বাপা-বেন যৌথ সম্মেলন : `বিদ্যুৎ কিসের বিনিময়ে নিচ্ছি তা নিয়ে অবশ্যই আমাদের চিন্তা করতে হবে ‘

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
0

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) এর যৌথ উদ্যোগে আজ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, শুক্রবার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে “জ্বালানী, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন” বিষয়ক দুই দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি এবং অন্তর্জাল উভয় পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনের সহ-আয়োজক এবং সহযোগী আয়োজক হিসেবে দেশের প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ প্রায় ৪০টি সংগঠন যুক্ত হয়েছে। সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকবৃন্দ দেশের প্রান্তীক পর্যায়ের প্রবন্ধকারগণ তাঁদের মূল্যবান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

শুক্রবার সকাল ১০:০০ টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন, নির্বাহী সহ-সভাপতি, বাপা। সম্মেলনের মূলুপ্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ড. নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি, বাপা ও প্রতিষ্ঠাতা, বেন। এছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য মো: ইউনুস মিঞা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সমালোচনাকে আমি স্বাগত জানাই। পরিবেশবিরোধী সকল দখলদারদের উচ্ছেদ করাটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে বলে তিনি সবার প্রতি আহবান জানান। সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, প্রকৃতিকে আমরা যদি তাদের মতো থাকতে না দিই, প্রকৃতিও আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দেবে না।

করোনাকালীন পরিস্থিতি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি বলেন, উন্নয়নের দরকার আছে, উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের দরকার আছে। তবে সেই বিদ্যুৎ আমরা কিসের বিনিময়ে নিচ্ছি তা নিয়ে অবশ্যই আমাদের চিন্তা করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই সম্মেলনের বিষয়বস্তু বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং যুগোপযোগী। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সকাল ১০:৩০টায় সম্মেলনের প্রথম সম্মিলিত সাধারণ অধিবেশন এর প্রতিপাদ্য ছিল অধিবেশন জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)’র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। অধিবেশনে সহযোগী সভাপতি হিসাবে ভার্চুয়ালী যুক্ত ছিলেন বেন এর অন্যতম সদস্য ড. খালেকুজ্জামান। অধিবেশন সংগঠক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। এই অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। অধিবেশনে মূল বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) এর প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশের জন্য যেটা ভালো আমরা সেটাই করবো। আমাদের দেশের পরিকল্পনায় এক ধরনের শূণ্যতা বিরাজ করে। ফলে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের সকল প্রস্তাবনাই আমারা গ্রহণ করে নিই। আমরা যদি এই শূণ্যতা থেকে বের হয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সম্মিলিত সাধারণ অধিবেশন শেষে চারটি বিশেষজ্ঞ অধিবেশন এবং পাঁচটি সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সমন্বিত জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা, ন্যায্য রূপান্তরের জন্য বিবেচনাযোগ্য বিষয়সমূহ, “জীবাশ্ন জ্বালানি সুন্দরবনসহ অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল”, “জীবাশ্ন জ্বালানি- কৃষি ও মৎস সম্পদের উপর নেতিবাচক প্রভাব”, “জীবাশ্ন জ্বালানি- পর্যটন ও লবণ শিল্পের উপর অভিঘাত”, “জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন- স্থানীয় অভিজ্ঞতা, “জ্বালানী, জলবায়ু ও উন্নয়ন-বিশ্ব প্রেক্ষাপট”, “নবায়নযোগ্য জ্বালানী ” প্রভৃতি বিষয়ের উপর প্রবন্ধ এবং আলোচনা উত্থাপন করা হয়। এসময় ব্যক্তব্য রাখেন, মো: ইউনুস মিঞা, উপ-উপাচার্য, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ; অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, সহ-সভাপতি, বাপা; বিজ্ঞানী দীপেন ভট্টাচার্য; মোঃ আলাউদ্দিন, চেয়ারম্যান, ¯্রডো; আহমেদ বদরুজ্জামান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ; বদরুল ইমাম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নির্বাহী প্রধান, বেলা; শামসুল হুদা, প্রধান নির্বাহী, এএলআরডি; ইফতেখারুজ্জান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি); ড. আতিউর রহমান, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রমূখ। এসময় বক্তাগণ বলেন, জ্বালানি নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বক্তাগণ আরো বলেন, দেশের গ্যাস সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসময় বক্তাগণ দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য একটি তহবিল গঠনের আহ্বান জানান বক্তাগণ।

সমান্তরাল অধিবেশন শেষে পরিকল্পনা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ভূক্তভোগী মানুষের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

সব শেষে জ্বালানি নীতি বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের অভিমত বিষয়ক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন, বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হাসান জীবন, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমূখ।