বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন সাংবাদিক মিলন

আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২৩
0


ট্রাকের চাকায় পিষে সাংবাদিক মিলনকে হত্যার ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয় নি

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর \ গাজীপুরে সাইড না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাক বিতন্ডার জেরে বালুবাহী ড্রাম্প ট্রাকের চাকায় পিষে কয়েক টুকরো করে সিনিয়র সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনকে হত্যা করার ঘটনার প্রায় ৩০ ঘন্টা পরও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দাখিলকৃত অভিযোগ থানায় এন্ট্রি করেনি পুলিশ। ওই ঘটনায় ট্রাকের চালক ও মালিকসহ কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। দু’দফা জানাযা শেষে শুক্রবার রাতে তাকে কাপাসিয়ার পাবুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।

শুক্রবার সকালে গাজীপুর জেলা শহর জয়দেবপুরের বাসা থেকে মোটর সাইকেলযোগে পেশাগত ও পারিবারিক কাজে ভাকোয়াদি-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়ক পথে কাপাসিয়া যাচ্ছিলেন সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলন। পথে কোটবাজালিয়া বাজারের পাশে পৌছলে অপ্রশস্ত ওই সড়ক দিয়ে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়াগতিতে আসা বালু ভর্তি একটি ড্রাম্প ট্রাক মোটরসাইকেলকে সাইড না দিয়ে ওভারটেক করার সময় সাংবাদিক মিলন আত্মরক্ষার্থে সড়কের বাইরে কাদায় চলে যান। পরে তিনি মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে ট্রাক চালকের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে যান। তিনি ট্রাকটিকে থামিয়ে চালকের সঙ্গে কথা বলার সময় দু’জনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে ট্রাক চালক ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক মিলনের উপর ট্রাকটি উঠিয়ে দিয়ে তাকে চাপা দেয়। এতে কয়েক টুকরো হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। ঘটনার পর ট্রাকটি ফেলে চালক পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার ও ট্রাকটি জব্দ করে।

নিহতের অসুস্থ স্ত্রী রিমিন আক্তার ও ভাই শেখ কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যা। সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ট্রাক চাপা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় অবৈধ বালু ব্যবসায়ীসহ একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

ক্যাপশনঃ
গাজীপুর ঃ সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনের জানাযা।

তারা আরো বলেন, এব্যাপারে ঘটনার রাতেই নিহতের ভাই শেখ কামাল হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে। কিন্তু ঘটনার প্রায় ৩০ ঘন্টা পরও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা এন্ট্রি করেনি। এমনকি কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশ বলছে দাখিলকৃত অভিযোগ পাল্টে হত্যার বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনঃরায় জমা দিতে। অথচ ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানিয়েছে, ট্রাকটি সাইড না দেয়ায় সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলন ট্রাকটিকে সিগন্যাল দিয়ে থামান। পরে তিনি এগিয়ে গেলে ট্রাক থেকে চালকও নে আসেন। এসময় সাইড দেয়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে তাদের দুইজনের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে ট্রাকের চালক উত্তেজিত হয়ে ট্রাকে উঠে স্টার্ট দিয়ে মুহুর্তেই ওই ট্রাকের চাকায় পিষে সাংবাদিক মিলনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনা কোন দূর্ঘটনা নয়, এটি একটি সুস্পষ্ট হত্যাকান্ড। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
এব্যাপারে কাপাসিয়া থানার ওসি এএইচএম লুৎফর কবীর এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন শনিবার বিকেল পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ জমা দেয়া হয় নি। তিনি বলেন, ঘটনার পর ঘাতক ড্রাম ট্রাকটিকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা গেলেও চালক ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় গাড়ি চালক এবং মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে তার প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাতে কাপাসিয়ার পাবুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাযা শেষে তাকে ওই গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। জানাযায় তার সহকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠণের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী অংশ গ্রহণ করেন। এর আগে নিহতের লাশ তার গ্রামের বাড়ি পৌছলে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহতের বৃদ্ধ মা ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এসময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারিয়ে তার অসুস্থ স্ত্রী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন।

নিহত সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলন (৫২) কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাঈদ শেখের ছেলে। তিনি দৈনিক করতোয়া ও দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক গাজীপুর দর্পণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বৈশাখী টেলিভিশন, দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক দিনকালে কাজ করেছেন। তিনি কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুকালে গাজীপুর সিটি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। সাংবাদিক মিলন মৃত্যুকালে অসুস্থ্য স্ত্রী, দুই কন্যা, মা, ভাই-বোনসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

###