ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রায় বারো বছর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এক গ্রাহককে বৈদ্যুতিক যন্ত্র নষ্টের অভিযোগ এনে মূল্য পরিশোধের নোটিশ পাঠিয়েছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিস। নোটিশে আরও বলা হয়েছে নষ্ট যন্ত্রের মূল্য পরিশোধ না করলে জামানত থেকে মূল্য কেটে নেয়া হবে।
ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ওই নোটিশে জানা গেছে, উপজেলার ইউনিয়নের দেওয়ানের খামার গ্রামের মেসার্স অভি চাউল কলের মালিক মহাদেব চন্দ্র সাহার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যূৎ অফিস তার নামের ৩১৬-১০৩০ হিসাব নম্বরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল। সেই সাথে সংযোগের বৈদ্যুতিক মিটার, সকেট, সংযোগ তার (সার্ভিস ড্রপ সংক্ষেপে এসডি) সহ ৩টি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (কারেন্ট ট্রান্সফরমার সংক্ষেপে সিটি) খুলে নেয়া হয়েছিল। অডিটের সময় ৩টি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সিটি) নষ্ট চিহ্নিত হয়। যার মূল্য ধরা হয় প্রতিটির দাম ৫ হাজার ২০৬ টাকা করে সর্বমোট ১৫ হাজার ৬১৮ টাকা।
ওই চাউল কল মালিক মহাদেব চন্দ্র সাহা এ বিষয়ে বলেন, বিদ্যুৎ অফিস প্রায় বারো বছর আগে চাউল কলের বৈদ্যুতিক মিটার, সকেট, সংযোগ তার (এসডি) ও ৩টি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সিটি) খুলে নিয়ে গিয়েছিল। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে ভূরুঙ্গামারী বিদ্যুৎ অফিস এক যুগ আগে খুলে নেয়া ওই ৩টি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সিটি) নষ্টের অভিযোগ এনে মূল্য বাবদ ১৫ হাজার ৬১৮ টাকা পরিশোধের নোটিশ পাঠিয়েছে। মূল্য পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার সময় জমা দেয়া ফেরতযোগ্য জামানত থেকে তারা ওই ৩টি যন্ত্রের মূল্য কেটে নেয়া হবে বলে জানানো হয়। তিনি দাবি করেন বিদ্যুৎ অফিস যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সিটি) খুলে নিয়ে গিয়েছিল তখন সেগুলো সচল ছিল।
যন্ত্রগুলো দীর্ঘ দিন বিদ্যুৎ অফিসে ফেলে রাখার কারণেই নষ্ট হয়েছে অথবা কেউ সুকৌশলে সেগুলো সরিয়ে সেখানে নষ্ট যন্ত্র রেখে দিয়েছে। যন্ত্রগুলো নষ্টের জন্য আমি কোনোভাবেই দায়ী নই। বিদ্যুৎ অফিস অন্যায় ভাবে আমার ফেরতযোগ্য জামানত কেটে নিতে চাচ্ছে। মহাদেব চন্দ্র সাহা আরো বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের অডিট কি একযুগ পর পর হয়? যদি তা না হয় তবে আগের অডিটগুলোতে কেন যন্ত্র নষ্টের বিষয়টি উল্লেখ করা হলো না? নোটিশে অডিটের বিষয় উল্লেখ করা হলেও অডিটের তারিখ বাদ দেয়া হলো কেন? যন্ত্র নষ্টের বিষয়টি গ্রাহক হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের এভাবেই হয়রানি করছেন। গ্রাহক হয়রানি বন্ধে অফিসটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত অপসারণ করা জরুরি।
ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কাওসার আলী বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরই অডিট কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে অনেক সময় পাঁচ থেকে ছয় বছর অন্তর অন্তরও অডিট সম্পন্ন হয়ে থাকে। ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিসে বিগত ২০১৮ সালে অডিট সম্পন্ন হয়। সেই অডিটে মেসার্স অভি চাউল কলের সিটি নষ্টের বিষয়টি ধরা পরে। তাই নষ্ট সিটির মূল্য পরিশোধ করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যখন সিটি খুলে আনা হয়েছিল তখন যারা খুলে এনেছেন তার হয়তো পরিক্ষা ছাড়াই খুলে এনেছিলেন। প্রতি বছর অডিট হলে পূর্বের অডিটে সিটি নষ্টের বিষয় ধরা পড়লো না কেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিস আগে নাগেশ্বরী জোনাল অফিসের আওতায় ছিল। এছাড়া বিষয়টি আমার দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগের ঘটনা তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমিচীন নয়।’
####
আমিনুর রহমান বাবু
