পদ্মা সেতু উদ্বোধনে জনসমাবেশ বাতিল করে সে অর্থ ঈদে দরিদ্রদের দিন–ডা. জাফরুল্লাহ

আপডেট: জুন ১৪, ২০২২
0

পদ্মা সেতু উদ্বোধনে জনসমাবেশ বাতিল করে সে অর্থ ঈদে দরিদ্রদের খাদ্য
সহায়তা দেওয়ার আহবান জাফরুল্লাহর

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনসমাবেশ বাতিল করে সে অর্থ কোরবানি ঈদে দরিদ্র পরিবারদেরকে ঈদ খরচের জন্য বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি
আহবান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সোমবার ( ১৩ জুন) ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে কোরবানি
ঈদে দরিদ্র পরিবারের জন্য খাদ্য সাহায্যের আবেদন জানিয়ে এক সংবাদ
সম্মেলনে এমন আহবান করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. মনজুর কাদির আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য
রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু,অনুষ্ঠান
সঞ্চালন করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম
মিন্টু।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন,‘ ঊর্ধ্বগতির কারনে
এবার দেশের দরিদ্র মানুষ কোরবানির ঈদে কোন ধরণের আনন্দ করতে পারবে না।
অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ক্রয়
ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়ায়, ঈদের দিনে এসব মানুষের চোখে থাকবে পানি।
প্রায় তিন কোটি মানুষ এবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। উদ্যোগ নিলে তিন
কোটি মানুষকে হয়তো খাবার দেওয়া যাবে না৷ কিন্তু কয়েক লাখ মানুষকে
দেওয়া যাবে। তাই আমরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ হাজার
পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এমনটা জানান জাফরুল্লাহ
চৌধুরী। তিনি বলেন, এবার সারা দেশ থেকে ৫৩ হাজার মানুষ মক্কায় গেছেন
হজ্জ করতে। তারা যদি ১০ হাজার টাকা করে দান করেন তাহলে ছয় লাখ পরিবার
ঈদের তিনটা দিন ভালো ভাবে অতিবাহিত করতে পারবে। এতে আমার মনে হয়, আল্লাহ
বেশি খুশি হবেন।

৪ সের চাল, আধা কেজি মাংস, আধা লিটার তেল, দুই কেজি আটা,আলু এবং লবন,
মরিচ ও গুঁড়া মসলাসহ প্যাকেজ দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মা
সেতু উদ্বোধনের যে খরচ সেটি কতটা যৌক্তিক হবে এটা নিয়ে প্রশ্ন রাখতে
চাই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য যে টাকা খরচ হবে, সেই টাকা এইসব গরিব ও
অসহায় মানুষের ঈদের খরচের জন্য দিলে সব থেকে বেশি ভালো হবে। এতে দশ লাখ
মানুষের জমায়েতের থেকে বেশি প্রচারণা হবে।

এভাবে দেশের বিত্তবান ও ব্যবসায়ীসহ বিকাশ ব্যবহারকারীদের কাছেও
সাহায্যের আবেদন জানান তিনি। এই উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা
তাদের বেতন থেকে শতকরা ৫ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। এতে প্রায় ৫০ লাখ
টাকা হয়েছে। কিন্তু ২০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিতে দরকার আরও
দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা সমাজের নানা স্তরের মানুষের থেকে সংগ্রহের
আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বক্তব্যের একপর্যায়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যে
টাকা ব্যয় হয়েছে সেটা তুলতে টোল ধরা হয়েছে। এটা ভাল সিদ্ধান্ত। তবে,
এই সেতুর উপর দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল সম্পূর্ন ফ্রি করে দিলে সব থেকে
বেশি ভালো হবে। আর এই সেতুর উপর দিয়ে যেসব বিদেশি ট্রাক চলাচল করবে,সেসব
পরিবহন থেকে বেশি টাকা টোল আদায় করতে হবে। পদ্মা সেতু থেকে আয় হওয়া এই
অতিরিক্ত টাকা শ্রমিকদের ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা মজুরি তে ব্যয় করার
পরামর্শ দেন তিনি।

আইনের অযুহাত না দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য
জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ধারা, ১৫,২৬ এ জীবন রক্ষার জন্য নির্দেশনা
আছে। সুতরাং আমি যেটা মনে করি, এই পদ্মা ব্রীজের উপলক্ষ্য করে, এমন কি
ঈদে মুক্তি দেওয়া হয়। কাজেই এটাকে উপলক্ষ্য করে খালেদা জিয়াকে ঈদে
জামিনে মুক্তি দেন। আমি মামলা প্রত্যাহারের কথা বলছি না। জামিনের কথা
বলেছি।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বলেন, ‘আমি দেশের ভেতরে চিকিৎসা
নেওয়ার পক্ষ্যপাত্রী লোক। তবে আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেব তিনি
পরামর্শের জন্য যদি সিঙ্গাপুর যেতে পারেন তাহলে, তিনি (খালেদা জিয়া)
বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া দোষের কিছু নাই। প্রেসিডেন্ট সাহেব ও এবং
সরকারের মন্ত্রী, এমপি গন তো বিদেশে চিকিৎসা করতে যান। যান।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ
রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ’গণস্বাস্থ্য স্বাধীনতার সেই ৭১ পর থেকেই গরীব
অসহায়দের স্বাস্থ্যসেবা ,শিক্ষা ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে। আপনারা
যারা বিত্তবান তাঁরা ডা. জাফরুল্লা চৌধুরীর মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবায় এগিয়ে আসবেন। গত রোজার ঈদে গণস্বাস্থ্য
কেন্দ্র দশ হাজার দরিদ্র পরিবারকে ঈদে খাদ্য সামগ্রী উপহার দেন আমি আশা
করি তাদের এ মহতি কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা.
মঞ্জুর কাদির আহমেদ বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সৃষ্টির ৫০ বছর হতে
গণমানুষের মাঝে জনকল্যাণমূলক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা
দিয়ে আসছে। গত ২ বছরে করোনায় ভয়াবহতার সময় প্রায় ৪০ হাজার পরিবারকে
১ মাসের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে অসহায় দরিদ্রদের পাশে সাহায্য অব্যাহত
রেখেছেন। আগামীতে আমরা দরিদ্র অসহহায় পরিবারের পাশে আমাদের সাধ্যমত
সহযোগিতা করে যাবো।’