মহিলা পরিষদের উদ্যোগে “নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ: মানবাধিকার লঙ্ঘন” বিষয়ক অনলাইন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০২১
0

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, ২০২১ পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে “নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ: মানবাধিকার লঙ্ঘন” বিষয়ক অনলাইন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত।

মহোদয়
“নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর সম অধিকার নিশ্চিত কর’’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ, ১২ ডিসেম্বর ২০২১, বিকাল ৩:৩০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইনে “নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ: মানবাধিকার লঙ্ঘন” বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম, এনডিসি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ, দীপ্ত টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, বাংলদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাড. জেসমিন সুলতানা (শামসাদ), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী অ্যাড. দীপ্তি সিকদার।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আমরা দেখছি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। আমরা লক্ষ্য করছি এই সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সহিংসতা বন্ধ করতে হলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নির্মূলের বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন ও আলোচনা করে জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম, এনডিসি, বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে আজকে বাংলাদেশ সবার শীর্ষে আছে। কিন্তু ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের নানা ঘটনা সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। ধর্ষণ কেন হচ্ছে এর মূল কারণ উদঘাটন করতে হবে বলে তিনি মত দেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৪০টার উপরে ‘কেস মিটিং’ করা হয়েছে এবং সকল মন্ত্রণালয় ও সংবাদমাধ্যমে এসব ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে। তবে সরকার ও মানবাধিকার কমিশনের একার পক্ষে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ। তিনি সকলকে আশ^স্ত করেন যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এসব নিয়ে কাজ করছে।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ^ মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের গৃহীত নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, যারা মানবাধিকারের সুরক্ষা দেবেন তাদের মানবাধিকারের বিষয়টা জানা জরুরি। আমাদের সংবিধানে সবার মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইন করার পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা।
সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা শুধু নারীর একার জন্য অপমান নয়, এটা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অপমানজনক। দীর্ঘ চার দশক ধরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন, আইন সহায়তা প্রদান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্মিলিতভাবে করে যাচ্ছে। এর পরও নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পােেচ্ছ। সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে এবং বিনির্মাণে সকলকে সাথে মানবাধিকার সংগঠনকে সাথে নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কাজ করার আহ্বান জানান।
অন্যতম আলোচক অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, কোভিডকালে নারীর প্রতি সহিংসা আরো বেড়ছে। নারীকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অবমাননা করা হচ্ছে। উচ্চপদে থাকলেও নারীদের তুচ্ছ ভাবা হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ বৈশি^ক লিঙ্গসূচক, মানবাধিকার ইত্যাদি সূচকে এগিয়ে আছে তবুও নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
দীপ্ত টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, নারী নির্যাতনের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো বই, কাগজ-কলমে আটকে থাকে। অনেকক্ষেত্রে সময়মত সংবাদও আসে না। জেন্ডার ইস্যু নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে আইন পরিবর্তন করা জরুরি। এই বিষয়ে আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রে বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। দেশে প্রচলিত বিচারব্যবস্থা জেন্ডার সংবেদনশীল করতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেনÑজনপ্রতিনিধি, তাদের সাথে ধারাবহিকভাবে মতবিনিময় সভা করা প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন জানান, ধর্র্ষণ চরম মানবাধিকার লঙ্ঘণ। তিনি ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় ৫৬ হাজার ২৬৭টি নারী ও কন্যা নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে কাজ করেছন। যার মধ্যে একটি বড় অংশ হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণের ফলে কারো মৃত্যু হলে সেখানে যে রিপোর্ট হচ্ছে তাতে নিহতের পরিবার কোনো সহায়তা পাচ্ছে না। একজন নারী ধর্ষণের শিকার হওয়া মানে তার সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া কিন্তু পুরুষদের সব অপরাধ সমাজে বৈধতা দেওয়া হয়। নারীর চরিত্র নিয়ে বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটনা করা হয়। এগুলো বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন তিনি।
সভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবীর, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক এবং গণমাধ্যম সম্পাদক(ভারপ্রাপ্ত) রীনা আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, রোকেয়া সদন সম্পাদক নাসরিন মনসুর, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. সামিনা চৌধুরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠক, সাংবাদিক, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ এবং কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আখতার।