বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না —-মির্জা ফখরুল

আপডেট: জুলাই ১৮, ২০২২
0

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক সংলাপ শুরুর পর দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ এখানে দেশের মানুষ চায় না যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক বা এই সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচন হোক। সেই কারণেই আমরা এই কমিশনের কোনো সংলাপই বলেন বা তাদের কোনো আলোচনা বলেন বা ইভিএম বলেন, আমরা কোনো কমেন্টই করছি না।”

‘‘ কারণ উই ডোন্ট বিলিভ যে, এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সরকার যদি পরিবর্তন না হয়, নিরপেক্ষ সরকার যদি না আসে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।”

‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের দায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন নেবে না, তারা আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের এরকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ লাভ নেই তো ভাই উনারা যতই কথা বলুক। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার। এটাই মূল প্রশ্ন। পুরো জায়গাটা ওখানে।”

‘‘ সেই সরকার যদি ওরা থাকে এবং শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেন তাহলে কোনো মতেই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা আমরা দেখেছি গতবার, তার আগে দেখেছি।”

‘ড়্রাইভিং সিটে সরকারই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ তো আলোচনা করার সুযোগই রাখে নাই। তারা তো সরকারে। ড্রাইভিং সিটে স্ট্যায়ারিং তাদের হাতে। পুরোটাই তাকেই(প্রধানমন্ত্রী) করতে হবে। দেশে যখন এই বিষয়ে একটা রাজনৈতিক বড় সংকট আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগই বলছে যে, আমরা দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে যেতে চাই না, আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই।”

‘‘ তাকেই(আওয়ামী লীগের প্রধান) তো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তিনি তো উদ্যোগ নিচ্ছেন না বরং তিনি পরিস্কার বলে দিচ্ছেন যে, না ওইভাবে নির্বাচন হবে। তাহলে আপনি সুযোগ রাখছেন কোথায়? স্পেস রাখছেন কোথায়? আপনি পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে স্পেস দিচ্ছেন কোথায়? কোনো মিনিমাম ডেমোক্রেটিক দিচ্ছেন দিচ্ছে না। মিটিং করতে গেলেই এবংকি মিলাদ পড়তে গেলেও বাধা দিচ্ছেন পুলিশ দিয়ে। গতকালও মুন্সিগঞ্জে আমাদের একটা দোয়া মাহফিল করতে দেয়নি পুলিশ। এই সমস্ত ভন্ডামির মানে হয় না। এটা তো হিপোক্রেসি।”

‘আমরা আপনাদেরকে আশা জাগাতে চাই এদেশের মানুষ অবশ্যই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে’ এই আশাবাদের কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের জবাব দেন।

‘নড়াইলের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সাম্প্রদায়িকতা কোনো মতেই এদেশে কাম্য না এবং এগুলো কখনে্াই কোনো ভালো বিষয় নিয়ে আসে না এবং এটা অন্যায়।”

‘‘একই সঙ্গে সবাইকে অনুরোধ করব যে, এমন কোনো কথা না বলা বা স্ট্যাটাস না দেয়া যাতে আপনার অন্য সম্প্রদায়ের লোকেদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আমরা মনে করি যে, ইট ইজ এ টোটাল ফিলিউর অব দ্যা গভার্মেন্ট। দেশে এই যে একটা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে এটা সম্পূর্ণ.., এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি হয়েছে।”

‘‘ আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন, রামুর ঘটনা দেখেছেন, নাসিরাবাদের(ব্রাক্ষনবাড়ীয়া)ঘটনা দেখেছেন, অন্যান্য জায়গায় দেখেছেন- সবসময়ই সাম্প্রদায়িকতার ঘটনা, বাড়ি-ঘর পুঁড়ে দেয়া- এই ঘটনাগুলো দেখেছেন।”

‘সর্বত্র দুর্নীতি’

শ্রীলংকার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগের চরিত্রগত একটা ব্যাপার আছে। সেটা হচ্ছে দুর্ণীতি। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখন চরম দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে যায়। আজকে গোটা দেশের চিত্র যেটা দেখছেন, শুধুমাত্র দুর্নীতি। দুর্নীতি এমন একটা জায়গায় চলে গেছে- যে জায়গায়টায় নো রিটার্ণ হয়ে গেছে।”

‘‘ অর্থনৈতিক বিষয়। আপনার প্রথম কথা হচ্ছে- কাট ইউর কোট একরডিং টু ইউর ক্লথ এবং আপনি সেটা যদি না করতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনাকে বলাই হয় যে, তোমার পায়ের যে মাপ সেই মাপের বড় মাপের জুতা পড়োনা কখনো, তাহলে তুমি হাটতে পারবে না কখনো। এখানে ঘটনাটা সেটাই দাঁড়িয়েছে। যেটা নিতে পারবে, যেটা কনটেইন করতে পারবে যে ইকোনমীটা, তার বাইরে গিয়ে যখন আপনি এই সমস্ত ঋণ করে মেগা প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, মূদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, রিজার্ভ নেই। বাংলাদেশে একই সঙ্গে মিলে যায়.. এটা বললে তারা অসন্তুষ্ট হয়। তারা চিতকার করে বলতে থাকে যে, না। কিন্তু কাদের সাহের কিছুদিন আগে বলেছেন যে, শঙ্কা আছে। এখানে একজন খুব ভালো কথা বলেছেন, শঙ্কা না এটা ঘটবে, তোমরা যদি শিক্ষা না নাও।”

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘ যে দেশে ৪২% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যে দেশে এখনো বহু এলাকাতে ২১% লোক দুই বেলা খেতে পায় না-এটা পত্রিকায় এসেছে। ফুড সিকিউরিটির ওপরে ইন্টিগ্রেটেড রিসার্চের প্রকাশিত ফলাফলে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা জেলা তার মধ্যে সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, রাঙ্গামাটি-এই সমস্ত এলাকাগুলোতে ২১% লোক দুই বেলা খেতে পায় না, সারাদেশের ২১% দুই বেলা খেতে পায় না।”

‘‘ সেই দেশে কী দরকার পড়েছে আমার এখন থার্ড টার্মিনাল করতে হবে, কী দরকার পড়েছে এখন আমাকে টানেল তৈরি করতে হবে, কী দরকার পড়েছে আমাকে চিটাগাং-ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে করতে হবে…..।এসব কাজগুলো.. ওই যে সিঙ্গাপুর বানানোর আকাংখা তাতে কী হচ্ছে? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ গরীব থেকে গরীব হচ্ছে, আরো গরীব হচ্ছে। টাকাটা কার? এটা জনগনের টাকা তো, আমার পকেটের টাকা। প্রতিটির জায়গায় আমি যে ট্যাক্স দেই সেই টাকা। সেই আমার টাকায় গরীবের ভাত না দিয়ে তার অন্ন না দিয়ে এসব মেগা প্রজেক্টের কথা বলা হচ্ছে।”

দেশে রিজার্ভের বর্তমান মজুদ অবস্থা এবং বিদ্যুতের পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘স্বাস্থ্য খাত ধবংসপ্রাপ্ত’

স্বাস্থ্য খাত একেবারে ধবংস হওয়ার কারণে সরকারি হাসপাতাল চিকিতসার না পাওয়া, টাউট-বাটপারদের দৌরাত্বের চিত্র তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘‘ আমার নিজের কথা বলি, আমি গত তিন/চারদিন আগে হাসপাতালে গেলাম। আমাকে টেস্ট ধরিয়ে দেয়া হলো ২২ হাজার টাকা। শুধু টেস্ট। অনলি ব্লাড এন্ড আট্রাসোনোগ্রাম। প্রত্যেকটা হাসপাতালে আপনাকে টেস্টের ফর্দ ধরিয়ে দেবেই। এখানে সমস্যা হচ্ছে এটা দেখার কেউ নেই।”

‘‘ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ১১০টার মতো হাসপাতাল- ব্যাঙের ছাতার মতো তৈরি হচ্ছে। সেখানে কোনো টিচার নেই বেশির ভাগ হাসপাতালে, নার্স নাই, নার্সিং ইনস্টিটিউট নাই। সেগুলোর দিকে সরকারের কোনো খেয়াল নেই। যার ফলে আজকে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধবংস হয়ে গেছে।”

‘শিক্ষাখাতে চরম দুরাবস্থা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ঢাকা বিশ্বদ্যালয় থেকে শুরু করে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মানের শিক্ষা এখন হচ্ছে। কলেজগুলোতে শিক্ষকদের মারছে, প্রিন্সিপালকে ধরে এমপি মারে। আজকে দেখলাম এক উপজেলা চেয়ারম্যানকে এমপি নিজে মারছে। এই তো অবস্থা।”

‘‘ দেশে টোটাল দুঃশাসন, এনার্কি শুরু হয়ে গেছে এখন। এটাকে বলে ব্যর্থ রাষ্ট্র তৈরি হওয়া,এই ব্যর্থ রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছে।”

‘কুটনীতিকদের সাথে বৈঠক প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত তিনি খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আধুনিক বিশ্বের এটা হচ্ছে একটা নিয়মিত রুটিন ব্যাপার, সৌজন্যবোধ। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা কথা বলি, নট দেট বিএনপির সঙ্গে বলি, আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলি।”

‘‘ এটা আজকে নয় তো, বহুদিন ধরে হয়ে আসছে এটা। আওয়ামী এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পারঙ্গম। তারা যতরকমের মিথ্যা কথা বলে যা কিছু করেছে, তারা ফলস চিঠিও আনিয়েছিলো ইউনাইটেড নেশন থেকে। তবে আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি যে, আমরা বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, আমরা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বিষয় নিয়ে কথা বলি। তার বাইরে তো আমরা কথা বলি না।”

সম্প্রতি জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্র চার্লস হোয়াইটলি বিএনপি মহাসচিবের সাথে সাক্ষাত করেন আলাদা আলাদাভাবে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানারকম বক্তব্য রাখেন।

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।