মাদকের স্বর্গরাজ‍্য ভূরুঙ্গামারী ধ্বংসের মুখে যুবসমাজ

আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২২
0

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম জেলায় অধিাকাংশ মাদক আসছে ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। আর এই মাদক বিভিন্ন হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে। সীমাস্ত এলাকায় মাদকদ্রব্য সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে স্কুল কলেজ গামী শিক্ষার্থী যুবক ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা।
ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের সূত্র মতে, গত জুলাই মাসে ৯০ পিচ ইয়াবা ২ গ্রাম হিরোইন ও ১ কেজি ৬শ গ্রাম মাদকসহ তিনজনকে আটক ও এ বিষয়ে ৪ টি মামলা করা হয়েছে। তারমধ‍্যে দুটি বিজিবি কর্তৃক ও দুটি থানা পুলিশ মামলা করেছে।
কুড়িগ্রাম মাদক দ্রব‍্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের তথ্যঅনুযায়ী,গত জুলাই মাসে তারা ১৮৫.১৭৫ কেজি গাজা ,ইয়াবা টেবলেট ২৫৩২,ফেন্সিডিল ৭৫ বোতল,চোলাই মদ ১২ লিটার,টাপেন্টাডল টেবলেট ৩২৬ পিচ, হেরোইন ৭৫ গ্রাম,ওয়াস ৮০০ লিটার,বিলাতি মদ ৪০ বোতল,মোট মামলার সংখ্যা-২২৪টি, আসামীর সংখ্যা ২৪১ জন।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ আটক করেছে-৭০৯.৩২৯ কেজি গাজা ,ইয়াবা টেবলেট ২৫২৯১,ফেন্সিডিল ১২৭২ বোতল, চোলাই মদ ৪০ লিটার,টাপেন্টাডল টেবলেট ৩২৬ পিচ, প্যাথেডিন ইনজেকশন ৪০০ পিস, হেরোইন ১৫৯.৮৫ গ্রাম,বিলাতি মদ ১৮৯ বোতল,মোট মামলার সংখ্যা-৩৯৬টি, আসামীর সংখ্যা ৪৯৩ জন।
র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান আটক করেছে- ৫৮ কেজি গাজা ,ইয়াবা টেবলেট ১৪১২৭,ফেন্সিডিল ৬৪ বোতল,হেরোইন ৩২ গ্রাম,মামলার সংখ্যা ২৩, আসামীর সংখ্যা ২৭ জন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আটক করেছে ১৪২ কেজি গাজা ,ইয়াবা টেবলেট ৮৩৬১ পিচ,ফেন্সিডিল ৯৭১ বোতল, হেরোইন ৬৮.৬২ গ্রাম,বিলাতি মদ ১৬৫ বোতল,মোট মামলার সংখ্যা-১২০টি, আসামীর সংখ্যা ১০৯ জন।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলাটি ভারত সীমান্ত বেষ্টিত হওয়ায় এ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাদক কেনা বেচা হয়। মাদক ব্যবসা এমন মাত্রায় পৌঁছে গেছে যে, জায়গায় বসে অর্ডার করলেই বাড়িতে চলে আসে মাদক।
অভিযোগ রয়েছে, মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক সংঘঠনের নেতাকর্মি, অনেক জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর এইজন‍্যই এলাকার সাধারন এমনকি আইনর্শংখলা বাহিনীর সদস্যরাও মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত স্পটে মাদকের ব্যবসা চলছে। মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ‍্যমে চলছে এই ব‍্যাবসা। সন্ধ্যার পর এসব স্পটে বসে মাদকের ভাসমান হাট। জয়মনিরহাটের শিংঝাড় লালব্রীজের পাড় ও পুরাতন রেললাইনের দুপাড়,সদর ইউনিয়নের সোনাতলী, মানিককাজি ঘাটের এপার-ওপার, লাকি সিনেমাহল পাড়া, গার্লস্কুল পূর্বমোড়, ডিগ্রী কলেজের পাশে, নলেয়া, চর নলেয়া ও মধুছন্দা সিনেমা হলের পাশে, পাথরডুবী ইউনিয়নের বাঁশজানি, দিয়াডাঙ্গা, শিলখুড়ি , চর-ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নতুনহাট বাজার ও বাবুর হাট বাজারের পাশের কয়েকটি বাড়ি, তিলাই ইউনিয়নের দুধকুমোর নদের চরে খোচাবাড়ি এলাকায় একটি জায়গায়, পাইকেড়ছড়া ইউনিয়নের পাটেশ্বরী ও ফুটানীবাজারের আশে পাশের এলাকা,দক্ষিন তিলাইর ঢাকাইয়া পাড়ার কয়েকটি বাড়িতে, শিলখুড়ির পাগলাহাট বাজারে, উত্তর ধলডাঙ্গা ও শালঝোড়ে এবং সোনাহাট স্থল বন্দরের আশপাসসহ, উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকাতেই মাদকের ব‍্যাবসা চলছে।
জানা যায়,ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাদক পাচার করে বাংলাদেশের আনার ক্ষেত্রে দু”দেশের প্রায় শতাধিক চোরাকারবারী সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। মাদক ব‍্যবসায়ীরা ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কয়েকটি রুটে ভাগ করে নিরাপদে তাদের ব‍্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হলো শিংঝাড় থেকে মানিককাজি হয়ে বাগভান্ডার ও ছোট খাটামারি পর্যন্ত ফেনসিডিল আনার হাইওয়ে হিসেবে ব‍্যবহ্নত। মানিক কাজি, পাথরডুবি ও বাশঁজানি হয়ে দিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত রুটটি গাঁজার রুট হিসেবে ব‍্যবহ্নত। শালঝোড়, ধলডাঙ্গা, পাগলারহাট ও উত্তর তিলাই দিয়ে আসে মদ। এছাড়াও ছোট ছোট চালানে প্রায় সব রুট দিয়ে মদ আসে।
কাজিয়ারচর, তিলাইয়ের ঢাকাইয়া পাড়া, চর- ভূরুঙ্গামারী হয়ে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে আসে হিরোইন ও ইয়াবার চালান।এসব মাদক সীমান্ত পেরিয়ে সড়ক পথে শহরে আসে। পরে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, ভ্যান-লরিতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় এসব মাদকের চালান।
পুলিশ ও মাদক দ্রব‍্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে গাঁজা, হেরোইন, মদ ও ইয়াবাসহ মাদককারবারিকে আটক করলেও চিহ্নিত বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব‍্যাক্তি বলেন আমাদের বাড়ির পাশেই দিনে রাতে মাদক কেনা বেচা ও মাদক পানের ধুম পড়ে যায়।মাদকের গন্ধে বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে যায়।কিন্তুু মাদকসেবীদের ভয়ে নীরব হয়ে আছি।নাম প্রকাশের ভয়ে পুলিশকেও জানাতে পারছিনা।
সম্প্রতি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্র অধিদপ্তরের একটি সেমিনারে প্রতিদিন অভিাবকরা মাদকসেবন কারী সন্তানের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচার নিয়ে আসছেন।শুধু তাই অতিরিক্ত মাদক সেবন করে পাগলার হাটে এক ব্যক্তি মৃত্যুর অভিযোগ ও ওঠে আসে।এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন,মাদকের বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব‍্যাহত আছে। এবিষয়ে কোন আপোষ করবনা। মাদক নির্মূলে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম মাদক দ্রব‍্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কুড়িগ্রামের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলেন,মাদক নিমূলে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জনপ্রতিনিধি,গনমাধ‍্যম কর্মী ও স্হানীয় সুধীমহল নিয়ে কর্মশালা করছি। জেলার মধ‍্যে একটি মাত্র অফিস সেখানে আমাদের জনবলও সামান‍্য। তবে বিভিন্ন সমস‍্যা মোকাবেলা করে সীমিত সামর্থের মধ‍্যেও আমাদের অভিযান থেমে নেই। মাদকের সাথে যতবড় নেতাই জড়িত থাকুক আমরা তাদেরকে ছাড় দিবনা।এজন‍্য তিনি গনমাধ‍্যম কর্মী স্হানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করেন।
#####