পোশাক কর্মীকে হত্যার পর লাশ সিমেন্টের পিলারের সঙ্গে বেঁধে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে দেয় হত্যাকারীরা

আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২২
0

জ্বালা যন্ত্রণা দুর করতে পোশাক কর্মীকে খুনঃ

সাড়ে তিন বছর পর রহস্য উম্মোচন করলো পিবিআই ॥

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের শ্রীপুরে জ্বালা যন্ত্রণা দুর করতে পোশাক কর্মী এক যুবতীকে খুন করা হয়েছে। হত্যার পর শরীরের কাপড় দিয়ে সিমেন্টের পিলারের সঙ্গে নিহতের লাশ বেঁধে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে দেয় হত্যাকারীরা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সাড়ে ৩ বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক যুবককে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

 

গ্রেফতারকৃতের নাম- মোঃ তুলা মিয়া (২৪)। তিনি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার দর্শা মোড়ল বাড়ি এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে।

 

পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার জোকা এলাকার লাল মিয়ার মেয়ে সাবিনা (২০) গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সূর্য্যনারায়নপুর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে তার খালা, খালু ও নানীর সঙ্গে থেকে গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত ২০১৯ সালের ২৫ জুন নতুন বাসা খোঁজার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন সাবিনা। এর দুইদিন পর ২৭ জুন তার অর্ধগলিত লাশ শ্রীপুর থানাধীন রাজাবাড়ী বাজারস্থ রহম আলীর পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের খালা ফুলেমা খাতুন সাথী বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। শ্রীপুর থানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-০২ প্রায় ৪ মাস চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্ত করেন। কিন্তু কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পিবিআই’কে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে খুনের এ ঘটনায় জড়িত তুলা মিয়াকে ময়মনসিংহের ভালুকা থানার ভরাডোবা এলাকা হতে বৃহষ্পতিবার গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত তুলা মিয়া নিজেকে জড়িয়ে খুনের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

 

পিবিআই’র পুলিশ সুপার গ্রেফতারকৃতের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গার্মেন্টস কর্মী সাবিনা মোট ৪টি বিয়ে করেন। তার এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার চলাফিরা ভাল ছিল না, বেপরোয়া চলাফিরা করতো। প্রায়শঃ সাবিনা বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে ঘোরাফিরা করে গভীর রাতে বাসায় আসতো। এই নিয়ে সাবিনার সঙ্গে তার খালু সুজন চিল্লা পাল্লা করতো। এলাকার মানুষও সাবিনা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলে সাবিনার খালু সুজনকে বিচার দিত। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন সুজন ও তার পরিবার।

 

তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালের ২৫ জুন এক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় বেড়িয়ে রাতে বাসায় ফিরেন সাবিনা। দেরী করে বাসায় ফেরায় সাবিনাকে তার খালু সুজনের বাবা গালমন্দ করেন। এসময় সাবিনা উত্তেজিত হয়ে তার খালুর বৃদ্ধ বাবাকে চড় মারে। এ ঘটনায় সাবিনাকে লাঠি দিয়ে মারপিট করে হাত ভেঙ্গে দেয় খালু সুজন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে খালু সুজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার হুমকি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে চলে যায় সাবিনা। মধ্যরাত পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় সাবিনাকে ফিরিয়ে আনতে একই বাড়ির অপর ভাড়াটিয়া তুলা মিয়াসহ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপুর থানার রাজাবাড়ি বাজার এলাকায় যান সুজন। সাবিনা বাসায় ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে কৌশলে তাকে সেখান থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন সুজন ও তার সহযোগীরা। পথে শ্রীপুর থানাধীন রাজাবাড়ী বাজারের পেছনে রহম আলীর পুকুর পাড়ের নির্জন স্থানে সাবিনাকে নিয়ে যায় তারা। সেখানে নিয়ে সাবিনার জ্বালা যন্ত্রণা দুর করতে তাকে শ^াসরোধে হত্যা করে অতিষ্ঠ হয়ে উঠা সুজন, তুলা মিয়া ও তাদের সহযোগীরা। পরে নিহতের শরীরের কাপড় দিয়ে সিমেন্টের পিলারের সঙ্গে লাশ বেঁধে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা।