মানারাত স্কুলের মাঠ দখল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী- অভিভাবকদের মানববন্ধন

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
0
file photo

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজের মাঠ দখল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে “মানারাত স্কুল বাঁচাও, আগামীর প্রজন্ম বাঁচাও” ব্যানারে মানববন্ধন করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশানের মানারাত স্কুল ও কলেজের সামনে সচেতন নগরবাসী ও অভিভাবকবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধন করেন তারা।

মাববন্ধনে মানারাত স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা তাদের খেলার মাঠ দখলের ঘৃণ্য প্রতিবাদ জানিয়ে নানা রকম প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের খেলার মাঠ ছেড়ে না দেয়ার কথা বলেন। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের খেলার মাঠ ছেড়ে দিবো না।

বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ‘স্কুল হচ্ছে মানুষ গড়ার কারখানা, ভালো মানুষ গড়তে ভালো স্কুলের বিকল্প নেই’, মানারাত স্কুলের মাঠ থাকবে, দখলকারীরা পিঁছু হটবে’, ‘একটি শিশু একটি চারাগাছ তাকে মহীরু করে তুলতে চাই একটি ভালো স্কুল’, শিশুর মেধা ও মনোবিকাশে সহযোগিতা করুন’, এরকম লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানান।

এক নারী অভিভাবক তার বক্তব্যে বলেন, ‘ আমি আজ স্কুলে এসে জানতে পারলাম আমাদের মাঠ দখল হয়ে যাবে, আমরা এই স্কুলকে নষ্ট হয়ে যেতে দিতে চাই না। আমাদের বাচ্চাদের এই মাঠের জন্য ভর্তি করিয়েছিলাম। একটা ভালো পরিবেশ পাবে। আমি জানতে চাই আজকে কেন ছোট ছোট বাচ্চাদের জীবন নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে? যে সকল অভিভাবক বাসায় আছেন তারা চলে আসুন, আপনাদের অধিকারের কথা বলুন, আমাদের বাচ্চাদের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থের জন্য আমাদের জমি দখল করে ফেলা হচ্ছে। আমরা বসে থাকবো না বেড়িয়ে আসুন মায়েরা। বেড়িয়ে আস বাচ্চারা, তোমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। মাঠের মধ্যে স্থাপনা করে তারা রাজনীতি করবে, আমরা সেই রাজনীতির অংশ হবো না।

আরেক শিক্ষার্থীর মা অভিভাবক বলেন, স্কুলের মাঠ রক্ষার বিষয়ে আমরা এখানে সবাই একমত এক আত্মা। আমরা যেকোন কিছুর বিনিময়ে এই মাঠ রক্ষা করবো ।

মানববন্ধনে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন , ফাতেমা বেগম, জানে আলম, সুইটি আক্তার, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

অভিভাবকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, একটি মহল আশুলিয়ায় অবস্থিত স্থায়ী ক্যাম্পাসের পরিবর্তে মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জমিতে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার তৎপরতা চালাচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তারা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অপতৎপরতা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এরমধ্যে হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুর পদচারণায় মুখরিত স্কুলটি ধ্বংসের মুখে পড়বে। অনাগত ভবিষ্যতে অনেক শিশুর ভবিষ্যৎ এই প্রক্রিয়ায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্কুলকেন্দ্রিক অত্র এলাকায় কয়েক যুগে গড়ে ওঠা অসংখ্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।অত্র এলাকার শান্তি প্রিয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস চলে আসলে অত্র অঞ্চলে ছাত্র রাজনীতি শুরু হবে যা স্থানীয় দূতাবাস সহ এই ডিপ্লোম্যাটিক জোনের নিরাপত্তাকে ও দারুণভাবে ঝুঁকিতে ফেলবে। গুলশান মডেল টাউন এর ম্যাপে এই জায়গাটি স্কুল ল্যান্ড হিসাবে যে নক্সা আছে তার পরিবর্তন ঘটবে। সামগ্রিকভাবে বলতে হয় গুলশান মডেল টাউনের মর্যাদা, সৌন্দর্য, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

অভিভাবকরা বলেন, আমরা জানি মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ যে জমির উপর প্রতিষ্ঠিত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনায় জায়গাটি স্কুল ল্যান্ড হিসাবে দেখানো আছে। মানারাত ট্রাস্ট রাজউক এর সঙ্গে এখানে স্কুল প্রতিষ্ঠায় চুক্তিবদ্ধ।

চুক্তির ২২ নম্বর শর্ত মোতাবেক মানারাত ট্রাস্ট এই জমি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে (মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) দান করা বা বিক্রি করার অধিকার লিজ গ্রহণকারী হিসেবে থাকবে না। এবং রাজউক মানারাত ট্রাস্ট এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকা অবস্থায় অন্য কারো সঙ্গে এই জমি ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করতে পারে না। তাই গুলশানের এর ডিপ্লোম্যাটিক জোন এ স্কুলের জন্য এই নির্ধারিত জমিতে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থানান্তরের প্রচেষ্টা আইনানুগ এবং এখানকার অধিবাসীদের জন্য কল্যাণকর নয়।

এমতাবস্থায়, এই প্রতিষ্ঠানটির সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে এবং প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জমি নিয়ে চলমান উদ্বেগ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমরা বিনীত অনুরোধ করেন অভিভাবকবৃন্দ।

জানা যায়, ঢাকার গুলশান এলাকায় রাজউক কর্তৃক বরাদ্দকৃত জমির উপর মানারাত ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (MDIC) ১৯৭৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৪৪ বছর অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। প্লে গ্রুপ থেকে এ লেভেল পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে দুটি পৃথক শাখা বালক শাখা এবং বালিকা শাখা আছে। আছে বিশাল দুটি খেলার মাঠ। আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের সকল সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এই স্কুলটি। বর্তমানে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে।

মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের একাংশে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০০২ সাল থেকে অস্থায়ীভাবে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছিলো। ইতোমধ্যে, বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য উপর্যুপরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য নির্দেশনা দেয়। উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। অতএব নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয় নিয়ে এবং আইন বহির্ভূতভাবে জমি দাবি করার বিষয়টি কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।