সারাদেশে নজীরবিহীন লোডশেডিং ও জ্বালানী খাতে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে গত ৩১ জুলাই ২০২২ দেশব্যাপী জেলায় জেলায় বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের অংশ হিসেবে ভোলায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমকে নির্মমভাবে হত্যা ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে। গুলিতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর কমফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম আজ বেলা সাড়ে তিনটায় ইন্তেকাল করেছে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং এ হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার মাধ্যমে হাত রক্তে রঞ্জিত করে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে এখন গোরস্থানে পরিণত করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। শহর, গ্রামসহ দেশের জনপদের পর জনপদে মানুষ হত্যার মহাযজ্ঞ যেন থামছেই না।
সন্তানহারা পিতা-মাতা, স্বামীহারা স্ত্রী ও পিতাহারা সন্তানদের আহাজারীতে প্রতিদিনই আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল-বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা কব্জায় রাখাই এখন আওয়ামী রাজনীতির প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এই সরকার বিএনপি-কে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে কাজ করছে, আর সেই মিশনেরই নিষ্ঠুর শিকার হলেন ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম। রক্ত ঝরানো ছাড়া এই সরকারের আর কিছু করার নেই।
কারণ সারাদেশকে তারা ফতুর করে দিয়েছে। নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এরা দেশকে গণতন্ত্রশুণ্য করেছে, আর সেজন্য দেশ থেকে বিরোধী দলকে মুছে ফেলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যাতে এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সমাজের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী করার যাতে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে টু শব্দ করার সাহস না পায়।
সে কারণেই সরকার বিএনপি’র বিরুদ্ধে পুলিশকে জল্লাদের মতো ব্যবহার করছে। তবে রক্তপাত ঘটিয়ে জীবন কেড়ে নিয়ে ভীতি সৃষ্টি করে আর ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবেনা। জনগণ আর বসে থাকবে না, দুঃশাসন মোকাবেলায় অব্যাহত রক্তপাতের কর্মসূচিকে সম্মিলিত শক্তি দিয়ে জনগণ প্রতিহত করবে। আমি নুরে আলম এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকে কাতর পরিবারবর্গ ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর তীব্র নিন্দা ও শোক
গত ৩১ জুলাই ২০২২, ভোলায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত ভোলা জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম আজ ঢাকার কমফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং এই হত্যাকান্ডে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এক ভয়ঙ্কর দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। মানুষের কথা বলা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করে এক নির্বাক রাষ্ট্র সমাজ গঠনের আয়োজন করেছে। জনগণের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে দিশেহারা হয়ে মানুষ হত্যার মতো হঠকারী সিন্ধান্ত নিয়ে সরকার পুরো দেশে এক ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে। এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকেই বহন করতে হবে। সরকার দুঃশাসন চালু করে মূলত: জনগণের প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। বিএনপি’র ওপর নির্বিচারে হামলা ও জীবন কেড়ে নিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। ভোলায় বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি করে হত্যা সরকারের এক অশুভ পরিকল্পনার অংশ।
বিদ্যূৎ, জ¦ালানী ও সার সহ ভয়াবহ আর্থিক সংকটকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য মানুষের চোখকে অন্যদিকে সরাতে গত ৩১ জুলাই আব্দুর রহিম এবং গুরুতর আহত নুরে আলম এর আজকে মৃত্যু এই দুটি হত্যাকান্ডই সুপরিকল্পিত। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতেই ভোলায় বিএনপি’র দুজন বলিষ্ঠ নেতাকে হত্যা করা হলো। জনস্বার্থে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এধরণের বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে দুটি তাজা প্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনা বিশ^বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বর্তমানে দেশের মানুষ এক জালিম সরকারের শাসনে বসবাস করছে। কিন্তু এদেশের সাহসী জনতা অতীতেও যেমন সকল স্বৈরাচারকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকেও তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাস্তায় নেমে এসেছে। পুলিশের এই হত্যাকান্ডে জনগণের শক্তি আরও সংহত হবে এবং সরকারের পতন তরান্বিত হবে।”
আমি ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম এর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকাহত পরিবার-পরিজন ও শুভাকাঙ্খীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান রাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাত নসীব করুন-এই দোয়া করি।
