বিদায়ী বছরে ৮১৮ শিশু ধর্ষণের শিকার

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
0

গত বছর করোনা মহামারির কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং শিশুরা ঘরবন্দী থাকলেও এ সময় শিশু নির্যাতনের ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১৮ শিশু। এ ছাড়া ৯৪ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এক ভার্চুয়াল সভায় আজ মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। দেশের আটটি জাতীয় দৈনিক থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। এমজেএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৪টি মেয়েশিশুর। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০ শিশু। ২০২০ সালে শিশু ধর্ষণের এই সংখ্যা ছিল ৬২৬।

এমজেএফ বলছে, ২০২১ সালে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিশুর প্রতি নেতিবাচকতা বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছে ৭৮ শিশু। এর মধ্যে ৫৭টি ছেলে ও ২১টি মেয়েশিশু। ২০২০ সালে আত্মহত্যাকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৪। ২০২১ সালে বিভিন্ন কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৮৩ শিশু এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৫টিকে। ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয়েছিল ১৪৫ শিশু।

এমজেএফ বলছে, গত বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৭০টি শিশু। ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬৫। গত বছর নিখোঁজ হয়েছে ৩৮ শিশু। ২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২২ শিশু।

তবে ২০২০-এর চেয়ে ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৯ শিশু। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৫৮।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, অবনতিশীল পরিস্থিতি থেকে এটি সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের শিশুরা তাদের ঘরেই নিরাপদ নয়। অধিকাংশ শিশু ধর্ষণের ঘটনা পারিবারিক পরিবেশে পরিচিতদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে। পরিবারের পরিচিত লোকদের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছাড়াও প্রতিবেশীদের হাতে শিশুদের একটি বড় অংশ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। মূলত কম বয়সী শিশুরাই ধর্ষণের শিকার বেশি হচ্ছে।

এমজেএফের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে ৩৮ জন গৃহকর্মী ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন নিহত, ২৪ জন আহত ও দুজন আত্মহত্যা করেছে। নিহত গৃহকর্মীদের মধ্যে চারজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আটজনের মৃত্যু ‘রহস্যজনক’।

সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, এমজেএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায় নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণ ও শিশুকে যৌন হয়রানি বন্ধ করার জন্য সবাইকে এখনই জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। না হলে এই হার বাড়তেই থাকবে। তিনি শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও বেশি সহৃদয় হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহিবুজ্জামান। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে অপরাধ প্রবণতার ধারণামাত্র। এটা প্রকৃত চিত্র নয়। তিনি জানান, ১৫টি পত্রিকা থেকে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় তথ্য গ্রহণ করে। ‘১০৯’ হটলাইন নম্বরে প্রতিদিন অসংখ্য ফোন আসে। সেখান থেকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও অপরাধের একটা ডেটাবেইস তৈরি করে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের ইতিবাচক সংবাদ তুলে ধরার আহ্বান জানান।