ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে পুলিশ ও অনুগত আদালত-ই হচ্ছে শেখ হাসিনার ভরসা

আপডেট: জুলাই ২২, ২০২৩
0


অলিউল্লাহ নোমান

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদি শাসন টিকিয়ে রাখতে অনুগত আদালত এবং পুলিশই হচ্ছে এবারো ভরসা। অবাধ, সুষ্ঠু, নরিপেক্ষ এবং অংশগ্রগনমূলকা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের চাপ সামনে রেখে নানা কৌশল নিয়ে আগাচ্ছেন শেখ হাসিনা। পুরানত তরিকা অনুসরণ করার পাশাপাশি নির্বাচনে বিজয়ের নতুন কৌশল খুঁজছেন শেখ হাসিনা। কিভাবে উপরে দেখতে ফিটফাট দেখাবে এবং ভেতরে সব সাজিয়ে নেওয়া হবে, এমন একটি কৌশলের সন্ধানে আছে সরকার। রের কথায়, আচার-আচরণে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, তাদের রচিত সংবিধান অনুযায়ী ভোট অনুষ্ঠিত হবে। অথাৎ শেখ হাসিনা সরকার প্রধান এবং বর্তমন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। তাদের তরিকা অনুযায়ী নানা হুঙ্কারও দেওয়া হচ্ছে বিরোধী দল গুলোর একদফা দাবী ঘোষণার পর। ২১ জুলাই এমনই একটি হুঙ্কার দিছে শেখ হাসিনা তাঁর ভাষায় বলেছেন-আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে।

মানুষের কোন ক্ষতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিরোধী দলের প্রতি এক ধরনের হিংস্্রতাই প্রকাশ পেয়েছে। র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার কোন তোয়াক্কা শেখ হাসিনা করছেন বলে মনে হচ্ছে না। বিরোধী দল গুলোর পদযাত্রা কর্মসূচিতে মানুষের উপর পুলিশ হিংস্ত্রতা দেখিয়েছে। পুলিশের গুলিতে একজন নিহতসহ বহু লোক আহত হয়েছেন। সারা দেশের মামলা দিয়ে নতুন করে ৭ হাজার বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে আসামী বানানো হয়েছে। এর সবই হচ্ছে শেখ হাসিনার আগামী নির্বাচন পার করার কৌশলের অংশ।

ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে, শেখ হাসিনার এমন হুঙ্কারের পরের দিন (২২ জুলাই) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম কনফারেন্স ছিল। ডিএমপি কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে অধিনস্থ সকল পুলিশ অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের একাধিক সূত্র আমাকে নিশ্চিত করেছে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুলিশ আগের মতই ফ্যাসিবাদি সরকারকে রক্ষায় সর্বশক্তি কাজে লাগাবে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে গায়েবী মামলাসহ পুরাতন মামলা গুলো সচল করবে। বৈঠকে একজন পুলিশ কর্তা এমনো বলেছেন, কারাগারে স্থান সঙ্কট হলে প্রয়োজনে আরো কারাগার বানানো হবে। তারপরও কোন অবস্থায় গ্রেফতার অভিযানে ভাটা দেওয়া যাবে না। গত ৬ জুলাই পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ডিআইজি জয় দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়টি নিয়েও ডিএমপি’র বৈঠকে আলোচনার পর সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অনুগত পুলিশ বাহিনী গত ৬ জুলাই বাহিনীটির হেডকোয়ার্টারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির একটি ফর্মূলা তৈরি করেছেন। সে ফর্মূলা অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে বাছাই করা মামলা গুলো নিষ্পত্তির তোড়জোড় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। পুলিশের বাছাই করা মামলা গুলো দ্রুত রায় দেওয়ার তাগিদে অস্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে ফ্যাসিবাদের অনুগত বিভিন্ন আদালত।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সাথে কথা বল জানা গেছে, প্রচলিত প্রথা ও রীতি ভঙ্গ করে সাক্ষী নেওয়া হচ্ছে। সাধারণত ফৌজদারি মামলায় তদন্তকর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হয় সবার শেষে। অথচ, ঢাকার সিএমএম কোর্টে বিচারের প্রচলিত প্রথা ও রীতি ভঙ্গ করে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষী নেওয়া হচ্ছে সবার আগে। এছাড়া মামলা গুলো বিরতিহীনভাবে শুনানীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একদিন শুনানীর পর দুই থেকে ৩ সপ্তাহ পর পরবর্তী শুনানী গ্রহনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চিহ্নিত মামলা গুলো কখনো পরের দিনই অথাবা ১/২দিন সময় দিয়ে তারিখ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া একদিনে টানা ৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এতে বিচারক, আইনজীবী এবং সাক্ষী ক্লান্ত হয়ে পড়লেও বিরতিহীন চলে সাক্ষ্যগ্রহন।

সংশ্লিষ্ট একজন আইনজীবী জানান, ঢাকার সিএমএম কোর্টে গত বুধবার (১৯ জুলাই) একটি মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বেলা দুইটা থেকে একটানা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আদালত এই সাক্ষীর জেরা এবং জবানবন্দি গ্রহন করেন। এছাড়া অস্বাভাবিক গতিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনুকে আটকের পর দীর্ঘ দিন থেকে কারাগারে রয়েছেন। তাঁর একটি মামালায় জামিন ছিল। এই জামিন বাতিল করেন সিএমএম কোর্টের চার নম্বর আদালতের বিচারক তোফাজ্জল হোসেন। জামিন বাতিলের পর একদিনে ৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। দ্রুততার সাথে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য তড়িঘড়ি করছে পুলিশ ও আদালত।
এদিকে শেখ হাসিনা ও তাঁর অনুগত পুলিশ এবং আদালতের অপতৎপরতা উপেক্ষা করেই বিরোধী দলের ডাকা সভা-সমাবেশ গুলোতে মানুষের ঢল নামছে। বিরোধী দলের সমাবেশ গুলোতে উপস্থিতি প্রমান করছে মানুষ চলমান আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন এবং শেখ হাসিনা সরকারের দ্রুততার সাথে পতন চাচ্ছেন। সরকারের অপকৌশল মোকাবিলা করে আন্দোলন চুড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নেওয়া বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব।

শেখ হাসিনার অনুগত পুলিশ বাহিনীর যারা গুম ও খুনের সাথে সরাসরি জড়িত তাদেরকে দ্রুততার সঙ্গে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে মুখোশ উম্মোচন করা, পরিবার ও সমাজের সামনে তাদেরকে খুনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসাবে পরিচিত করার সময় এখনই। একইভাবে যেসব বিচারক অন্যায় যেনেও শুধু নিজের চাকুরি রক্ষার তাগিদে অথবা ফ্যাসিবাদের দাসত্ব মানষিকতায় বিরোধী দলের নেতাদের বানোয়াট মামলা দন্ড দেওয়ার নিমিত্ত্বে তড়িঘড়ি করছেন তাদের তালিকা তৈরি করে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজটিও এখনই করতে হবে। একদফা দাবী আদায়ে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি ফ্যাসিবাদ অনুগত বিচারক ও পুলিশের চরিত্র প্রকাশ করা সময়ের দাবী।

মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মত একতরফা অথবা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মত অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের নামে কোন তরিকায় ফ্যাসিবাদ টিকে গেলে আরো শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে বিরোধী দল দমনে।

লেখক: যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত সাংবাদিক