‌`ফাগুনের কূলে কূলে কার খোঁজে আজ পথ হারালো’

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
0

এমরানা আহমেদ:

ফাগুনের বাতাসে বইছে প্রেম । একদিকে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা । অপরদিকে একই দিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। শিমুল- পলাশের সাথে টিয়ে-শালিকের সখ্যতা । কোকিলের কুহুতান, কিংবা প্রিয়তম বা প্রিয়তমার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার দিন আজ। তাই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়েছিলেন——–এক ফাগুনের গান সে আমার আর ফাগুনের কূলে কূলে

কার খোঁজে আজ পথ হারালো নতুন কালের ফুলে ফুলে॥

শুধায় তারে বকুল-হেনা, ‘কেউ আছে কি তোমার চেনা।’

সে বলে, ‘হায় আছে কি নাই

না বুঝে তাই বেড়াই ভুলে

নতুন কালের ফুলে ফুলে।’

কবিগুরু ছাড়া যেমন বসন্ত অসম্পূর্ণ তেমনি প্রেমের কবি নজরুলও বসন্তকে তুলে এনেছেন কবিতা ও গানে । নজরুলের কবিতা “এলো বনান্তে পাগল বসন্ত” এর কথা না বললেই না –

“এলো বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,
চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।।”

একদিকে ফাগুনের বসন্ত বাতাস অপরদিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস । পুরো ফাগুন মাস জুড়েই থাকে ভালোবাসা দিবসের রেশ। ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালনকারীদের অনেকেই দেশ জনতা ডটকমের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপাচারিতায় বলেছেন, কেবল এই একটি দিনই যেন ভালোবাসা প্রকাশের জন্য না হয়, প্রতিটা দিন, প্রতিক্ষণ, প্রিয়জনের প্রতি প্রিয়জনের এবং সর্বস্তরের মানুষের প্রতি যেন মানুষের ভালোবাসা-সহমর্মিতা যেন অটুট থাকে এই দাবি জানান তারা। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেমবার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, জড়াজড়ি করা খেলনা মার্জার অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেয়া হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান, বাংলা একাডেমির বইমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে চলবে তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসার অভিসার। চকোলেট, পারফিউম, শুভেচ্ছা কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলে এসএমএস, প্রেমবার্তা, আংটি, প্রিয় পোশাক, খেলনা, বই অথবা রক্তগোলাপ উপহার হিসেবে আজ দেয়া-নেয়া হবে তরুণ-তরুণীদের মাঝে। শুধু তরুণ-তরুণীরাই নয়, এদিনে সন্তানের প্রতি তাদের পিতামাতার ভালোবাসাও উৎসারিত হয় স্বর্গীয়ভাবে।

জীবনের কবি জীবনানন্দের কবিতায় বসন্ত স্বরূপে এসেছে, কবিতার ছত্রে ছত্রে বলে দিচ্ছে তিনিও নীরবে নিগুড় বসন্ত প্রেমিক। তার কবিতায় বার বার এসেছে বসন্তের কথা। ‘সবিতা’ কবিতায় জীবননানন্দ বসন্তকে তুলে ধরেছেন এভাবে ‘সবিতা, মানুষ জন্ম আমরা পেয়েছি/মনে হয় কোন এক বসন্তের রাতে/ ভূমধ্যসাগর ঘিরে সেই সব জাতি/ তাহাদের সাথে/ সিন্ধুর আঁধার পথে করেছি গুঞ্জন।’

কবি মহাদেব সাহা আবার বসন্তকে কবির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘বসন্তকে আমি বলি কবি, তার হাতে রচিত হয় /পৃথিবীর প্রেমের কবিতা।’

আমাদের বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম গেয়ে ওঠেন ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’

ওপার বাংলাতেও ফাগুনের অনেক কবিতা আছে, আছে গান, যেমন ‘ফাগুনের মোহনায় মন মাতানো মহুয়ায়/রঙ্গিনী বিহুর নেশা কোন আকাশে নিয়ে যায়।’

‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/ কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে/ মধুর অমৃত বাণী, বেলা গেল সহজেই/ মরমে উঠিল বাজি; বসন্ত এসে গেছে।‘ চতুষ্কোণ ছবিতে অনুপম রায়ের সুরে এই গানটিও মোটামুটি আজকাল সবার কাছে অনেকটা জনপ্রিয়।

ফাগুনের বন সেজে ওঠে ফুলের সম্ভারে, আনন্দ ও হাসিতে এবং সুরেলা বাঁশিতে।ফাগুনের হাওয়ায় মন ভেসে যায় সুদূরে। অপরূপা ফাগুনের প্রকৃতির এই অমোঘ টান তাই উপেক্ষা করতে পারিনি লেখক এবং কবিরা, তাঁদের সুনিপুণ লেখনীতে বার বার ধরা পড়েছে ফাগুন দিনের বহু রঙিন রচনা ;কখনও যা কবিতা হয়ে ধরা দিয়েছে আবার কখনো বা গান হয়ে ।