নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চায় জামায়াত

আপডেট: মে ৩০, ২০২২
0

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ১.নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং দুই আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভা সংগঠনের আমীর ডাঃ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ বিস্তারিত আলোচনার পরযে প্রস্তাবস গ্রহণ করে:
তা হচ্ছে —
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সরকার অত্যন্ত নগ্নভাবে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই।
স্বাধীনতার পর ৫১ বছরে দেশে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সম্পন্ন হওয়ায় জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ভোট দিতে পেরেছে। ২০০৬ সালে কেয়ারটেকার সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে দেশে লগি-বৈঠার তা-বের মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরী করে অনিয়মিত সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সরকার নিরাপদ প্রস্থানের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি সাজানো নির্বাচন সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে ক্ষমতায় বসায়।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাটি বাতিল করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনীর জন্য একটি কমিটি গঠন করে। দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, বিশিষ্ট নাগরিকগণ এমনকি সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির প্রায় সকল সদস্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। আদালতের যে রায়কে উছিলা করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয় সে রায়েও পরপর দুটো নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করার বিষয়ে মত দয়া হয়। তা সত্ত্বেও এ ব্যবস্থাটি শুধু দলীয় স্বার্থে বাতিল করা হয়। এর মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারসমূহের নির্বাচনের মাধ্যমে গোটা জাতির নিকট এটা স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার যে ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ করেছে তার অনিবার্য পরিণতিতে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। সংবিধান স্বীকৃত মিছিল-মিটিং, সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, খুন, গুম, অপহরণ জাতিকে গ্রাস করেছে। এর হাত থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে হলে জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর দলনিরপেক্ষ সরকার ব্যতীত অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।

॥দুই॥
আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ লক্ষ্য করছে যে, দেশের আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে সরকার ও তাদের সহযোগীরা এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। দেশের আলেম সমাজ ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের মানুষের চরিত্র গঠন ও অনৈতিক কর্মকা- থেকে যুব সমাজকে বিরত রাখার যে মোটিভেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তা দেশে নৈতিক পরিবেশ উন্নত করার ভূমিকা পালন করেছে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, গুম, দেশব্যাপী বোমা হামলার প্রতিবাদে দেশের আলেমগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করেছেন।
দেশের মাদ্রাসাসমূহ তরুণ ছাত্রসমাজকে নৈতিক চরিত্র গঠন, তাদেরকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে উঠার যে ভূমিকা পালন করছে তার বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত চলছে। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে, অপবাদ আরোপ ও তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক আলেমকে গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। অতিসম্প্রতি দেশের আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘গণতদন্ত কমিশন’ এর নামে একটি অসাংবিধানিক ও আইনগত এখতিয়ার বহির্ভূত কমিটির মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন রচনা করে আলেমদের হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ‘গণতদন্ত কমিশন’ গঠনের কোনো অধিকার দেশের সংবিধান বা আইন কোনো ব্যক্তিকে দেয়নি। অবিলম্বে এ অবৈধ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ আলেম-উলামা ও মাদ্রাসাসমূহের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ও অবিলম্বে আটক সকল আলেমের মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।