বাংলাদেশ পুষ্টি নিরাপত্তার বৈশ্বিক মান অর্জনের পথে রয়েছে— শিল্পসচিব

আপডেট: জুলাই ২৬, ২০২২
0


ঢাকা, ১১ শ্রাবণ (২৬ জুলাই ২০২২):

শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার ফুড ফর্টিফিকেশন বা খাবার সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুপুষ্টির অভাবে মানুষের যে সমস্যা হয় তা প্রতিকার ও প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর। খাবার সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে সকলের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে খাবার সমৃদ্ধকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুষ্টি নিরাপত্তায় বৈশ্বিক মান অর্জনের পথে রয়েছে।

আজ রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (gain) এবং বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত “ডিজিটাইজেশন অফ ফরটিফিকেশন অফ এডিবল ওয়েল ফর ইমপ্রুভড মনিটরিং, কোয়ালিটি কনট্রোল এণ্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং” শীর্ষক ইন্সেপশন মিটিংয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শিল্পসচিব বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় ভোজ্য তেল ও লবণ ফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি দূর করতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। এই প্রকল্পটি সরকারী পরিষেবাগুলিকে ডিজিটাল করার জন্য একটি চলমান সরকারি প্রচেষ্টা, ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সাথে সম্পৃক্ত। তাই আমরা বিশ্বাস করি এই প্রকল্পটি বাংলাদেশে ভোজ্য তেল ফর্টিফিকেশনের গুণমান নিশ্চিতকরণ এবং মান নিয়ন্ত্রণের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম শফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর মহাপরিচালক ড. মোঃ নজরুল আনোয়ার এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি রুচিকা চুঘ সচদেভা বলেন, এটা সত্যিই প্রশংসনীয় যে বাংলাদেশের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” রূপকল্প রয়েছে। ফর্টিফিকেশন এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে লবণ ও তেলের ফরটিফিকেশন বাধ্যতামূলক করার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাই।

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লবণের ফর্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক এবং প্রায় ১০ বছর ধরে তেলের ফর্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক। তবে এই খাবারগুলোর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট উপাদান বাংলাদেশের জাতীয় মান পূরণ করে কী-না তা নিশ্চিত করা কঠিন ছিল। মার্কেট পর্যায়ে খাবার তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে খাবার অপর্যাপ্তভাবে ফর্টিফাই করা বা কোন কোন ক্ষেত্রে ফর্টিফাই করাই হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশের উচ্চ মাত্রার মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি মোকাবেলায় ফুড ফর্টিফিকেশন আশানুরূপ ভাবে কার্যকর হতে পারছে না। যার মধ্যে ভিটামিন এ এবং আয়োডিনের ঘাটতিও রয়েছে।

দেশের গুরুতর স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে বাংলাদেশের ২০১৯-২০ ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী ৫০% শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব রয়েছে। অপর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ এর কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করে না, শ্বাসযন্ত্র এবং ডায়রিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি থামিয়ে দেয় এবং গুরুতর অসুস্থতা থেকে বাঁচার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। প্রজননক্ষম নারীদের ৯.৭% এর মধ্যেও ভিটামিন এ-এর অভাব পাওয়া গেছে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা ও মাতৃমৃত্যুর জন্যও দায়ী।

ন্যাশনাল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের জরিপে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় ২৩% এবং প্রজননক্ষম মহিলাদের ৩০% এর মধ্যে আয়োডিনেরও ঘাটতি পাওয়া গেছে। আয়োডিনের অভাবে গলগন্ড রোগ সহ থাইরয়েডের বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। আয়োডিনের অভাব শিশুদের মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার একটি প্রধান কারণ। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি চরম ক্লান্তি সৃষ্টি করে, কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং হতাশা এবং সমাজের সাথে বিচ্ছিন্নতা বাড়ায়। এটি একটি বিপদজনক সংমিশ্রণ যার কারণে বিশ্বব্যাংকের মতে প্রতি বছর জিডিপিতে বাংলাদেশের ৭০০ মিলিয়ন ডলারের মতো ক্ষতি হয়।

সভায় জানানো হয়, ফর্টিফিকেশনের মান ও ফর্টিফাইড খাবার ভোক্তাদের কাছে কার্যকরিভাবে পৌঁছায় কী-না তা পর্যবেক্ষণ করতে এই প্রকল্প কাস্টামাইজড ডিজিটাল সিস্টেম চালু করবে। পাইলট প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত তেল উৎপাদনকারীদেরকে ডিজিটাল বিশেষজ্ঞদের একটি দল কো-ডিজাইন এবং নতুন ডিজিটাল মান নিশ্চিতকরণ/মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইনস্টল করতে সহায়তা করবে যা উৎপাদনকারীদের সঠিক মান নিশ্চিতকরণ এবং ইন্সাইট প্রদানের মাধ্যমে লাভজনক ভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।