নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া দেশে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হবে না–মির্জা ফখরুল

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
0

নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া দেশে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত দুইদিন আগে আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, ‘‘ উনি( শেখ হাসিনা) নির্বাচনের কথা বলেছেন, তার দলের কার্য্ নির্বাহী পরিষদের সভায় সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কোন নির্বাচন? যে নির্বাচন শুধু মাত্র আপনাকে নির্বাচিত করবে সেই নির্বাচন, যে নির্বাচনে আমাদের জনগন যারা ভোটার আছে তারা ভোট দিতে যেতে পারবে না এবং কি তাদের বাড়ি-ঘর আক্রমন করা হবে, ভোটকেন্দ্রে গেলে তাদেরকে বেইজ্জতি করা হবে, নির্যাতন করা হবে সেই নির্বাচন? যে নির্বাচনের আগের রাত্রেই আপনারা দখল করে নিয়ে চলে যাবেন সেই নির্বাচন? যে নির্বাচন আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার আরেকটা পথ সুগম করবেন সেই নির্বাচন?”

‘‘ আমরা পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশে আর সেই ধরনের নির্বাচন হবে না। আমাদের খুব পরিস্কার কথা -নির্বাচন একটা হবে। সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, সেই নির্বাচন হতে হবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। আর সবার আগে গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং একই সঙ্গে মুক্ত করতে হবে যারা কারাগারে আছেন গণতন্ত্রের কর্মী-নেতা, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যাদেরকে আটক করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। আর ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলাগুলোকে প্রত্যাহার করতে হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না এদেশে।”

নির্বাচন কমিশন গঠন সংসদ আইন প্রণয়নে আপত্তি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন গঠন হবে তখনই যখন একটা সত্যিকার অর্থেই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন হতে পারে সেই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। আইন করা হবে বলছেন। কোন আইন?”

‘‘ আপনারা আইন করবেন পার্লামেন্টে যেখানে আর কেউ নেই, কথা বলার সুযোগ নেই বা আপনারা একরতফা আইন পাস করে নিয়ে যাবেন আপনাদের সুবিধার জন্য। সেই আইনের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে সেটাও এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান মহিলা দল প্রতিষ্ঠা করেন।

সর্বত্র দলীয়করণের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এই সরকার দেশকে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছেন যে দেশে এখন আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। সমস্ত রাষ্ট্র যন্ত্রকে আপনারা দলীয়করণ করেছেন, বিচার বিভাগ দলীয়করন হয়ে গেছে, প্রশাসন দলীয়করণ হয়েছে গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আপনারা দলীয়করণ করেছেন। এমনকি আপনার সেনাবাহিনীকেও আপনার দলীয়করণ করার চেষ্টা করছেন। আমরা কথা বলতে পারছি না, আমরা লিখতে পারছি না। আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা তারা কখনোই বিনা ভয়ে কিছু লিখতে পারেন না। কারণ তাদেরকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ফেলা হয় অথবা তাদেরকে বিভিন্ন আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।”

‘‘ আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এভাবে একরফা, একদলীয় শাসনব্যবস্থা, একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ফ্যাসিবাদী সরকারকে চিরস্থায়ী করা-এটা কোনোদিনই এদেশের জনগন মেনে নিতে পারে না। এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। আমরা লড়াই করেছি, আমরা যুদ্ধ করেছি, যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছি। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো কী? একটা ছিলো রাজনৈতিক মুক্তি ও আরেকটা অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই রাজনৈতিক মুক্তিই তো আমি পাইনি, আমি তো এখন পুরোপুরিভাবে বন্দি হয়ে আছি।”

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের জন্য মহিলা দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘‘ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্রের মুক্তি-এই প্রত্যাশায় মহিলাকে সংগঠিত করে আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই্-একথা মনে করে আমাদেরকে রাস্তায় নেমে পড়তে হবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ আজকে যেভাবে আমাদেরকে হয়রানি করছে যেভাবে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। এখন আমাদের একটাই উদ্দেশ্য- শেখ হাসিনারে মারো টান, গদি হবে খান খান। অর্থাত শেখ হাসিনার পতন সকল সমস্যার সমাধানের পথ খুলবে।”

‘‘ আসুন সেই একদফায় এগিয়ে যাই। দলের মহাসচিবসহ আমাদের চেষ্টা চলছে সুদৃঢ় একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং সকল দলমত নির্বিশেষ একটাই ইস্যু- অবাধ ‍সুষ্ঠ নির্বাচনের গ্যারেনিটট হাসিনার পদত্যাগ।তার এই পদত্যাগ আমরা নিশ্চিত করি।”

তিনি বলেন, ‘‘ নির্বাচন কমিশন গঠন হয়তবা মতামত আমরা দেবো। তবে আমি বলব, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে ফেরেস্তা এনেও যদি নির্বাচন কমিশন করা হয় তারপরেও লাভ হবে না।”

‘‘ শয়তানে যেখানে আসর করে সেখানে ফেরেস্তারাও অসহায় হয়ে যায়। সুতরাং শয়তানের আসর থেকে দেশকে মুক্তি করতে হলে এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি-এই শ্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই।”

সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেওয়াজ হালিমা আরলি, হেলেন জেরিন খান, ইয়াসমীন আরা হক, চৌধুরী নায়াব ইউসুফ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।