বিপদ যতটা না বাংলাদেশের তার চেয়ে বেশি কিন্তু ভারতের

আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২৩
0

ডা . জাকারিয়া চৌধুরী:

৫ই মে ২০২০ সাল।
ভারত ও চীনের যৌথ সীমান্ত অঞ্চল লাদাখের পেংগং লেক তীরবর্তী ভারত চায়না সীমান্ত বরাবর দুই দেশের সেনারা এক মরণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। এতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়নি ঠিক কিন্তু ভারতের ২২ জন এবং চায়নার অজানা সংখ্যক সেনা নিহত হয় বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়। ভারত এবং চায়নার সীমান্ত সংকট, বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা এবং সামরিক ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড় বহু পুরনো। সামরিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভারত কখনোই চায়নার ধারে কাছেও ঘেষতে পারেনি। কিন্তু অখন্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর আজকের ভারত তাদের খায়েস ধরে রেখেছে বামনের চাঁদ ছুয়ে দেখবার মতো করেই । ফলে যুগ যুগ ধরে এর মাসুল দিতে হচ্ছে ভারতের জনগণকে। ৫ই মে ২০২০ সালে যে খন্ড যুদ্ধটির শুরু হয় সেটি চলে ২০ই জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত। সময়ের হিসেবে যা ৮ মাস দুই সপ্তাহ ১ দিন। আসুন ভারত চায়নার এ অসম প্রতিযোগিতার কিছু খন্ড চিত্র আমরা আলোচনায় আনি।

উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে এ যুদ্ধে ভারত কাগজে-কলমে ২২ জন সেনা হারালেও আহত এবং নিখোঁজ হয় অজ্ঞাত সংখ্যক। ভারত নিজ ভূখণ্ড হারায় কতটুকু জানেন ? দুই হাজার স্কয়ার কিলোমিটার এলাকা।

এ বিষয়ে ভারত সরকার বিশ্ব দরবার কিংবা নিজ দেশে টু শব্দটি করার সাহসও পায়নি। গত ৮০০ বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা মুসলিমদের ভূমি কেড়ে নিয়ে মোদি সরকার এবং যোগী আদিত্যনাথ যদি মনে করেন, হারানো ভূমি উদ্ধার করছেন তাহলে এর উত্তরে আর কিছু বলার নেই। ভারত চায়না সীমান্ত শত্রুতা আজকের নয় কিংবা এক দুই যুগ আগেরও নয়, এ শত্রুতা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ভারত চায়না সীমান্ত সংঘাতও কিন্তু এক কিংবা দুইবারের নয়। ১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালেও সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এ দুই দেশ । ভারত উক্ত দুই সীমান্ত সংঘাতেও পরাজিত হয়। ১৯৬২ সালের মাত্র এক মাসের যুদ্ধে ভারত হারায় ১৩৮৩ জন সেনা, নিখোঁজ হয় ১৬৯৬ জন সেনা এবং আহত হয় হাজারের উপরে। চায়নার সেনাদের হাতে ভারতীয় সেনা বন্দি হয় আনুমানিক ৪০০০ এবং ভারত তাদের অরুণাচল প্রদেশে ভূমি হারায় প্রায় ৩২২৫ স্কয়ার কিলোমিটার যা বর্তমানে আকসাই চীন নামে পরিচিত। বাকি রইল ৬৭ সালের যুদ্ধ। ৬৭ সালের যুদ্ধ আজকে আর আলোচনা করব না।

এতে দাদাদের ধুতি আরো খুলে পড়বে। যা বলছিলাম আর কি ! আমার মাথা থেকে যে একটা চিন্তা কখনোই যায় না তা হলো ভারত যা করে তা কি বুঝে করে নাকি না বুঝে করে !! জন্মের পর থেকে শুনে এসেছি ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম সহায়তাকারী দেশ। আবার জন্মের পর থেকে দেখে এসেছি এই ভারত-ই বাংলাদেশে শান্তি বাহিনী নামক একটি গেরিলা গ্রুপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ বিভাজনে লিপ্ত আছে । শান্তি বাহিনীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গোলা বারুদ সবকিছু সরবরাহ করেছে ভারত। এ কথাটি এখন আর গোপন কিছু নয়। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে বাংলাদেশের সেনা অফিসারদের হত্যার মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সাথে শত্রুতাকে প্রকাশ্য করেছে। আবার সেই শত্রুতার কফিনে তারা শেষ পেরেক মেরেছে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ইলেকশনের মধ্য দিয়ে। ফলে ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র এ এই কথাটা যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যাওয়া যাবে তা এদেশের মানুষের জন্য ততই মঙ্গল।

তারা আমাদের প্রতিবেশি আছে প্রতিবেশী থাকুক। তাদের সাথে শত্রুতা মিত্রতা কিংবা অতি মাখামাখির প্রয়োজন আমরা দেখি না।

পুরনো কোথায় ফিরে যাই, ভারত এখনো সরকারিভাবে স্বীকার করেনি যে, চীন ভারতের জমি দখল করে রেখেছে। বরং ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর ভারতের পিএম মোদি সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছিলেন, কেউ ভারতের জমি দখল করেনি এমনকি কোন ঘাটিও দখলদারদের হাতে নেই। মোদির বলা এ দু লাইন কথা শুনে সে সময় আমি বড্ড আমোদ পেয়েছিলাম। কেন পেয়েছিলাম ? চলুন সামান্য এনালাইসিস করি। আচ্ছা কেউ যদি জমি বা সেনাঘাটি দখল নাই করে থাকে তবে দখলদার শব্দটি আসবে কেন ? ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাইনা !! মোদির কথাটি অবশ্য এতটা বালখিল্য নয় হয়ত ! যাই হোক এসব ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়; এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে আমাদের সাজে না।

এরপরেও কিছু কথা চলে আসে যেগুলো বলতে হয, কিছু কথা বলা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমরা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামালেও তারা আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পলে পলে অনুপলে মাথা ঘামায়। তারা মুখে বলে একটা করে আরেকটা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মিস্টার অরিন্দম বাগচী বাংলাদেশ নিয়ে, বাংলাদেশের ইলেকশন নিয়ে কথা বলেছেন এক সপ্তাহ হয়নি। অথচ এর মধ্যেই কোথাকার না কোথাকার কোন লেখিকা না কলামিস্ট অগ্নিরাও ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় রীতিমতো আমেরিকা কে হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিলেন। তিনি যা বলতে চাইলেন তার সার কথা হলো – বাংলাদেশ ভারতের বগলে না থাকলে আমেরিকার বগলের গন্ধ দুনিয়ার সবাই টের পেয়ে যাবে’। এই অগ্নিরাও এর কথা যদি সত্য হয় তাহলে কিন্তু মন্দ হবে না !! সেক্ষেত্রে আমেরিকার জট আমেরিকাকে ছাড়াতে হবে ভারতের জট ভারতকে ছাড়াতে হবে। ভারতের এই কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড আজ নতুন কিছু নয় !! আমাদের মনে আছে ২০১৪ সালের ইলেকশনে সুজাতা সিং এর ভূমিকা, মিস্টার জয়ঙ্কর, মিস্টার অজিত দোভাল, চুলে তেল দিয়ে মাথায় সিঁথি ওয়ালা অরিন্দম বাগচীর ভূমিকাও আমরা দেখি। আমরা ভারতকে দেখি নেপাল, পাকিস্তান কিংবা চায়নার সীমান্তে কেমন ভেজা বিড়াল হয়ে থাকে।

অরুণাচল সীমান্তে হাজার কিলোমিটার বেদখল হওয়া জমি নিয়ে তারা একটু শব্দটি করেনা, স্বাধীন কাশ্মীর কিংবা সাবেক স্বাধীন মনিপুর রাজ্য, স্বাধীন সিকিম দখল করে রাখার মত কাজ কেবল ভারতীয়রাই করেছে। তাই ভারতীয় অপরাধের তালিকা কিন্তু ছোট নয়। ফলে ভারতকেই ঠিক করতে হবে তারা তাদের নিজস্ব সমস্যার সমাধান করবে নাকি বাংলাদেশে বগল চাটা অব্যাহত রাখবে !!! তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক রাখবে নাকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রাখবে !!! তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে পাশে থাকবে নাকি ইতিহাসের জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ নাকি নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক দেশ জনতা ডটকম
১৯/০৮/২০২৩