না’গঞ্জে বাবা ও প্রবাসী মেয়ে নিহতের ঘটনায় সড়ক আইনে মামলা : আসামি ট্রাকচালক

আপডেট: ডিসেম্বর ১১, ২০২১
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে ইটবোঝাই ট্রাকের চাপায় ওষুধ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন (৪৫) ও তার প্রবাসী কিশোরী কন্যা মুক্তি আলীফ বেলীর (১৪) নিহতের ঘটনার ২৪ ঘন্টা পর থানায় মামলা হয়েছে। নিহত মুক্তির মা অ্যাড. আয়েশা রহমান সিদ্দিকী বাদী হয়ে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে দুইটায় সড়ক পরিবহন আইনে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান।
এই মামলায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে একমাত্র আসামি করা হয়েছে ট্রাকের চালক হাবিবুর রহমানকে (২৮)। সে পটুয়াখালী সদর উপজেলার হাজীখালী গ্রামের মৃত আব্দুল আহমদের ছেলে। ঘটনার পরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক হাবিবুরকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নিহত কিশোরী মুক্তি আলীফ বেলী (১৪) তার মা অ্যাড. আয়েশা রহমান সিদ্দীকির সাথে থাকতেন আমেরিকার নিউইয়র্কে। সেখানেই একটি বিদ্যালয়ে ‘ও’ লেভেলের নবম শ্রেণিতে পড়তো। মাস দেড়েক পূর্বে মায়ের সাথেই বাংলাদেশে আসেন। ফিরতি ফ্ল্যাইট ছিল চলতি মাসের ২২ তারিখ। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে শহরের জামতলা এলাকায় অবস্থিত খালার বাসা থেকে বাবার সাথে একটি বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় মুক্তি। দুপুর দেড়টার দিকে শহরের চাষাঢ়ায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর সামনে ইটবোঝাই এক ট্রাকচাপায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় মুক্তি আলীফ বেলী ও তার বাবা আলতাফ হোসেনের।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, রিকশায় ছিলেন, আলতাফ ও তার মেয়ে মুক্তি। তাদের রিকশাটি শহরের জামতলা এলাকা থেকে চাষাঢ়ার দিকে যাচ্ছিলো। চাষাঢ়ায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর মোড়ে রিকশাটিকে চাপা দেয় দ্রুতগামী একটি ট্রাক (কুমিল্লা-ট: ৩৪২৫)। ঘটনাস্থলে আরোহী বাবা-মেয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। আহত হন রিকশার চালকও।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুক্তির বাবা আলতাফ হোসেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের সাওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সেখানেই তিনি একটি ওষুধের দোকান চালাতেন। প্রায় ছয় বছর পূর্বে আলতাফ হোসেনের সাথে আয়েশা রহমানের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপরই মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে চলে যান আয়েশা। সেখানেই একটি স্কুলে ভর্তি করান মেয়েকে। মুক্তি তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। দীর্ঘদিন পর বাবা-মেয়ের দেখা হয়েছিল। এটাই তাদের শেষ দেখায় পরিণত হলো।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকেই ট্রাকের চালক হাবিবুর রহমান আটক হলেও মামলা হয়েছে ২৪ ঘন্টা পর। বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালানোর অভিযোগে সড়ক পরিবহন আইনে মামলাটি রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুজ্জামান। তিনি বলেন, নিহত কিশোরীর মা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। জাতীয় পরিচয় সংগ্রহে দেরি করাতে মামলা রুজু করতে দেরি হয়েছে। এই মামলায় একমাত্র আসামি ট্রাকের চালক। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতে নিহত কিশোরী মুক্তি ও তার পিতা আলতাফ হোসেনের ময়নাতদন্ত শেষে সোনারগাঁয়ে নিজ গ্রামে দাফন করা হয় আলতাফ হোসেন ও তার কন্যার মরদেহ। নিহত আলতাফের প্রতিবেশী ও বন্ধু হারুন অর রশীদ জানান, বাবা ও মেয়েকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।