ময়মনসিংহের ভালুকায় সুদ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ফাঁদে নিঃস্ব শত পরিবার

আপডেট: মে ১৭, ২০২১
0

নিজস্ব প্রতিবেদক: ময়মনসিংহের ভালুকায় মেদুয়ারীর বাঘসাতরা মোড় এলাকায় ১ টি সুদ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সদস্যদের হাতে স্থানীয় অসহায় পরিবারের সদস্যরা জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উচ্চহারে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় প্রতিনিয়তই মামলা হামলার শিকার হচ্ছে ভুক্তভোগীরা।

সুদ সিন্ডিকেট সদস্যদের হামলার শিকার হয়ে কেউ কেউ হাসপাতালের মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আবার ভয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সময়মত টাকা পরিশোধ করতে না পেরে কেউ নিজের জমি বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন আর কেউবা আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগে প্রকাশ থাকে যে, গত ৮ মাস পূর্বে ভালুকার মেদুয়ারী ইউনিয়নের বাঘসাতরা মোড়ের ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের পুত্র মো: কামরুল ইসলাম (৪৬) একই এলাকার সুদ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য রুবেলের কাছ থেকে মাসিক সুদী হারে নিজের বø্যাংক চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে সই করে ১ লাখ টাকা নেন। আসল টাকার সমপরিমান টাকা সুদ হিসাবে প্রদানের পরেও করোনাকালীন সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়ায় ২ মাস যাবত সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সুদ সিন্ডিকেট সদস্য রুবেল মিয়া (৩৫), তুহিন (২৬), আপেল (৩২) সর্বপিতা ইসলাম, কবির হোসেন (৫০) পিতা মৃত সাইমুদ্দিন, মো: মাহফুজ (৪০), জহিরুল (৫০) উভয় পিতা জয়নাল সহ ভাড়াটিয়া লোকজন মিলে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে তার ওয়ার্কশপটি বন্ধ করে দেয়। এরপর গত ১৩ মে বৃহস্পতিবার বিকালে ভুক্তভোগী কামরুলের ছোট ভাই ও তার বাবা বাঘসাতরা মোড়ে গেলে সুদ সিন্ডিকেট সদস্যরা তাদেরকে বেধরক মারধোর করে। খবর পেয়ে কামরুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাকে রুবেল ও তার সহযোগী অন্যান্য সুদ সিন্ডিকেট সদস্যরা মিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে বেধরক মারপিট করে হাত-পা ও মাথা ফাটিয়ে দেয়।

এসময় কামরুলের ছোটভাই তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও পিটিয়ে আহত করে রুবেল গংরা। এসময় তার সাথে থাকা গোশত সমিতির গরু কেনার ৮৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। গুরুতর আহত কামরুলের শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে রক্তক্ষরণ হতে দেখে স্থানীয় এলাকাবাসী বাংলাদেশ পুলিশের জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯ এ কল দেয়। এরপর পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত কামরুলকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। বর্তমানে সে হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

ঘটনার দিনই ভালুকা মডেল থানায় আহত কামরুলের স্ত্রী নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে হামলাকারী সুদ সিন্ডিকেট সদস্যদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং- ২৪, তারিখ- ১৩/০৫/২০২১।
মামলার খবর পেয়ে নিজেকে বাঁচাতে সুদ সিন্ডিকেটের সদস্য রুবেল নিজেই নিজের মাথা কেটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গত ১৬ মে নিজের স্ত্রী একা আক্তারকে বাদী করে ভালুকা মডেল থানায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত কামরুল, তার পুত্র সিয়াম, ছোট ভাই মাজহারুল ও তার বাবা আবুল হোসেনকে আসামী করে একটি সাজানো মামলা দায়ের করে (মামলা নং- ৩০ তারিখ- ১৬/০৫/২০২১) তাদেরকে হয়রানি করে আসছে।
সুদ ব্যবসায়ী রুবেল গংদের সুদের জালে আটকে এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। সুদ সিন্ডিকেট সদস্যদের হুমকি ধামকিতে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবারকে। সুদ সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে প্রায় নি.স্ব হওয়া ভুক্তভোগী আরিফ মিয়া মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, সুদ সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছ থেকে মাসিক ৪ হাজার টাকা সুদ হারে ২৫ হাজার টাকা নেয়ার পর বেশ কিছুদিন সুদ চালানোর পর এখনো তার কাছে ৭০ হাজার টাকা দাবী করে তাকে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। সে বর্তমানে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আরেক ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য শ্রী জিতন জানায়, এই সুদ সিন্ডিকেট সদস্যর কাছ থেকে প্রায় ১ বছর আগে সুদ হিসাবে ৮০ হাজার টাকা নেন তিনি। ১ বছর প্রতি মাসে ৮ হাজার, সাড়ে ৮ হাজার ও ১০ হাজার টাকা সুদ দেয়ার পরেও তাকে ৪ শতাংশ জমি বিক্রয় করে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। শ্রী জীতন বলেন, কোন মাসে সুদ দিতে একটু দেরি হলেই সুদ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিতো। সুদ ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বা প্রতিবাদ করতে সাহস পান না কেউ। ওই সিন্ডিকেটের দাপটে নি:স্ব হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ছন্নত আলীর পুত্র লতিফ (৫০), আবুল কাসেমের পুত্র লতু মিয়া (৪০), সাইফুল ইসলাম (৩৫), মুরশিদ (৪০), জাহাঙ্গীর খান পিতা মফিজ খান সহ অনেকেই। এদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ফরহাদ (৩০) নামের এক যুবক বিষপান করে আত্বহননের চেষ্টা পর্যন্ত করেছেন। এরকম আরও বহু পরিবার ওদের হাতে জিম্মি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা এই সিন্ডিকেট সদস্যদের হাত থেকে নিস্কৃতি পেতে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল ইসলাম।