোষণা করেছিল সরকার।

তবে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব সম্পত্তির সঠিক কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।তবে রাজবাড়ির কর্মচারীদের পরিবারের এখনো যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশত্যাগের সময় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলো বাজারের জনৈক বাখের আলী ওরফে বাখের সাহেবের হাতে সব সম্পত্তি ন্যাস্ত করে কলকাতায় পাড়ি জমান শেষ রাজা।এই রাজবাড়ির সম্পত্তি কালীগঞ্জের কয়েকটি প্রভাবশালীরা পরিবার পর্যায়ক্রমে দখল করে নিয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম রফি উদ্দিন আহম্মদের দখলে রয়েছে মূল বাড়ির অংশ। বিশাল বাড়িটির শতাধিক কক্ষ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি ইটভাটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জায়গাটি লিজ নিয়ে আর.কে ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা প্রতিষ্ঠান করে তুলেছেন। বর্তমানে যে স্থানে মাটি পোড়ানো হচ্ছে, মূলত সেখানেই ছিল রাজাদের মূল বাড়ি। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন প্রখাবশালী রাজাদের শত শত বিঘা জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ আছে। দখল হয়ে যাওয়া জমির মধ্যে বিশাল একটি পুকুর রয়েছে। ভরাট করে ফেলা পুকুরটির দখল আছেন মৃত রফি উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই জমি সরকার নিলাম করেছিল।

তারা নিলাম খরিদ সূত্রে মালিক হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা জানান, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর এসব জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ার কথা। অথচ নলডাঙ্গা জমিদারবাড়ির জমি পুষ্পারানী, শোভা বালা, কৃষ্ণপদ, আবদুল মালেক, রাধা রানী, কৃষ্ণপদ, ফণিভূষণ, মকছেদ আলী, রহিমা খাতুন, রফি উদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে। এসব অনুসন্ধান করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে মানববন্ধনে। আন্দোলনকারী নেতা কালীগঞ্জের সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, তাঁরা এগুলো রক্ষার জন্য আন্দোলনে নেমেছেন। এটা সরকারি, তথা এলাকার মানুষের সম্পদ। দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, এটা এলাকার মানুষের প্রত্যাশা। নলডাঙা জমিদারবাড়ি বর্তমানে আছে সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাজিপুর মৌজায়। ইউনিয়নটির সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, জমিদারবাড়ির জমি সব ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে। ফেরতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। দখলদারেরা কাগজপত্র আছে বলে দাবি করেন। তবে তাঁরা এসব দেখাতে পারেন না।