মহিলা পরিষদের উদ্যোগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১
0

মহিলা পরিষদের উদ্যোগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যক্রম আরও সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে কর্মশালা অনুষ্ঠিত।

আজ ১৫ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে ‘‘ সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার পাশে দাড়াই ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করি’’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যক্রম আরও সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবির। আরো বক্তব্য রাখেন সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, অ্যাড. হাশেম রাজা স্বপন ;অ্যাড. আমিনুল ইসলাম। লিগ্যাল এইড ইউনিটের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন লিগ্যাল এডভোকেসী ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আক্তার। কর্মশালা সঞ্চালনায় ছিলেন আইনজীবি ফাতেমা খাতুন।

স্বাগত বক্তব্যে লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবির বলেন, লিগ্যাল এইড ইউনিট থেকে যেসকল সেবাগ্রহীতা সেবা পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে সেবা গ্রহণ করবেন তাদের জন্য ভবিষ্যতে সেবার মান আরো উন্নত করতে করণীয় সম্পর্কে সকলের মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন,
চার দশক ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বহুমুখী পদ্ধতিতে কাজ করছে। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ছাড়াও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নারীদের অধ:স্তন অবস্থা দূর করে পরিবার ও সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠন সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাদেরকে এই আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে এখনো স্বাবলম্বী নয়, সিদ্ধান্তগ্রহণে ক্ষমতা না থাকায়, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার ফলে সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতাসহ সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধে কর্মশালায় উপস্থিত আইনী সেবা গ্রহীতাদের মূল্যবান মতামত প্রদানের মাধ্যমে সংগঠনের সাথে বহুমুখীভাবে কাজের সাথে একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানান।

অ্যাড. মাকছুদা আক্তার সংগঠনের লিগ্যাল এইড ইউনিটের আইনী সেবাদান প্রক্রিয়া সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন আমরা দুইভাবে সহায়তা প্রদান করে থাকি। পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সরাসরি ফোনে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়, ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা চলাকালীন সময় থেকে নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো সেনসিটিভ ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ফোনে খোজ খবর নেয় হয়, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়, ভিকটিমের নিরাপত্তা দাবি করা হয় এবংপ্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে সরকার সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু বিচার দাবি করার সাথে সাথে ভিকটিমের কাউন্সেলিং, এ্যডভোকেসী কাজ পরিচালনা করা এবং আইনের সংস্কারের কাজ সংগঠন করে থাকে।

অ্যাড. হাশেম রাজা স্বপন বলেন, যে সকল নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তাদের সাহসের সাথে ঘটনার পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, আইনের সহায়তা নিতে হবে। আইনী দিক নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

অ্যাড. আমিনুল ইসলাম, সহিংসতার শিকার নারীদের আইনী সহায়তা প্রদানে পরিধিকে আরো বিস্তৃত করতে উপস্থিত সকল সেবাগ্রহীতাকে সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

সংগঠনের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সংঘটিত কোন সহিংসতার ঘটনাই তুচ্ছ নয়। ঘরে ঘরে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সহিংসতা প্রতিরোধে নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আইনী সহায়তা প্রদানে সংগঠনের পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন আপনারা সাহসী হয়ে উঠুন! যতবেশি নারী পুরুষ সংগঠনের সাথে যুক্ত হবেন ততবেশী আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।

আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীগণ তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন আশুরা জাহান, আমেনা, সালমা, লায়লা, নয়নতারা, শিল্পী বেগম, বিউটি প্রমূখ। তারা তাদের সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরেন এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ হতে তারা যে আইনগত সহায়তা পাচ্ছে এবং তারা যে সবসময় তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তার জন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কর্মশালায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সংগঠনের প্যানেল আইনজীবী অ্যাড. মো: আমিনুল ইসলাম, অ্যাড. হাশেম রাজা স্বপন, আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীবৃন্দ, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।