পাপিয়া কান্ড : এবার কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার বদলী

আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২৩
0

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে অপরাধী চক্র গড়ে তোলা এবং শিক্ষানবীশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে (৩৮) মারধর ও নির্যাতনের ঘটনার জেরে ৬ কারারক্ষীকে তাৎক্ষণিক বদলী (স্ট্যান্ড রিলিজ) করার পর এবার জেল সুপার ওবায়দুর রহমানকে বদলী করা হয়েছে। তাকে রাজশাহী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (৩ আগস্ট) স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের (কারা-১ শাখা) উপসচিব তাহনিয়া চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে ওই বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এরআগে ৩০ জুলাই দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই কারাগারের ছয় জন কারারক্ষীকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বদলি করা হয়।

কারাসূত্রে জানা যায়, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার হিসেবে ওবায়দুর রহমান দায়িত্ব পালন করা কালে কারাগারে বন্দী নির্যাতনসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। এসব বিষয়গুলো পাপিয়া-কান্ডের পরই প্রকাশ পায়। সেখানে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি। যার কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে গত ৩০ জুলাই গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী ৬জনকে একযোগে তাৎক্ষণিক বদলী করা হয়েছে। তাদেরকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বদলী করা হয়। কারা মহাপরিদর্শক এর পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল সুজাউর রহমান স্বাক্ষরিত তাদের বদলীর এক আদেশে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ এর নির্দেশ দেওয়া হয়। বদলীকৃতদের মধ্যে কারারক্ষী আলেয়া চৌধুরীকে লক্ষ্মীপুর, শাম্মী আক্তারকে সুনামগঞ্জ, মোছা. সোহেলা আক্তারকে ঝালকাঠি, সেলিনা আক্তারকে শেরপুর, ঝর্ণা আক্তারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও লাকী আক্তারকে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কারাগার সূত্রে আরো জানা যায়, বিভিন্ন কারণে আলোচিত যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুরস্থিত কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। তিনি কারাগারের ভেতরেও অপরাধ কার্যক্রম শুরু করেন এবং গড়ে তোলেন অনুগত বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বন্দী ও অন্য নারীদের কাছ থেকে তিনি টাকাপয়সা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতেন। তাদের ওপর চালাতেন অমানুষিক নির্যাতন। কয়েকজন কারারক্ষী ও নারী বন্দী তার এসব কাজে সহযোগিতা করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, ঢাকায় আদালতে নথি চুরির অভিযোগে কতোয়ালী থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার হন শিক্ষানবীশ নারী আইনজীবী রুনা লায়লা (৩৮)। গত ১৬ জুন তাকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯জুন তিনি যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার সহযোগীদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। এতে কয়েক কারারক্ষী অংশ নেন। এঘটনায় গত ২৫ জুন নির্যাতনের শিকার ওই নারী আইনজীবীর ভাই গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এবং তাঁর বোনকে নির্যাতনের ঘটনার বিচার দাবি করেন। এই অভিযোগের মাধ্যমে শামীমা নূরের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ওই ঘটনার পর পাপিয়াকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মহিলা কারাগারের মেট্রন (মহিলা কারারক্ষীদের প্রধান) ফাতেমা আক্তারকে প্রত্যাহার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করে গঠিত তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে কারাগারের ছয়জন কারারক্ষীকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হলো।

###

মোঃ রেজাউল বারী বাবুল

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।

০৩/০৮/২০২৩ ইং।