ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে হজে যান, এসে দেখেন নিজের পদ- প্রতিষ্ঠান দুই’ই বেদখলে

আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২৩
0

নিজস্ব প্রতিবেদক , ধামরাই থেকে ফিরে

ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিতে নিজের নামে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন ডা: মো: আমিনুর রহমান। প্রতিষ্ঠানটির নাম দেয়া হয় ডা: মো: আমিনুর রহমান টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ। নিজের নামে কাউকে প্রতিষ্ঠান করতে হলে জমি দাতাকে ১৫ লাখ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। সেই টাকাও জমা দেন ডা: আমিনুর রহমান। প্রতিষ্ঠানটিতে ডা: আমিনুর রহমান এর স্ত্রী মমতাজ বেগম অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে বিধি অনুযায়ী অবসরে যান মমতাজ বেগম। কিন্তু তার অবসরের পর ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদ দখল নিয়ে লড়াই শুরু হয়। জাল সনদে ওই প্রতিষ্ঠানের সাচিবিক বিদ্যার প্রভাষক পদে চাকুরী নেওয়া মো: নজরুল ইসলাম স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বনে যান রাতারাতি। অভিযোগে জানা যায়, গত ২০০৪ সাল থেকে নজরুল ইসলাম কলেজের সাচিবিক বিদ্যার প্রভাষক পদে চাকুরি নিলেও তার সাচিবিক বিদ্যার সনদটি জাল প্রমাণিত হয়। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের গেজেট অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ২ বছরের ডিপ্লোমা থাকা বাধ্যতামূলক হলেও নজরুল ইসলাম রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে ডিপ্লোমার জাল সনদ তৈরি করেছেন।
তিনি নিজেকে বৈধ প্রমাণ করতে গত ২০১৫ সালে বোর্ডের অনুমোদনহীন জাল সনদ উপস্থাপন করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দখলে এই অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমসহ কয়েক জনের নামে অর্থ তসরুপের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি মামলাও করেন। এমনকি জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ড: আমিনুর রহমানেরও নাম পাল্টে ফেলার চেষ্টা করেন। এমন পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থবির অবস্থা তৈরী হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও লুটপাট হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নজরুলের সহযোগিতায়।নজরুল ইসলাম নিজেই কাগজপত্র ও মালামাল গোপন করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে সাবেক অধ্যক্ষ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দাখিল করে। যা পরবর্তীতে হাইকোট শুনানীতে ও দুদকের অনুসন্ধানে মিথ্যা প্রামাণিত হয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নাম ডা. মো. আমিনুর রহমান টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের পরিবর্তে রঘুনাথপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ করার চেষ্টা চালান। কিন্তু হাইকোর্টের রায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ তার বিপক্ষে থাকায় তা অমান্য করে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে রঘুনাথপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের নামে রশিদ ছাপিয়ে টাকা উত্তোলন ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যয় করছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। দীর্ঘ দিনযাবত কলেজের কমিটি না থাকার কারণে এর কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ে। তাই নতুন কমিটি করার ক্ষেত্রে নজরুল ইসলাম ও ইউএনও সম্মিলিতভাবে কমিটি করা হবে বলে জানালেও কমিটি গঠন না করেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় শিক্ষক, কর্মচারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে। অনেকেই বলছেন চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভিন্ন মহলকে অর্থ দিয়ে নিজের পক্ষে নিয়েছেন। এর ফলে অভ্যন্তরীন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের জালিয়াতির বিষয়টি নিয়েও কোন তদন্ত বা অণুসন্ধান করা হচ্ছে না। বরং স্থানীয় কতিপয় প্রভাশালীর পরোক্ষ সহযোগিতায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ মিলেছে।