বিএনপি’র সভা ঠেকাতে বিধিনিষেধ কি না প্রশ্ন রয়েছে: রিজভী

আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২২
0
এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী

শুধুমাত্র বিএনপি’র সভা-সমাবেশ ঠেকাতেই গতকাল জারি করা বিধি নিষেধ দেওয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েই জনমনে প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও দলটির মুখপাত্র অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারী) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠেছে এবং ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সভা সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেছে মানুষ। এতেই আতঙ্কিত সরকার। যতোই চক্রান্তের জাল ফেলা হউক না কেন, এই অবৈধ সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না। মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে, বিধি নিষেধ নিয়ে, চক্রান্ত করে জনগণকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।

সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে যে লক্ষ-লক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়েছিল, এখন সেই মামলাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে সাজা দেওয়া শুরু করেছে।

অবৈধ পথে ক্ষমতায় থাকা এবং ভোটারবিহীনভাবে আগামী নির্বাচন নির্বিঘেœ অনুষ্ঠিত করতেই একের পর এক সাজা দেওয়া হচ্ছে। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে নির্দোষ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেওয়া রাষ্ট্রের নাৎসিবাদী চেহারা বিপদজনকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভাষানটেক থানায় ইতোপূর্বে দায়ের করা মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলায় বিষ্ফোরকদ্রব্য আইনে গতকাল বিএনপির ১০ জন নেতাকর্মীকে ৫ বছর কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যেই মামলায় তাদেরকে সাজা দেওয়া হয়েছে ঐ স্থানে এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। যদি আইন আদালত শেখ হাসিনার কব্জায় না থাকতো তাহলে এই মিথ্যা মামলায় সকলেই খালাস পেত। শেখ হাসিনার নির্দেশেই এসব শুরু হয়েছে। পুলিশ বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে বানোয়াট মামলা দায়ের করেছিলো।

এই মূহুর্তে উক্ত মামলায় সাজা দেওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত, দেশে-বিদেশে সরকারের অপকর্ম ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হয়ে পড়ায় জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এই সাজা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততোদিন বিরোধী দল, বিরোধী মত অবৈধ সরকারের নানাবিধ নিপীড়নের শিকার হতে থাকবে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই বিএনপি নেতাকর্মীদের এই সাজা দেওয়া। নির্বাচনের সময় পর্যন্ত এই গণধিকৃত সরকার কতো যে অমানবিক আচরণ করবে এটি তার একটি অন্যতম নমুনা। বর্তমানে নির্বাচন একটি দলের জিম্মার মধ্যে রয়েছে। ভোটাররা নয়, আওয়ামী সন্ত্রাসীরাই নির্বাচনী উৎসবে মেতে থাকে। কারণ একতরফা নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা থাকা পাকাপোক্ত হবে এবং তাদের সাথে যুক্ত লোকরা আরো বেশি জালিয়াতি ও দূর্নীতি করে টাকা পাচার করতে সক্ষম হবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, তাতেও তাদের খায়েশ পুরো হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছায়। আওয়ামী সরকার ফলাফল ধরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। তারা সেই ফলাফলই ঘোষণা করে। আওয়ামী প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পঙ্কিল কালিমা লিপ্তের এক ঐতিহাসিক মাইলফলকে পরিণত করেছে।

আমি সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী যথাক্রমে সুমন চন্দ্র, সোহেল, কাউছার, আব্দুর রহমান, লিটন, মোঃ জসিম, আমিনুল ইসলাম, মোঃ জুয়েল, মোঃ শহীদ, আলমগীরের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সাজা বাতিলের জোর দাবী জানাচ্ছি। এবং শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র ও মানবতা বিরোধীদল নিধনের চক্রান্তমূলক এই নোংরা খেলা থেকে সরে আসার জোর দাবী জানাচ্ছি।

এছাড়াও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে গতকাল রাতে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গ্রেফতার প্রতিহিংসামূলক, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র চলমান গণ-আন্দোলনকে ঠেকাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।