যেভাবে পালিয়ে আফগানিস্তান ছাড়েন মেয়র জারিফা

আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১
0
ছবি, সংগৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট:
জারিফা গাফারি। আফগানিস্তানের ভোটে নির্বাচিত প্রথম নারী মেয়রদের একজন। তালেবানের হাতে কাবুলের পতনে আতঙ্কে ছিলেন তিনি। সেই আতঙ্ক থেকে দেশ ছেড়ে পালালেন। তবে এই পালানো কোনো স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ছিল না।

তালেবান যোদ্ধারা যখন রাজধানী কাবুলে গিয়ে পৌঁছাল, তিনি ধারণা করছিলেন তার জীবনে এক সঙ্কট হাজির হয়েছে। ফলে এর কয়েক দিন পর তিনি পরিবারসহ পালিয়ে জার্মানিতে চলে যান। তার দেশত্যাগের সেই নাটকীয় ঘটনাগুলো বলছিলেন তিনি।

২৯ বছরের এই গাফারি ছিলেন ছিলেন একজন কট্টর তালেবানবিরোধী। তিনি হয়ে উঠেছিলেন আফগানিস্তানের নারী অধিকারের একজন কণ্ঠস্বর। তার বিশ্বাস, ঠিক এ জন্যই তালেবান তাকে হুমকি বলে মনে করতো।

তার দাবি অনুযায়ী, ইসলামের আইনকানুনগুলোর যে ব্যাখ্যা তালেবানের কাছে গ্রহণযোগ্য তা ছিল নারীদের ভূমিকাকে একেবারেই সীমিত করে ফেলা। তিনি বলেন, আমার কথার যে শক্তি তা বন্দুকের নলের চেয়েও প্রভাবশালী।

অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে তালেবানের ক্ষমতা দখলে প্রাণ হারানোর শঙ্কা থাকলেও জারিফা গাফারি প্রথম দিকে ব্যাপারটাকে মেনে নিতে চাননি। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তার সমস্ত আশা ভরসা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তালেবান সারাদেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপের পর গাফারিকে তার কাছের মানুষ পরামর্শ দিল বাড়ি বদলে ফেলতে।

তার দাবি অনুযায়ী, তার আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হলো যেদিন তিনি দেখলেন তার খোঁজে তালেবান যোদ্ধারা তার আগের বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। সেখানকার একজন নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করেছে।

সম্প্রতি কয়েক বছর ধরেই জারিফা গাফারির জন্য নিরাপত্তাহীনতা একটা বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি ময়দান শাহর নামে যে শহরের মেয়র নির্বাচিত হন সেটি ছিল বেশ রক্ষণশীল। শহরে অনেক তালেবান সমর্থক ছিল। যে কারণে ২০১৮ সাল থেকে বেশ কয়েকবার জারিফা গাফারির প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছিল বলেও দাবি করা হচ্ছে।

গত বছরের শেষের দিকে তার বাবার হত্যার পর ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। তার বাবা ছিলেন আফগান সামরিক বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন অধিনায়ক। জারিফা গাফারি বিশ্বাস করেন, তালেবানই তার বাবাকে হত্যা করেছে। যদিও এর কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই।

মধ্য অগাস্টে তালেবান পুরো আফগানিস্তান দখলে নেয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি দেশ ত্যাগ করবেন। এরপর ১৮ অগাস্ট তিনি ও তার পরিবার একটি গাড়িতে চড়ে কাবুল বিমানবন্দরের দিকে রওনা হন। এই যাত্রার পুরো সময়টা তিনি গাড়ির সিটের পায়ের কাছে লুকিয়ে ছিলেন।

তালেবানের তল্লাশি চৌকিতে প্রতিবার গাড়ি থামানো হলেও তিনি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। সিটের নিচে পায়ের কাছে। তার বর্ণনা অনুযায়ী, যখন বিমানবন্দরে পৌঁছালাম তখন দেখলাম চারিদিকে সব জায়গায় শুধু তালেবান যোদ্ধা। এ সময় আমার পরিচয় গোপন রাখতে খুব কষ্ট করতে হয়েছিল।

বিমানবন্দরে জারিফা গাফারিকে ইস্তাম্বুলগামী একটি বিমানে উঠিয়ে দিতে সাহায্য করেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত। সেখান থেকে তিনি জার্মানি চলে যান।

তিনি বলেন, যখন আমার বাবার মৃত্যু হয় তখন মনে হয়েছিল জীবনটা ওলটপালট হয়ে গেল। কিন্তু ওই বিমানে ওঠার পর নিজের দেশ ত্যাগ করার যে ব্যথা, সেরকম বেদনা বাবার মৃত্যুর সময়ও পাইনি।

‘কাবুলের পতন ছিল আমার জীবনের এক মর্মান্তিক দিন,’ বলছেন জারিফা গাফারি।

তার মতে, এই ব্যথা কোনোদিন যাবে না। কোনোদিন যে আমাকে নিজের দেশ ছাড়তে হবে, সেটা আমি মোটেও কল্পনা করিনি।

জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরে জারিফা গাফারির জীবন এখন নিরাপদ। তিনি স্বীকার করেন যে কাবুল বিমানবন্দর বিপজ্জনক রূপ নেয়ার পর যেসব মানুষ সেখানে গেছেন তাদের মধ্যে তিনি অনেক ভাগ্যবান।

তালেবানের সাথেও সম্পর্ক তৈরি করতে চান এই নারী মেয়র
তালেবানের শাসনের অধীন আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের জীবনের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে তিনি অন্যান্য আফগান রাজনীতিক ও বিশ্ব নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন বলেও জানান। তিনি তালেবানের সাথেও যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক। তার মতে, ‘আমাদের একে অপরকে বুঝতে হবে। বিদেশী সৈন্যরা এসে আমাদের সাহায্য করবে না। তালেবানের সাথে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার কাজটা আমাদেরই করতে হবে। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য আমি প্রস্তুত।’

সূত্র : বিবিসি