যত্রতত্র কুরবানীর পশুর হাট বন্ধ, স্থায়ী জবাই কেন্দ্র স্থাপন ও কুরবানীর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের” দাবীতে নাগরিক সমাবেশ

আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩
0

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে আজ ২৩ জুন, ২০২৩ সকাল ১০.৩০ মি. শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে, “যত্রতত্র কুরবানীর পশুর হাট বন্ধ, পর্যাপ্ত স্থায়ী জবাইকেন্দ্র স্থাপন ও কুরবানীর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের” -দাবীতে এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বাপা’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস এর সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাপা নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, আমিনুর রসুল, ড. মাহবুব হোসেন, ইবনুল সাঈদ রানা, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, আদি ঢাকাবাসী ফোরামের সভাপতি জাভেদ জাহান, পুরান ঢাকা নাগরিক কমিটির সভাপতি, নাজিম উদ্দীন, নগরবাসী পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি, হাজি আনছার আলী, গ্রীন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক, তারেক রায়হান প্রমূখ।

এছাড়াও এতে আয়োজক সংগঠনের অন্যান্য প্রতিনিধিগন, পরিবেশবিদ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সামাজিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীগণ অংশ গ্রহন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, যত্রতত্র কুরবানীর পশুর হাট বন্ধ, স্থায়ী জবাইকেন্দ্র স্থাপন ও কুরবানীর বর্জ্য দ্রুত অপসারণ নিশ্চিত করা সরকার এবং সিটি কর্পোরেশনের মূল দায়িত্ব; এর পাশাপাশি দেশের জনসাধারণকে অধিক সচেতন হতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানী করা এবং কুরবানী পরবর্তী দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্জ্য নিজে অপসারণ করা এবং সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করা। সরকার উন্নয়নের নামে গাছ রোপন করছে এর বেশীরভাগই অপরিকল্পিত ভাবে। এর সূফল মানুষ পাবে না। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সরকারকে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবেশ বান্ধব গাছ রোপনের আহ্বান জানান।

আলমগীর কবির বছর ঘুরে আবার পবিত্র ঈদ-উল-আযহা সমাগত। ঈদ মানেই আনন্দ। সেই আনন্দ যেন অন্যের জন্য বিষাদের কারণ না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এই ঈদে বিশেষ করে পশু কুরবানী অন্যতম প্রধান একটি অনুসঙ্গ। অতি শীঘ্রই বিদ্যমান পশুর হাটগুলো গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়ায় ভরে উঠবে। এক পর্যায়ে এসব হাটের বাইরেও সারা দেশের সকল নগরেই বিভিন্ন অনির্ধারিত স্থানে বসবে অস্থায়ী পশুর হাট। বাপা এ ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এর ফলে কিছু সফলতা এসেছে। কিন্তু এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপরই পড়ে। আমরা এখনও দেখি ঢাকা শহরের বিভিন্ন খেলার মাঠ, স্কুল-কলেজ এবং রাস্তার উপর কুরবানীর পশু জবাই করা হয়। এটা মোটেও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালোদিক নয়। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান একই সাথে তিনি তার যথাযথ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করেন।

জাকির হোসেন বলেন, প্রতিবছর রাজধানী ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কিছু নির্দ্দিষ্ট স্থানে কুরবানীর পশু বেচাকেনার অস্থায়ী হাট বসানো হয়। তাছাড়াও সকল ওয়ার্ডে বা পাড়ায় পাড়ায় নতুন নতুন স্থানে, বিভিন্ন খেলার মাঠে, যে কোন উন্মুক্ত স্থানে, ছোটখাট পার্কে, ছোট বা বড় রাস্তার ধারে দেখা যায় অসংখ্য পশুর সমাবেশ। এসকল পশু তিনদিন পর্যন্ত কুরবানী দেওয়া হবে। যার ফলে এর বর্জ্য রক্ত রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়বে। সময়মতো এসকল বর্জ্য ও রক্ত অপসারণ না করলে জন দূর্ভোগের পাশাপাশি নানা ধরনের রোগব্যাধী ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্থায়ী জবাইখানা নির্মাণ ও সেখানে কুরবানীর ব্যবস্থা করা। এদেশের অনেকেই দেশটাকে বাসযোগ্য করতে চায় না। কারণ তারা দেশটাকে একটি ব্যবসা কেন্দ্র বানিয়ে অর্থ উপার্জন করে আর পৃথিবির উন্নত রাষ্টে স্থায়ীবসবাসের ঠিকানা বানিয়েছে সুযোগবুঝে উড়াল দিবে। তিনি বলেনে বিশ্বের ১৭৭টি খারাপ বসবাসযোগ্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৬৬তম স্থানে রয়েছে। আমরা এ দেশের সাধারণ নাগরিক দেশটাকে বাসযোগ্য দেখতে চাই। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সরকারকে চাপ দিই এবং নিজেদের দায়িত্বটাও সঠিকভাবে পালন করি।

মিহির বিশ্বাস বলেন, ঈদ-উত্তর নগরের দৃশ্য বিশেষ করে পুরাতন ঢাকায় অনেক স্থানেই বেশ অসহনীয় হয়ে উঠে। ঈদের পরদিন পুরাতন ঢাকার অধিকাংশ রাস্তায় চলাচল করাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। নারী-শিশু বা দূর্বলচিত্তের মানুষের পক্ষে এসকল দৃশ্য বা উৎকট দূর্গন্ধ সহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, অনেকেই এ কয়টি দিন অস্বস্তিতে থাকেন, অসুস্থতাও অনুভব করেন। সিটি কর্পোরেশনের কুরবানী ব্যবস্থাপনার সকল কার্যকর উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং আমরা আশা করি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এবার কোন চাপের মূখে পরাজিত হবেন না, কোন রাস্তায় বা নাগরিকদের বাসা-বাড়ীর সামনে বিচ্ছিন্ন পশুর চলাচল ও বিক্রি অনুমোদন করবেন না বরং বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রমটি আরও বিস্তৃত ও নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন।

ড. মাহবুব হোসেন বলেন, কুরবানীর বর্জ্যগুলোকে যেন সরকার সম্পদে উপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি আরো বলেন প্রতিবছর যে পরিমাণ কুরবানীর বর্জ্য হয় সেটিকে প্রসেস করে জৈব্য সারে উপান্তর করলে দেশে রাসায়নিক সারের প্রভাব কমে যাবে এর ফলে মাটির গুনাগুন বহুমাত্রায় বৃদ্ধি পাবে।

আমিনুর রসুল বলেন, আমরা যারা কুরবানী দেই তারা যেন নিজেদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করি। নিজ দায়িত্বে নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানী দেওয়া এবং এর বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।

ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, ঈদের তিন থেকে তিনদিন পর্যন্ত ঢাকা শহর একটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়। তিনি যত্রতত্র কুরবানী বন্ধসহ কুরবানীর বর্জ্য দ্রুত অপসারনের আহ্বান জানান।

আজকের এই সমাবেশ থেকে নিম্মোক্ত দাবীসমূহ তুলে ধরা হয়:
১. যত্র তত্র পশুর হাট বসানো সম্পুর্ণ বন্ধ ও নির্ধারিত স্থানে পশুর হাট নিশ্চিত করতে হবে
২. পশুর হাটের প্রতিদিনের বর্জ্য দিন শেষে নিয়মিত ও সম্পূর্ণ অপসারণ করতে হবে
৩. এলাকাভিত্তিক নির্ধারিতস্থানে কুরবানীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে
৪. কুরবানীর পর অবিলম্বে সকল বর্জ্য অপসারণ করতে হবে
৫. সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক, জনবল, যানবাহন সহ সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে
৬. পাড়ামহল্লা ভিত্তিক নির্দ্দিষ্ট স্থানে কুরবানি ও নিয়মিত পশু জবায়ের পর্যাপ্ত স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।