যারা গুম হয়েছে তাদের মধ্যে কারা ভূমধ্য সাগরে সলিল সমাধি হয়েছে — মীর্জা ফখরুলের প্রশ্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
0

সার্চ কমিটির কাছে নাম দেওয়াকে ‘অর্থহীন’ বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী চারদিনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনার পদে নাম প্রস্তাব করতে সার্চ কমিটির সিদ্ধান্তের প্রতি সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষন করলে সোমবার সকালে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য্ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের কাছে এইগুলোর(সার্চ কমিটিতে নাম দেয়া) কোনো মূল্য নাই। অর্থহীন।”

‘‘ আমরা নাম দেওয়ার তো প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা গতবারের অভিজ্ঞতা এবং এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এগুলোতে কোনো লাভ হয় না। সরকার যে থাকে তার যে পছন্দনীয় কমিশন তারা তৈরি করবে সেটাই তারা তৈরি করে।”

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আমরা মনে করি যে, আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে, আবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে যা যা করা দরকার তাই করছে।অর্থাত তারা আপনার আইনও একটা প্রণয়ন করে নিয়েছে। যেটা সম্পূর্ণভাবে আমরা মনে করি যে, জনগনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, জনগন এটা চায়নি।”

‘‘ যে সার্চ কমিটি যেটা বলছেন আপনারা। এটা তো … । আমি আগেও বলেছি যে, ওল্ড ওয়াইন ইন দ্য নিউ বোতল। গত দুইবার যেভাবে করেছে ঠিক একইভাবে আবারো জাস্ট একটা খোলশ লাগিয়ে এবং যে মানুষকে প্রতারনা করা যে, আমরা এভাবে করছি, সুন্দরভাবে করছি দেখো আমরা সকলের মতামত নিচ্ছি, নিয়ে করছি। তারপর দেখা যাবে যে, সেই হুদার(কেএম নুরুল হুদা) মতো লোকজনকেই তারা করবে। এই সার্চ কমিটির মধ্যে আ্পনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে, বেশিরভাগ সদস্যই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একজন আছেন যিনি আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়েছিলেন।”

তিনি বলেন, ‘‘ এই ধরনের সার্চ কমিটি তারা তৈরি করে যে তারা করবে এটা আমরা আগের থেকে জানতাম। জানি বলে প্রেসিডেন্টের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা না করে দিয়েছি। এখনো বলেছি যে, এই নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি যদি সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য হবে না।”

‘‘ নির্বাচনই গ্রহনযোগ্য হবে না যদি সেটা নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার থাকে। আমরা মনে করি, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।”

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিমের স্বাক্ষরে রোববার রাতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী চারদিনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনার পদে নাম প্রস্তাব করে সার্চ কমিটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টার মধ্যে সেই তালিকা সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেওয়ার বা ই-মেইলে ([email protected]) করার যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

রোববার আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটির প্রথম সভায় রাজনৈতিক দলগুলোরর কাছে নাম চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সকাল ১১টায় বিএনপি মহাসচিব পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে নাটোরের গরুদাসপুর উপজেলার সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজকে দেখতে যান। গত ৪ ফেব্রুয়ারি গুরদাসপুরে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন আজিজ। পরে ঢাকায় নিয়ে এসে এই হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।

তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে চিকিতসকদের কাছ থেকে অবহিত হন বিএনপি মহাসচিব।

এই সময়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ নাটারের স্থানীয় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

‘সরকারি নিপীড়ন বেড়েছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সরকারি নিপীড়ন বেড়েছে। আপনি দেখেন, কয়েকটা পর পর ঘটনা ঘটেছে যে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরে আওয়ামী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনেকটা বেড়েছে। পত্রিকার খবরগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন।”

‘‘ গণতান্ত্রিক সমস্ত স্পেসগুলোকে তারা ধবংস করে দিচ্ছে। একটা মিটিং করতে দেয় না। গতকাল আমাদের নয়া পল্টনের অফিসের সামনে সেটা হচ্ছে যে, আমাদের ছাত্র দলের উত্তরের ছেলেরা একটা সভা করতে গিয়েছিলো। সেখানে জয়গা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। কোনো স্পেস দেয়া হচ্ছে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টা এখন গোটা বিশ্বে স্বীকৃত, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করে দেখবেন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা তখনই আসে যখন একটা দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, জনগনকে নির্যাতন করা হয় এবং জোর করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে সরকার তখনই এটা(নিষেধাজ্ঞা) হয়।”

এক প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের সেনা শাসিত সরকারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘চরিত্র একটাই।বাংলাদেশ সরকারের যে চরিত্র, মিয়ানমার সরকারের একই চরিত্র। ওরা মিলিটারি ক্ষমতা জান্তা নিয়েছে। মিলিটারি জান্তার সাথে এদের কোনো পার্থক্য নেই।”

‘‘ এরা(সরকার)জনগনকে বন্দুকের নল দিয়ে দমিয়ে রাখছে এবং মানুষের আশা-আকাংখাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।”

‘পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য দূ:খনজনক’

গুমের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী যে বক্তব্য রেখে্ছেন তার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এটা হাস্যকর শুধু নয়, অত্যন্ত দূঃখজনক। কারণ যাদের সন্তান গেছে, যার স্বামী গেছে, যাদের পরিজন গেছে। বাংলাদেশের মানুষ জানে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। এই সরকার তো এখন পর্যন্ত তো জবাব দেয়নি।”

‘‘ আমি আজকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে সকলের সামনে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, কারা কারা ভূমধ্য সাগরে সলিল সমাধি হয়েছে তাদের নামগুলো প্রকাশ করুন। যারা গুম হয়েছে তাদের মধ্যে কারা কারা গেছে। তাহলে আমরা মনে করবো যে, আপনারা জানেন যে, ভুমধ্য সাগরে আপনারা কাদেরকে কাদেরকে আপনারা সমাধি করে্ছেন, আপনারা সেগুলো জানতেন।”