নিবন্ধন বাড়ছে, এখনই ২ কোটি টিকা সংকট

আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১
0

দেশে করোনা প্রতিরোধে চলছে গণটিকাদান ক্যাম্পেইন। প্রতিদিনই টিকার নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ লাখ করে বাড়ছে। টিকার জন্য নিবন্ধনকারীদের এই মুহূর্তে প্রায় ৩ কোটি টিকার প্রয়োজন। অথচ সরকারি হিসাবে টিকা হাতে আছে প্রায় ৮১ লাখ ডোজ। হিসাব করে দেখা যায়, দেশে ২ কোটির বেশি টিকার ঘাটতি রয়েছে। এই মাসের মধ্যে টিকার বড় কোনো চালান দেশে না আসলে সমস্যায় পড়বেন টিকাপ্রত্যাশী নিবন্ধনকারীরা। সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকেও।

এদিকে, টিকার ক্যাম্পেইনে ৬ দিনে ৩২ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু গণটিকা দেয়ার প্রথম দিনই দেশে একদিনে সবমিলিয়ে রেকর্ড সংখ্যক ৩০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনই লক্ষ্যের ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৭ই আগস্ট পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ২৮৪ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৯ জন এবং টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৫ জন। প্রথম দিনের ৫টি জেলার হিসাব যোগ করলে এবং গতকালের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে আরও কমপক্ষে ৪ লাখ টিকা যোগ করে টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩১৫ জনকে বাদ দিলে ৯২ লাখের মতো মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে।

আর টিকা নিতে ৮ই আগস্ট বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৪ জন। যদি প্রথম ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৬ লাখ বাদ দেয়া হয় তাহলে এক কোটির কিছু বেশি মানুষকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে। সেই হিসাবে ১ কোটি মানুষকে কমপক্ষে ২ কোটি ডোজ টিকা এবং ৯২ লাখের মতো মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে। অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি টিকা লাগবে। কিন্তু টিকা হাতে মজুত আছে ৮১ লাখের মতো। সম্ভাব্য ঘাটতি টিকার পরিমাণ হবে ২ কোটির বেশি।

গণটিকা কর্মসূচিতে যেসব টিকা দেয়া হচ্ছে তা হলো- অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের তৈরি সিনোফার্ম, ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন। শনিবার দেশব্যাপী গণটিকা দেয়া শুরু হয়। আর তাতে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৭২ জনকে। এর আগে নিয়মিত দৈনিক আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার রেকর্ড ছিল দেশে।

অধিদপ্তর আরও জানায়, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও সিলেট জেলার গণটিকাদানের নারী ও পুরুষের আলাদা হিসাব না আসায় তা মূল তথ্যে যোগ হয়নি শনিবার। পরবর্তীতে তা প্রতিবেদনে যোগ করে দেয়া হবে। এ ছাড়া শনিবার নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে ৫৩ হাজার ৭৯৮ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ শনিবার কেউ পায়নি এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৭ হাজার ৭৯ জন। এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৬৩ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৭১ হাজার ৩১০ জন। এদিন ফাইজারের প্রথম ডোজও কাউকে দেয়া হয়নি এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪ হাজার ৬৭৪ জন। এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৭১২ ডোজ। এ ছাড়া সিনোফার্মের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ ৫৮ লাখ ১৭ হাজার ৩৩ জনকে আর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ২৯৩ জনকে। মডার্না প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৮ জন। এখন পর্যন্ত এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ কেউ গ্রহণ করেনি।

দেশে এ পর্যন্ত কেনা ও উপহার মিলে মোট টিকা এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ। এর থেকে বিতরণ করা হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ২৮৪ ডোজ। টিকা মজুত আছে ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৬ ডোজ।

এদিকে, সারা দেশে শনিবার থেকে গণটিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয়। সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ও বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে ৭ই আগস্ট থেকে ১২ই আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ক্যাম্পেইন। ১৮ বছর বয়সী অনেকের এনআইডি না থাকায় বয়সসীমা ২৫ বছর থাকছে টিকা ক্যাম্পেইনে। ৭ই আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া ক্যাম্পেইনে ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী; অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার কথা বলছে সরকার। ক্যাম্পেইনের প্রথম দিন দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন শুরু হয়।

৮ ও ৯ই আগস্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে এবং ৭ থেকে ৯ই আগস্ট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি চলবে। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮ ও ৯ই আগস্ট ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালু থাকবে। ১০ থেকে ১২ই আগস্ট জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীর ৫৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকা পাবেন ৩২ লাখ মানুষ। তারা যথা সময়ে টিকার দ্বিতীয় ডোজও পাবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যর মহাপরিচালক। প্রসঙ্গত, দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় এ বছরের ২৭শে জানুয়ারি এবং গণটিকাদান শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে।