`মনে হয় এদেশে কোনো জীবিত প্রানী নেই’

আপডেট: অক্টোবর ১, ২০২৩
0

ডা .জাকারিয়া চৌধুরী

দেশ ও জনতাঃ সেকাল-একাল

বাংলাদেশকে আমার চোখে বরাবরই অদ্ভুত মানুষে ভরা একটা দেশ মনে হয়। মনে হয়, এদেশে কোনো জীবিত প্রানী নেই। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে যেন ১৬ কোটি মানুষ-ই মৃত। এরা চলে জম্বি’র মত। কথা নেই, বার্তা নেই, অভাব নেই, অনুযোগ নেই, মানবীয় কোনো বৈশিষ্ট্যই যেন এদের মধ্যে অবশিষ্ট বলে কিছু নেই। এরা না খেয়ে মরে যাবে, বিনাবিচারে কিংবা অবিচারে জর্জরিত হয়ে পরে থাকবে যেখানে সেখানে তবুও কোনো শব্দ যেন এদের মুখ চিড়ে বের হয় না। খুব অল্প কিছু মানুষ দেশটার জন্য পথে প্রান্তরে মাঠে ঘাটে যুদ্ধ করে বেড়াচ্ছে। অথচ নিশ্চুপ থাকা এইসব লোকেদের যেনো কোনো ভাবান্তর নেই। গতকাল দেখলাম পত্রিকায় এসছে বিশ্বের সবচে গতিহীন শহর হল ঢাকা। এ নিয়েও এদেশের আম জনতা বাদ থাকুক যারা ট্যাক্স পে করে তাদের মধ্যেও কেউ কথা বলে না। এদেশের মানুষ প্রতিবাদ তো দূর কি বাত , কথা বলাও যেন ভুলে বসে আছে। এমন নন রেসিং স্ট্যাটকে আমি ধিক্কার জানাই। এদেশের মানুষ এভাবে বোবা হয়ে থাকলে এ দেশ কখন কবে আবার আগের স্বাধীনতা ফিরে পাবে আমি জানিনা। জগদ্দল পাথর হয়ে বুকের উপর চেপে বসে আছে বিশ্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচার অথচ এদের কোনো বিকার নেই।

আবার এদেশে প্রচুর মানুষ পাওয়া যায়, যাদের নিজের সম্পর্কে নিজস্ব কোন সেন্স, মুল্যায়ন, ধারনা, কিছু নেই। কিচ্ছু নেই। টিন এজের শেষের দিকে, এদেরকে সর্বপ্রথম যদি লীগের ছেলেরা পিক করে, এরা আমৃত্যু লীগ থাকে। লীগের হয়ে যদি দেশের সর্বনাশও করতে হয় ; করে নির্দ্বিধায়। আবার এরাই যদি একই বয়সের আশ পাশে থাকা অবস্থায় শিবিরের জালে ধরা পরে তবে এরা-ই শিবির হয়ে যায়। নিজে কেমন কিংবা কি চিন্তা ধারন করে, তার নিজস্ব আদর্শ আসলে কি তা তারা জানে না। এরা জানে না, এদের আসলেই মৌলিক কোনো আদর্শ আসলেই আছে কি না ! এরা দলবদ্ধ হয়ে চলে, নিজ নিজ দলের সাথে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। একা চলতে গেলেই হীনমন্যতায় ভুগে। সমাজ সংসারেও এরা সাহসী মানুষের আচরন ভুলে বসে থাকে। এরা পাবলিক সমাজ এড়িয়ে চলে কিন্তু নিজেরা সমমনা নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী একটা বন্ডিং সমাজ তৈরী করে রাখে মুল সমাজের মধ্যে। যেন একটা বড় সমাজে আরেকটা ছোটো সমাজের প্যারালাল অবস্থান। নিজেরা নিজেদের জন্যে একের লাঠি দশের বোঝা হয়ে কাজ করে। তাদের কথা শুনতে আমার বেশ লাগে !! মানুষ হয়েও মানুষের সাথে এরা নেই, মানুষের রুপ ধরা জানোয়ারও যদি হত এরা তবে তো জানোয়ারদের সাথেই থাকতো, তাই না ? না, তারা মানুষের সমাজে থাকবে, খাবে, চলবে ফিরবে কিন্তু মানুষের কাছ থেকে, সমাজের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে। মানুষের মানবীয় সব গুনাবলী যেন এদের মধ্য থেকে সর্ব উপায়ে লোপ পেয়েছে। স্বার্থপর এই দলটার পুরো জীবন সামজিক, আর্থিক সামঞ্জস্য এবং সৌন্দর্যে ভরা । এরা বাচে নিজের জন্যে, খায় নিজে, চলে একা !! যারা সামান্য কথাও বলতে জানে তারা নিজেদের মধ্যেই কথাবার্তা, লেনদেন, আদান প্রদান সব কিছু সীমাবদ্ধ রাখে। স্বাভাবিক সামাজিক মানুষের কোনো অংশের সাথেই এদের কোনো ইন্টারএ্যাকশন নেই। এদেরই কেউ কেউ আবার চুপচাপ, ধার্মিক, সমাজে উচ্চ প্রশংসিত।

এবার চলুন এদের উলটা পিঠটা দেখাই ! এরা যে যা কিছুই করুক না কেন, প্রত্যেকেই দৌড়ায় স্বার্থের জন্য, অর্থের জন্য, নারীর জন্য কিংবা অন্যের জমি গ্রাস করার আশায়। অন্যের নারী কিংবা জমির জন্য একেবারে বিনা কারনেও মানুষ খুন করে ফেলতে পারে এরা। অন্য যে কারো উন্নতি দেখলে এরা অসুস্থ হয়ে পরে। বিশ্বাস করুন আমি ঠিকঠাক মত কথা বলছি। এদের অপ্রকাশ্য ক্রাইম রেকর্ড জমিন থেকে আসমান সমান। তা স্বত্ত্বেও তাদের মনে ভয় পাওয়া আরেকটা মানুষ বাস করে। ফলে এরা একা থাকতে, চলতে, ফিরতে কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকে। সেই ভয় তারা যত-ই গোপন করুক না কেন, কারো না কারো চোখে তা ধরা দেবেই। কেউ না কেউ সেটা দেখবেই। আর সেটা এক সময় দেখা যায় বলেই তাদের চেহারাটাও সমাজে একদিন না একদিন ঠিকই ভেসে উঠে। এদের মুল আতংক হল, ভেতরের মানুষটাকে কেউ দেখে ফেলে কিনা ! তাদের ভয় মুলত সেখানেই। এরা জানে, এদের মাথায় একটা খুনী আছে। এদের কেউ যদি পুরো জীবনে খুন নাও করে থাকে তবু এরা একজন খুনীর মত-ই মানসিক যাতনায় ভুগে। তারা কিছু একটা করে দেখাতে মরিয়া হয়ে থাকে। ২৪/৭ এরা প্রস্তুত থাকে অন্তত মানসিকভাবে। এজন্য লীগের কর্মসুচীগুলো খেয়াল করলে দেখবেন কত হিংস্ত্র হয়। এরা চায় এরা থাকবে, আর কেউই থাকবে না। অন্যদিকে, আমরা আন্দোলন করি মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যে। আরে ভাই, তারা যেখানে আমাদের বেচে থাকাটাকেই মেনে নিতে পারেনা সেখানে মত প্রকাশ, মদ প্রকাশ্যে তাতে কি এসে যায় !!?

মানুষের যদি মানুষ খাওয়ার রেয়াজ থাকত আমার ধারনা কবেই বাংলাদেশ বিএনপি শুন্য হয়ে যেত। আচ্ছা দেশটা যদি বিএনপি শুন্য হয়ে যেতো তবে কি হত ভেবে দেখেছেন কখনো ? লীগ জানে তারাই জামাতের উলটা পিঠ। চ্যালেঞ্জ আসলে জামাতের তরফ থেকেই আগে আসবে। এরপর আসবে ইসলামিক দলগুলো থেকে। সেক্ষেত্রে তারা সর্ব প্রথমে জামাতকে খেতে শুরু করত। জামাতও যেখানে শক্ত সেখানে জামাত লীগের লোকদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলত। ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও রাজাকা্রের তালিকায় লীগ জামাত উভয়েই ছিল। এজন্য যুদ্ধের প্রথম চল্লিশ বছরে লীগ জামাতকে খেতে পারেনি। তখন পর্যন্ত সবাই সবার আমলনামা জানতো !! তারপরেও কিন্তু লীগ তাদের বাসনা ত্যাগ করেনি। তাদের শক্তি ও অর্থের উৎস ছিল এবং আছে অফুরান। লীগ জন্মের আগেই শত্রু ভাবাপন্ন এক বিরাট পড়শীকে বগলদাবা করে নিয়েছিল। এর সুফল তারা পেয়েছে। লীগ কখনো-ই বাংলাদেশকে কিংবা এর ১৮ কোটি মানুষকে বিলং করেনি। ফলে, লীগ আগে শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং এরপর তার সবচে বড় যে ফিউচার চ্যালেঞ্জ সেই জামাতকে আগেভাগে খেয়েছে। এরপর খেয়েছে হেফাজতকে। এরপর খেয়েছে জাপা কে। মনে রাখতে হবে, লীগ প্রথমে খায় তার শত্রুকে, এরপর বন্ধুকে, এরপর নিজেরাই নিজেদের খেতে শুরু করে। ফলত; শত্রু ও বন্ধু খাওয়া শেষে এরা গত ১৫ বছর ধরে খাচ্ছে বিএনপিকে। এভাবে বিএনপিকে একেবারে নিঃশেষ করে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা জানেনা, তাদের শক্তির সব উৎস সীমানার ওপাড়ে। যদি কখনো সীমানা সিল করে দেয়া যায়, এদেশে সর্ব প্রথমে ঘেরাও হয়ে যাবে লীগ নামক ষন্ডাদের এই দলটা। তারা জানেনা, সংখ্যায় তারা কত তুচ্ছ, কত সামান্য। নিরব নিশ্চুপ থাকা বিশাল জনগোষ্ঠী যেদিন নিরবে নিভৃতে মাঠে ঘাটে পথে প্রান্তরে নেমে আসবে সেদিন তাদের পালানোর কোনোও পথ কিন্তু খোলা থাকবে না।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক দেশ জনতা ডটকম, রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসক