মহাসমাবেশ রুখে দিতে সরকার নতুন চক্রান্ত করছে—- মির্জা ফখরুল

আপডেট: জুলাই ২৫, ২০২৩
0

বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশ রুখে দিতে সরকার নতুন চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার বিকালে আইনজীবীদের এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের এই যে রাজনৈতিক আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের যে আন্দোলন, মানুষের যে উত্থান এটাকে রুখে দেয়ার জন্য তারা(সরকার) একটা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) তিনি একটা সভায় বলেছেন যে, বিএনপি বাংলাদেশে অরাজগতা সৃষ্টি করবার জন্যে সীমান্তে অস্ত্র জড়ো করছে।”

‘‘ কী ভয়ংকর কথা। কোন সময়ে ? যখন জনগন জেগে উঠছে, যখন জনগন তাদের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করেছে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য ঠিক সেই সময়ে এই কথা বলে তারা নতুন একটা চক্রান্ত, একটা ষড়যন্ত্র শুরু করবার পায়তারা করছে। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এই সমস্ত কথা বলে আপনারা যদি আবার জনগনের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করেন তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে বহন করতে হবে এবং জনগন তার উত্তর দেবে।”

সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা ২৭ তারিখে যে মহাসমাবেশ ডেকেছি সেই মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ। কোনো চক্রান্ত করে, কোনো ষড়যন্ত্র করে, কোনো সহিংসতা করে এই মহাসমাবেশকে নশসাত করা যাবে না।”

‘‘ আমি আহ্বান জানাতে চাই কর্তৃপক্ষের কাছে যে, আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা করবেন। অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারকে, কর্তৃপক্ষকে এবং যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে বহন করতে হবে।”

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আইনজীবীদের শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ওপরে যে পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, এই দেশ ও দেশমাতৃকা আমাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে যে বাংলাদেশের জনগনকে মুক্ত করতে হবে, বাংলাদেশের মানুষকে আবারো স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো আরেকটা যুদ্ধ করতে হবে, সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জনগনের একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ি।”

দেশের বিচার ব্যবস্থায় দলীয়করণসহ সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনে চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং ভোটাধিকার পুণঃপ্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা’ শীর্ষক এই আইনজীবী সমাবেশ হয়।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘‘ দেশ এখন সংবিধানের অধীন নয়, যারা ক্ষমতায় আছে তারা জনগনের সম্মতি নিয়ে আসে নাই। বেআইনিভা্বে আছে, অবৈধভাবে আছে, এই সরকার অবৈধ সরকার।আপনাদেরকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না।”

‘‘ আমি সকল শ্রেনী-পেশার মানুষকে আহ্বান জানাব, এই স্বৈরাচারকে বিদায় করুন। তা নাহলে কেউ আপনারা বাঁচতে পারবেন না। এই লড়াই গণমানুষের লড়াই, এই লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই, এই লড়াই শান্তিপূর্ণ লড়াই। ২৭ তারিখ যদি কোনো অশান্তি কিছু করেন… ২৭ তারিখে পরে শেষক্ষমতায় ছেড়ে যেতে হবে, আপনাদেরকে ক্ষমতায় থাকতে দেবো না, দেবো না।”

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ আন্দোলনে টেউ লেগেছে। সেই সময়ে আইনজীবীরা আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসটা এরকম যে সব সময় পেশাজীবীরা বিশেষ বিশেষ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এবং আন্দোলন জিতেছে। এখন পরিস্থিতিটা একটু আলাদা। ব্যবসায়ীরা সবাই মিটিং করেছেন এবং সবাই মিলে বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আরেক টার্ম থাকতে হবে….। বিরাট চাপ দাঁড়ি রেখে ব্যবসায়ী একজন নেতা নতুন করে শ্লোগান দেন … বার বার দরকার… পরের টা তো এখানে বলা যাবে না।”

‘‘ আমলারা সেদিন সভা করল। পত্রিকার মধ্যে নিউজ হয়েছে সভা করেছেন তারা। কিন্তু কি হয়েছে বলতে চায় না। সাংবাদিকরা যারা ভেতরের খবর বের করে তারা লিখেছে সেই সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তারা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে যেকোনোভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করতে হবে। কি করবে বলেন? জনগন তো নাই। এখন সচিবদের দিয়ে যদি পাওয়া যায়। গতবার ছিলো পুলিশের ভোট, এবার বোধহয় সচিবদের ভোটে হতে চায়। সেই গুঁড়ে বালি… ওটা হবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘‘ ২৭ তারিখের মহাসমাবেশ। লোকে বলে এমন সমাবেশে হবে যা কেউ দেখেনি। আমরা বলতে চাই, বাতাস বদলাচ্ছে… বাতাস আরো বদলাবে। ২৭ তারিখে যখন এরকম করে মানুষের ঢল আসবে তখন দেখবেন ওবায়দুল কাদেরের মুখ শুকিয়ে গেছে, কথা বেরুচ্ছে না।”

গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘‘ লড়াইটা খুব পরিস্কার। এই লড়াইয়ে শাসকরা ভয় দেখাতে চাচ্ছেন। আগামী ২৭ তারিখ সমস্ত বিরোধী দল রাজপথে নামবে, সমাবেশ-মহাসমাবেশ-মহাজাগরণ হবে।”

‘‘ আমরা জনগনকে বলি, ১৭ তারিখ হচ্ছে জনতার মুক্তির সমাবেশ। কাজের সমস্ত ভয় উপেক্ষা করে রাজপথ দখল নিন। জনতার রাজপথ জনতা দখল নিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা ঘটাবে সেই সংগ্রামের প্রস্তুতি আপনারা নিন।”

বিরোধী দল ও ভিন্নমতের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলার প্রসঙ্গ টেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘ খুব দূঃখ লাগে দেশটাকে আজকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা যখন এই সমস্ত পরিস্থিতি দেখি তখন সবচেয়ে দূঃখ লাগে। আমি নিজে একজন সাংবিধানিক আইনের শিক্ষক, আমি যখন আমার ছাত্রদের বলতে যাই যে, এই দেশে সেই সরকারই আসবে যে সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত। আমাদের সংবিধানে আর্টিক্যাল সেভেনে বলা আছে। তখন আমার ছাত্ররা হাসতে শুরু করে। আমি যখন বলি যে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জনগনের ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়।”

‘‘ ছাত্ররা বলে স্যার আমরা তো জীবনে দেখি নাই যে, ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি হয়। তাদের এলাকা চোর, তাদের এলাকার বদমাইশ, তাদের এলাকার মাদক ব্যবসায়ী, তাদের এলাকার মাস্তান… সব এই সরকারের কিছু ব্যানার লাগিয়ে, আর কিছু পোস্টার লাগিয়ে আজকে এমপি হয়ে গেছে। মানুষের ভোটাধিকারের সাথে, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার সাথে, সংবিধানে প্রদত্ত যে জনগনকে মালিকানা দেয়া হয়েছে এর সাথে এমন নির্মমতা এমন নিষ্ঠুরতা, এমন তু্চ্ছ-তাচ্ছিল্য আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখি নাই।”

ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সমস্বয়ক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, সৈয়দ মামুন মাহবুবের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এজডএম জাহিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।

ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মহসিন রশিদ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জসিম উদ্দিন সরকার, শাহ আহমেদ বাদল, আবদুল জাব্বার ভুঁইয়া, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ আলী, ওমর ফারুক ফারুকী, আবদুল লতিফ তালুকদার প্র্রমূখ আইনজীবীরা বক্তব্য দেন।