বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করবেন না– আ’লীগকে মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
0

বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগকে ‘পাল্টা কর্মসূচি’ না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

বুধবার দুপুরে গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

 

তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তাদের নেতৃবৃন্দের উস্কানিমূলক বক্তব্য বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া, হাত জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে এবং এই কারণেই সন্ত্রাসী কাজগুলো একেবারে লাগামহীনভাবে ঘটছে।”

 

‘‘ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের এই অপততপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করা, বাধা প্রদান এবং একই দিনে একই সময় কোনা কর্মসূচি প্রদান না করার আহ্বান জানানো হয়।”

 

‘অন্যথায় উদ্ভুত পরিস্থির সকল দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে’ বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

 

তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রীরা মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির কথা বললেও বাস্তবে সন্ত্রাসী পরিবেশ তৈরি করছে। গণবিরোধী সরকার বিরোধী আন্দোলনকে নতসাত করতে চাইছে। তাদের মূল লক্ষ্যটাই হচ্ছে যে, উস্কানি দেওয়া, বিরোধী দলকে উস্কানি দিয়ে একটা ট্র্যাপের মধ্যে ফেলা এবং যাতে করে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়।”

 

‘‘ বিএনপি অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই পরিস্থিতি যাতে না ঘটে তার জন্য অত্যন্ত ধর্য়ের সঙ্গে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি প্রদান করে আসছে।

 

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ চট্টগ্রামে এখন যেটা হচ্ছে, আমাদের প্রতিটি নেতার বাড়ি বাড়ি হামলা হচ্ছে, পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে, গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। বাড়ি ভাংচুর করছে।”

 

‘‘ বুঝা যাচ্ছে সরকা্র পরিকল্পিতভাবে দেশে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনগনের আন্দোলনকে দমন করবার জন্য নীল নকশা করেছে।”

 

গত ১৭ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। এতে মহাসচিবসহ ৯ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

 

‘টেলিফোনে আড়িপাতা নিয়ে উদ্বেগ’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে আড়িপাতার বিষয়ে আইন প্রণয়নের ঘোষণায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিএনপির মনে করে কর্তৃত্ববাদী-অনির্বাচিত সরকার তাদের অবৈধ উপায়ে দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নজরদারীতে রাখার জন্য মুঠো ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নজরদারি করতে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ক্রয় ও আড়িপাতার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে।”

 

‘‘ আমরা মনে করি, এই ভয়াবহ নিবর্তনমূলক আইন ও আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর অগণতান্ত্রিক আচরণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। অবিলম্বে এই সব প্রযুক্তি ক্রয় করা ও আইন প্রণয়নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপি আহ্বান জানাচ্ছে।”

 

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রসঙ্গে’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত চার বছরে ১ হাজার ২০৯ টি মামলা দায়ের হয়েছে। বিএনপি মনে করে এই চরম নিবর্তনমূলক আিইনের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি, সংবাদ কর্মী, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও আটকের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর চরম আঘাত করা হচ্ছে ও মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে।”

 

‘‘ নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। অবিলম্বে এই আইনের আওতায় বন্দী ব্যক্তিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি আবারো আমরা জানাচ্ছি।”

 

‘ দেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের নুমনা’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ সারাদেশে গ্রেফতার চলছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি, নিপীড়ন-নির্যাতন চলছেই। এখন পর্যন্ত সারাদেশে জেলা-মহানগরে মামলার সংখ্যা ৫৪২ টা। এজাহারভুক্ত আসামীর সংখ্যা ১৯ হাজার ১১৩ জন, অজ্ঞাত আসামীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮১২ জন এবং গ্রেফতার হয়েছে ২ হাজার ৫৫৫ জন। এই হচ্ছে গণতন্ত্রের নুমনা বর্তমান সরকারের, তাদের পরিবেশ তৈরি করার নমুনা।”

 

‘‘ আমরা এসব গ্রেফাতার, মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করি যে, অবিলম্বে কারাগারে আটক সকলকে মুক্তি দেবেন।”

 

গতকাল চট্টগ্রাম যুব দলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তিসহ চার নেতাকে কুমিল্লার হাইওয়ে থেকে গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তি দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

 

‘রুচিহীন বক্তব্য নিয়ে কথা বলতে চাই না’

অসুস্থতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষ করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমি আপনাদেরকেও বলেছি যে, এসমস্ত রুচিহীন কথাবার্তা বলা-এটা আমি কখনো করি।ইট‘স এ ভেরি বেড টেস্ট।”