“বিদ্যুৎ সংকটের জন্য ভুল নীতি ও দুর্নীতি দায়ী”

আপডেট: জুলাই ৩১, ২০২২
0


৮-৯ বছর পর দেশ মারাত্মক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম নুরুল ইসলাম, দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে সরকারের উচিত জ্বালানি নীতি গ্রহণ করা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ও গ্যাস ব্যবহার করা। এ জন্য অবিলম্বে দেশের কয়লা ও গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যবহার করতে হবে।
সরকার পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে যা কম ব্যয়বহুল হবে। দ্রুত এ পদক্ষেপ না নিলে আট-নয় বছর পর দেশ মারাত্মক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন নূরুল ইসলাম।
রোববার (৩১ জুলাই) রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে ‘‘বাংলাদেশের জ¦ালানী নিরাপত্তা ও জ¦ালানি সংকট’’ বিষয়ক মুল আলোচকের বক্তব্যে জ¦ালানী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সভাপত্বিতে ও জাহাঙ্গীর আালম মিন্টুর পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে আর্ন্তজাতিক জ¦ালানী পরমর্শক প্রকৌশলী খন্দকার সালেখ সুফী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, ওয়াকার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর বহ্নিশিখা জামালী।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রদানমন্ত্রীর হুশ হয়েছে। তিনি গত এক মাস যাবৎ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলছেন। অপচয় বন্ধ করবেন ভালো কথা; সেটা তো আপনার ঘর থেকে আগে শুরু হবে। আপনি যে আমাদের জানিয়েছেন, এরআগে আপনার সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান, প্রেসিডেন্ট সাহেবের বাসস্থান, অকারণ পুলিশের চলাফেরা এসব কাজে বর্তমান সাশ্রয়ের আগের দিন পর্যন্ত কত বিদ্যুৎ ব্যয় হয়েছে। আগে সেই ব্যায়ের সংখ্যাটা জানান। তারপর বলেন, আপনার বাড়িতে একটা এয়ারকন্ডিশন (এসি) ছাড়া বাকি গুলো বন্ধ করেছেন কিনা? প্রেসিডেন্ট সাহেবের বাসস্থানে একটা রেখে বাকি গুলো বন্ধ করেছেন কিনা? ফ্যানের বাতাসে সন্তুষ্ট আছেন কিনা? এ তথ্য গুলো আগে দেন।

তিনি বলেন, আমদের সরকার তথ্যে বিশ^াস করে না। সম্প্রতি বাংলাদেশে যে বাজেট পাশ হয়েছে, এখানে পরিসংখ্যান বিভাগের ৮০ শতাংশ বরাদ্দ কেটে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে আমাদের সাড়ে সতের কোটি থেকে আঠার কোটি লোক সাড়ে ষোল কোটি হয়ে গেলো। কারণ সরকার তো জানে এসব তথ্য ঘরে বসে তৈরি হয়। কাজেই তিনি বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের বরাদ্ধ কমেছে, কারণ তারা জানে মুখে যতো কথাই বলি, বিচার বিভাগ তো মেরুদণ্ড বিহীন। একই সঙ্গে প্রবাসীদের বরাদ্ধ কমেছে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে যদি জ¦ালানি সাশয় করতে চান তাহলে সপ্তাহে অন্তত্য একদিন সকল প্রাইভেটকার বন্ধ করেন, শুধু এম্বোলেন্স, পুলিশের নুন্মতম গাড়ি আর হাসপাতলের চিকিৎসকদের গাড়ি চলবে। বাকি সবাই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি সত্যকে গ্রহণ করতে শিখেন। তা না হলে বিপদ অতি নিকটে। সম্ভাবত আর সময় নাই।

খালেদা জিয়ার ছাড়া আন্দোলন সফল হবে না
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে না আনলে আন্দোলন গড়ে উঠবে না এবং এ বেল পাওয়া জামিন পাওয়া তার অধিকার। কারন খুনের আসামি জামিন নিয়েছে। উনি পাবেন না এটি হবে না। এ ব্যপারে বিএনপির ব্যর্থতা আছে। সরকারের চক্রান্ত আছে। বিচার বিভাগের বিচারহীনতা আছে।
জনগণের বাকি সরকারের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়ার
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জে এস ডি সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, এ সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে। এখন জনগণের বাকি সরকারের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়ার।
তিনি বলেন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি গোষ্ঠীতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণ জাগরণের মাধমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে, সরকারকে বিদায় করে সাধারণ রাজনৈতিক দলের সম্বনয়ে জাতীয় সরকার গঠণ করতে পারলে দেশকে বাচাঁনো সম্ভব হবে।
সরকার ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে পারবে না
দেশে বিদ্যুৎ সংকট প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার এই বিদ্যুৎ সংকট সরকার বুঝে শুনে করেছে। তাই এরা ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে পারবে না। যদিও তারা বলছে আগামী অক্টোবর নভেম্বর থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল যখন করা হচ্ছিল তখন এ বিষয়ে প্রচুর কথাবার্তা বলা হয়েছে। বলা, হয়েছে এক মাসের মধ্যে প্রডাকশন দিতে পারবেন। তিন বছরের বেশি স্থায়ীত্ব থাকবে না। এখন ১৬ বছর হয়ে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছেন ১৭ হাজার কোটি টাকা। এটাকে আপনি বলবেন এদের ভ্রান্তনীতি? আমি বলি এ সরকার একটি অরিগাল সরকার। এরা যেকোনোভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে নিয়ে লুটপাটে ব্যস্ত আছে। নইলে এখন পর্যন্ত এটা তার কুইক রেন্টাল এর বিকল্প তৈরি করতে পারেনি কেনো?

শর্ত পূরণ করে আইএমএফের লোন পাওয়া দুষ্কর
গণঅধিকার পরিষেদের আহ্বায়ক ও সাবেক আইএমএফ কর্তকর্তা অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, আইএমএফ কোন দেশকে টাকা দিলে ঐ দেশ সেই টাকা ফেরত দিতে পারবো কিনা তা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখে, ঐ দেশের রিজার্ভ এর সঠিক হিসেব চায়, কারণ আইএমএফের টাকাটা মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টাকা। তাই তারা সহজে কাউকে লোন দিতে চায় না, বর্তমান সরকারের রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের যথেষ্ট সন্দেহ আছে বলেন মন্তব্য করে সাবেক অর্থমন্ত্রীর ছেলে রেজা কিবরিয়া।
তিনি বলেন,‘আইএমএফ চাইলেই কোন দেশকে লোন দিতে পারে না, লোন চেয়ে প্রস্তাব করার এক মাস পর প্রথম বোর্ড মিটিং বসে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সকল শর্ত করলেও টাকা পেতে ৫-৬ মাস লাগে, তারপর টাকা দেয় কিস্তিতে কিস্তিতে। প্রথম কয়েক কিস্তির টাকায় দুর্নীতি করলে আইএমএফ সেক্ষেত্রে অনেক সময় টাকা বন্ধ করে দেয়, টাকা দেয়া কমিয়ে দেয়, সরকার উপর বিশ্বাস কম থাকলে টাকাও কম দেয়।’
রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমানে দেশে বিদুৎ- জ্বালানি সংকটসহ সকল সংকটের মূল কারণ এই আওয়ামীলীগ সরকারের দুর্নীতি, দুর্নীতি এবং দুর্নীতি। বর্তমানে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ১২ শতাংশের উপরে,সরকার তা গোপন করছে। দিনদিন এ মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে, বাংলাদেশ আস্তে আস্তে শ্রীলংকার পথে যাচ্ছে ।
তিনি আরও বলেন, এই নিজেও ভাবিনি এতো তাড়াতাড়ি রিজার্ভ কমে যাবে, এতো তাড়াতাড়ি আইএমএফের কাছে লোন চাইবে। আইএমএফের টাকা নেওয়া খুব ভালো কিছু না, কারণ আইএমএফ তখনই লোন দিতে চায় যখন কোন দেশ একদম চলতে পারে, ঐ দেশের আর কোন উপায় থাকে না। কিন্তু সরকার বর্তমানে এমন হয়েছে যে আইএমএফের নিতেই হচ্ছে, কারণ তার বিকল্প আর কোন রাস্তাওনেই কিন্তু সরকারের রিজার্ভ সংকটে পড়ে গেছে, লোন ছাড়া উপায়ও নেই।

চলমান বিদুৎ সংকটের ব্যাপারে রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, রুপপুর রাশিয়ার পাওয়ার প্যান্টের বিরুদ্ধে, কারণ এগুলো খুবই ব্যয় বহুল। আমার সুযোগ থাকলে ভারতীয় কোম্পানিকে আমি কখনো কাজ দিতাম না, কারণ তারাই ইউরোপ-আমেরিকার কোম্পানির মাধ্যমে কাজ করে নিজেদের দেশে কোয়ালিটি নিশিত করে, অন্য দেশে কিভাবে তারা ভালো কোয়ালিটি দিবে।
এ সরকারের দুর্নীতিই এই সংকটের মূল কারণ, সরকারের দুর্নীতি থেকেই একটার পর একটা সংকট আসছে। এ সরকারের টাইম বোম রেখে যাচ্ছে পরবর্তী সরকারের জন্য, লোনের বোঝা দেশের উন্নয়নের জন্য নয়,সরকারের দুর্নীতির কারণে সেটা জনগণের জন্য উপর বোঝা- ভোগান্তি হচ্ছে, এই আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ছাড়া এই সংকটের সমাধান হবে না- বলেও মন্তব্য অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া।

জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও কমিশন গঠন প্রয়োজন
বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার এতোদিন বলেছেন, বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন। আসলে তারা লোডসেডিংটা ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন। ইজি বাইকের সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে যুক্ত, যেখানে দেড় কোটি মানুষ জীবন-জীবিকা জড়িত। সেটি বন্ধ না করে আগে মন্ত্রীরা-সচিবদেও গাড়ি বিলাসিতা বন্ধ করেন। পর থেকে নিচ পর্যন্ত যারা ৩ টা ৪ টা গাড়ি ব্যবহার করেন। প্রথমে উচিত হবে এদের কেউ একটার বেশি গাড়ি ব্যবহার করতে না দেওয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের টেকসই জ¦ালানী নীতি কি হবে এখনো সে ব্যপারে কোনো উদ্যোগ নাই। পরিকল্পনা নাই। আমরা মনে করি এটা আত্মঘাতি কৌশলনীতি। আমদানি নির্ভর জ¦ালানি নীতি সরকার এখন অনুসরন করছে। আমি মনে করি এ জ¦ালানি নীতি পরিবর্তন করা দরকার।

প্রথম হলো জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও কমিশন গঠন প্রয়োজন।
বিপুল দুর্নীতির একটা সম্মিলিত ফল
গণ সংগহতি আন্দালনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিএনপি সরকার খাম্ভা বানিয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ দেয়নি। আর আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুতের কারখানা বানিয়েছে কিন্তু জ¦ালানি নাই। আসলে বিদ্যুৎ সংকট কাজে লাগিয়ে কিভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করা যায়, কিভাবে কত দ্রুত পকেটে টাকা ঢুকানো যায় এটা পরিকল্পনায় ছিলো সেটা অন্ত্যত ১৩ বছর বছর পর এসে পরিষ্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যে বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে পরেছি এটা ভুল নীতি পরিকল্পনাহীন এবং বিপুল দুর্নীতির একটা সম্মিলিত ফল। একই সঙ্গে তাদের উন্নয়নের যে ফানুস সেটা আমাদের সামনে হাজির হয়েছে।

কুইক রেন্টাল কোম্পানি গুলোর মালিক সরকারের লোক
গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও সাবেক ডাকসু ভিপি নূরুল হক নুর বলেন, নুরুল হক নুর বলেন, জ্বালানি সংকট যদি আমরা আলোচনা না করি এই সংকট সমাধান হবে না। জ্বালানির সাথে দুর্নীতি সরাসরি জড়িত, সরকারের লোকদের কয়েকটি কোম্পানি এই দুর্নীতির সাথে জড়িত।

বাংলাদেশে কুইক রেন্টাল নামের যে কোম্পানি গুলো রয়েছে এর মালিকা কারা সেটা দেখেন, দেখবেন সরকারি দলের এম্পিরা রয়েছে। যারা সরকারকে নির্বাচন করার জন্য টাকা দেয়। বিভিন্ন কাজে যারা ফান্ডিং করে মূলত তারা।
সরকার ২০১২ সালে সমুদ্র বিজয়ের দাবি করলেও একটু গ্যাসও সমুদ্র থেকে উত্তোলন করতে পারে নি, ইচ্ছা করেই উত্তোলন করেনি কমিশন ও লুটপাট করার জন্য। এই সরকার একনায়কতন্ত্র মাধ্যমে এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই সরাসরি গুলি চালাচ্ছে, রাস্তায় দাড়াতেই দিচ্ছে না, এই দেশটা বাচাঁতে হলে সকল রাজনৈতিক দল কে নিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।