ব্যাটিং লজ্জায় বাংলাদেশ : মাত্র ৮৪ রানে অল আউট হয়েছে টাইগাররা

আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২১
0

এই ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে ছিল দুটি পরিবর্তন। একটি পরিবর্তন অবধারিতই ছিল। চোটে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া সাকিব আল হাসানের জায়গায় একাদশে ঢুকেন শামীম হোসেন। আরেকটি বদল ছিল বেশ চমক জাগানিয়া। একাদশে নেই মুস্তাফিজুর রহমান। সবুজের ছোঁয়া থাকা উইকেটেও তার বদলে নেওয়া হয় বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। অনুশীলনে পাওয়া চোট থেকে ফিট হয়ে উঠতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান।

আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচেও ব্যাটিং লজ্জা বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের ম্যাচে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮৪ রানে অল আউট হয়েছে টাইগাররা। এমন অল্প রান প্রোটিয়াদের জন্য তেমন কিছু না। তার মানে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বকাপ থেকে চূড়ান্ত বিদায়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। সেমির পথে এগিয়ে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার মাত্র ৮৫ রান।

বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সাকিবকে ছাড়া টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই দুর্দশার মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের মধ্যে হারায় তিন উইকেট। দলীয় রান তখন ২৪। ৩৪ রানে উইকেট পতন ৫টি। সব মিলিয়ে বিশ্রী শুরু বাংলাদেশের।

উইকেটে যথেষ্ট ঘাস থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিং আক্রমণের সূচনা করে বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজ। ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ব্যটিং অর্ডারে লিটন দাসকে মিডল অর্ডারে খেলানোর ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত ইনিংস ওপেন করেন তিনি। সঙ্গে যথারীতি মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

ব্যাট হাতে শুরুটা কিন্তু ভালো। আভাস দিচ্ছিল ভালো কিছুর। উইকেট না হারিয়ে ২২ রান তোলাটা ছিল সুখকর। কিন্তু এক ওভারে রাবাদা দুটি উইকেট নিলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে বিদায় নেন মোহাম্মদ নাঈম। রাবাদার লেংথ বল পুল করার চেষ্টা করেন নাঈম। তার প্রথম আগ্রাসী শট এটিই। সেটে ডেকে আনে পতন। ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় মিড উইকেটে রিজা হেনড্রিকসের কাছে। ১১ বলে ৯ রান করে আউট নাঈম।
পরের বলে আউট সৌম্য সরকার। যাকে বলে গোল্ডেন ডাক। রাবাদার বলে এলবিডব্লিউ। দুর্দান্ত এক ইয়র্কার ছিল রাবাদার। শেষ মুহূর্তে একটু সুইং করে বলটি ছোবল দেন সৌম্যর প্যাডে। আম্পায়ার যদিও আউট দেননি, বল আগে ব্যাটে লেগেছে মনে করে। তবে রিভিউ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখা যায়, বল আগে আঘাত করে প্যাডেই। ব্যাট তখনও কাছাকাছিই নেই। নিশানা নিয়ে তো সংশয়ই ছিল না, বল লাগত স্টাম্পেই। রানের খাতা খুলার আগেই সাজঘরে বা হাতি ওপেনার।

শুরুর দুর্দশা কাটাতে পারেননি মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। ষষ্ঠ ওভারে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহীম। তিন বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি। রাবাদার বলেই ক্যাচ দেন হেনড্রিকসের কাছে।

এতে সৌম্য-মুশফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড হয়ে গেছে। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউটের রেকর্ড এই দুজনেরই। এবার নিয়ে ১০ বার শূন্যতে ফিরলেন সৌম্য সরকার, ৮ বার মুশফিকুর রহিম।

মাহমুদউল্লাহ-আফিফ জুটিতে ভরসা ছিল। কিছু একটা করবেন তারা। তাতেও ভরাডুবি। অষ্টম ওভারে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কাগিসো রাবাদার পর এবার দৃশ্যপটে আনরিক নরকিয়া। তার বাউন্সের কোনো জবাব পেলেন না মাহমুদউল্লাহ। নরকিয়ার ১৪১ কিলোমিটার গতির বল লেংথ থেকে দারুণভাবে লাফিয়ে মাহমুদউল্লাহর গ্লাভসে ছোবল দিয়ে আশ্রয় নেয় স্লিপে মারক্রামের হাতে। ৯ বলে তিন রান করেন টাইগার ক্যাপ্টেন।

এরপর বাজে শটে বিপদ ডেকে আনেন এরপর আফিফ। তিনিও সৌম্যর মতো গোল্ডেন ডাকের শিকার। প্রিটোরিয়াসের বলে বোল্ড তিনি। ওভার তখন ৮.১। প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শট খেলার চেষ্টা করেন আফিফ। তাকে বেরিয়ে আসতে দেখেই পা তাক করে বল করেন প্রিটোরিয়াস। স্লগ করে লাইন মিস করেন আফিফ। বল তার প্যাডে লেগে আঘাত করে স্টাম্পে।

পেস সাফল্যের স্রোতে এবার সামিল প্রোটিয়া স্পিনও। তাবরাইজ শামসি নিজের ছাপ রাখেন প্রথম ওভারেই। টি-টোয়েন্টির এক নম্বর বোলার থামিয়ে দেন লিটন দাসের লড়াই। চায়নাম্যান শামসির বলে পা বাড়িয়ে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু বল হুট করে ডিপ করে টার্ন করে ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে লাগে প্যাডে। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। লিটন রক্ষা পাননি রিভিউ নিয়েও। বরং রিভিউ হারায় দল। ৩৬ বলে লিটনের রান ২৪। বাউন্ডার মাত্র একটি।

দলীয় ফিফটি করতেও ভীষণ লড়াই করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ১২.১ ওভারে পূর্ণ হয় পঞ্চাশ।

গপ্তম উইকেট জুটিতে উইকেটে টিকে থেকে রান তোলার চেষ্টা করেছেন মেহেদী হাসান ও বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তাতে খুব বেশি দুজন সফল, তা বলা যাবে না। তবে সবচেয়ে কম রানে অল আউট হওয়ার লজ্জা থেকে মুক্তি মিলেছে এই উইকেটে। দলীয় ৬৪ রানে পড়ে বাংলাদেশের সপ্তম উইকেট। বিশ্বকাপ অভিষেকে ২০ বলে ১১ রান করেন শামীম। শামসির বলে তিনি আউট হন মাহারাজের ক্যাচে।

শেষটাতে চমক আসেনি। দলীয় ৭৭ রানের মাথায় রান আউট পেসার তাসকিন আহমেদ। হিট উইকেটে গোল্ডেন ডাক নাসুম আহমেদ। তার আগে নরকিয়ার বলে কট এন্ড বোল্ড ইনিংস সর্বোচ্চ ২৭ রান করা মেহেদী হাসান। ১৮. ২ ওভারে মাত্র ৮৪ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন রাবাদা ও নরকিয়া। তাবারেজ শামসি দুটি ও পিটোরিয়াস পান এক উইকেটের দেখা।

বাংলাদেশ একাদশ : মোহাম্মদ নাঈম শেখ, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ।