প্রাথমিক বৃত্তি পরিক্ষা ভূরুঙ্গামারীতে ৪৪ শিক্ষার্থীর ফল বদল : অভিভাবক শিক্ষার্থীর হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ

আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩
0
file photo

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফল অনুযায়ী ৪৪ জন শিক্ষার্থীর ফল বদলে গেছে।এর মধ‍্যে বৃত্তি পাওয়া ১৭ শিক্ষার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। নতুন করে বৃত্তির তালিকায় ঢুকেছে অন্যরা। গত বুধবার রাতে বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফল প্রকাশের পর এই ঘটনা পরিলক্ষিত হলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থগিত ও সংশোধিত উভয় ফলাফলে উপজেলা থেকে ৫৬ জন শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে এবং ৬১ জন শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে। গত বুধবার রাতে প্রকাশিত সংশোধিত ফলাফলে দেখা গেছে, স্থগিত হওয়া ফলাফলে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাওয়া একজন শিক্ষার্থী সংশোধিত ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।
অপরদিকে স্থগিত ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া ৯ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল বদলে গেছে। সংশোধিত ফলাফলে তারা সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে। এতে সংশোধিত ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে নতুন আটজন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া স্থগিত ফলাফলে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাওয়া ১৭ জন শিক্ষার্থী বৃত্তির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সংশোধিত ফলাফলে নতুন করে ৯ জন শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে।
বৃত্তি পরীক্ষার এই ফল পরিবর্তনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা তালুক মশালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোজিনা আক্তার (১০)। তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০২২ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত মঙ্গলবার বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে রোজিনা স্কুলে এসে জানতে পারে তার বড় ভাই সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে। শিশুটি তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে সুসংবাদটি দ্রুত বাবা-মায়ের কাছে দৌড়ে পৌঁছে দিতে যায়। এ সময় মাটিতে আঁছড়ে পরে শিশুটির ডান হাত ভেঙে যায়। বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে পরিবারের সবাই হাত ভাঙার বেদনা ভুলে ছিল। কিন্তু বুধবারের সংশোধিত তালিকায় বৃত্তি পাওয়ার তালিকায় রোজিনার ভাইয়ের নাম নেই। এ খবর শোনার পর পরিবারটির সব সদস্যের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। শফিকুলের মা পারভিন বেগম বলেন, ‘পোলাটাও বৃত্তি পেল না, মাইয়াটারও হাত ভাঙল। এটাতো বৃত্তি পরীক্ষা না, গরিবের সঙ্গে তামাশা করা হলো।’ এদিকে খুব কষ্ট ও লজ্জা পেয়েছি—এ কথা বলে শফিকুলও কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ভূরুঙ্গামারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মাহমুদ বলেন, মঙ্গলবারের প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী ১১ জন ট্যালেন্টপুলে এবং তিন জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল। বুধবার রাতের সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী সাত জন ট্যালেন্টপুলে এবং পাঁচ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। দুই জন শিক্ষার্থী বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। বঞ্চিতদের অভিভাবকরা এসে হতাশা ব্যক্ত করেন এবং কি করা যায় পরামর্শ চাচ্ছেন।
ভূরুঙ্গামারী কিশলয় বিদ্যানিকেতনের লামিয়া আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার খবর পেয়ে মিষ্টি বিতরণ করে। কিন্তুু সংশোধিত তালিকায় তার নাম না থাকায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ পরিবারের সব সদস্য। লামিয়ার মা আকলিমা আক্তার বলেন, বৃত্তিতে নাম না আসলে কোনো কথাই ছিল না। কিন্তু একবার নাম আসল, আবার বাদ গেল। মেয়েটি বৃত্তি পাওয়ার খবর শুনে কত খুশি, কিন্তু বাদ পরার খবর শুনে এখন শুধু কাঁদছে। সরাদিন থেকে না খেয়ে আছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এবারের বৃত্তি পরীক্ষাটি তাড়াহুড়ো করে অনুষ্ঠিত হওয়ায় যান্ত্রিক ক্রটির কারণে কিছুটা ভুল হয়েছিল, যা আবার সংশোধন করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে সঠিক ফলাফল পাঠানো হয়েছিল। জেলার কোনো অবহেলা হয়নি।
##
০৪-০৩-২০২৩