যেসব অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তিরা প্রথমেই জান্নাতে যাওয়া যাবে না

আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৪
0

মুসলমান ও ঈমানের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও অনেক মানুষ প্রথম সারির প্রবেশকারী হিসেবে জান্নাতে যেতে পারবে না। নিজের পাপের দায়ভার নিয়ে লাখো কোটি বছর জাহান্নামে জ্বলার পর সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন আল্লাহ চাইলে।

মহানবী সা. বলেছেন, ‘হারাম ভক্ষণকারী জান্নাতে যাবে না’। (সুনানে বায়হাকি-৫৫২০)

অন্যত্র তিনি আরও বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি হারাম ভক্ষণ করে সারা রাত-দিন নামাজ পড়ে তার পরও তার এক রাকাত নামাজও কবুল হবে না।’

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘… আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো।’ (সূরা নিসা-০১)

মহানবী সা. বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী

মহানবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (মুসলিম)

মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস ও পুরুষের বেশধারী নারী

রাসূল সা. বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না- মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস (আর দাইয়ুস হলো এমন ব্যক্তি যে তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীনস্থ নারীদের বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না), আর পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)

অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি

হারেছা ইবনে ওহাব রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সা. বলেন, ‘অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (আবু দাউদ, হাদিস, ৪১৬৮)

অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করো না…।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত, ১৮৮)।

হাদিস শরিফে এসেছে ‘অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যদিও তা পিপুল গাছের একটি ছোট ডালের সমপরিমাণও হয়ে থাকে।’ (মুসলিম, আয়াত, ১৯৬)

গর্ব ও অহঙ্কার প্রদর্শনকারী

রাসূল সা. বলেছেন, ‘গর্ব-অহঙ্কারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৩১)

ওয়ারিসকে বঞ্চিতকারী

রাসূল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিসকে তার প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ২৬৯৪)

প্রতারণাকারী শাসক

মাকাল বিন ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, মুসলমানদের ওপর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক যদি এ অবস্থায় মারা যায়, সে তার অধীনস্থদের ধোঁকা দিয়েছে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস, ৬৬১৮)

খোটাদানকারী ও মদ্যপায়ী

মহানবী সা. বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যেতে পারবে না। তারা হলো- পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, মাদকসেবী, উপকার করে খোটা দানকারী।’ (নাসায়ি)

চোগলখোর ব্যক্তি

মহানবী সা. বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পাবে- যে ছিল দুই মুখো আচরণকারী, যে একজনের কাছে এক কথা আর আরেকজনের কাছে অন্য কথা নিয়ে হাজির হতো।’ (মুসলিম)

দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে ইলম অর্জনকারী

রাসূল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিক্ষা গ্রহণ করল, যা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য শেখা হয়, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।’ (আবু দাউদ)

অকারণে তালাক কামনাকারী

রাসূল সা. বলেন, ‘যে নারী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

লৌকিকতা প্রদর্শনকারী

হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী সা. বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে। এরপর একজন কারিকে। তারপর একজন দানশীলকে। প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। অতঃপর শহীদকে বীর-বাহাদুর উপাধি লাভের জন্য জিহাদ করার অপরাধে, কারি সাহেবকে বড় কারির উপাধি ও সুখ্যাতি লাভের জন্য কিরাত শেখার অপরাধে এবং দানশীলকে বড় দাতা উপাধি লাভের নিয়তে দান-সদকা করার অপরাধে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম)

উলঙ্গ-অর্ধউলঙ্গ নারী

ওই সব উলঙ্গ-অর্ধউলঙ্গ নারী যারা নিজেদের চলাফেরা ও বেশভূষায় মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইবে। আর নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথায় উটের মতো উঁচু আর এক পাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো চুলের খোপ শোভা পাবে। এসব নারী জান্নাতে তো যাবেই না, বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ বহু দূর থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসলিম)

যে ১০ গুনাহ থেকে বিরত থাকতে বলেছে
যে ১০ গুনাহ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন মহানবী সা.
বিখ্যাত সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দশটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত বা উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন—

১. আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
২. পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদি মাতা-পিতা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন বা ধন সম্পদ ছেড়ে দেয়ার হুকুমও দেয়।

৩. ইচ্ছাকৃতভাবে কথনও কোন ফরজ নামাজ ছেড়ে দিও না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তায়ালা তার থেকে দায়িত্ব উঠিয়ে নেন।

৪. মদ পান থেকে বিরত থাকবে। কেননা তা সকল অশ্লীলতার মূল।

৫. সাবধান! আল্লাহর নাফরমানী ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো, কেননা নাফরমানী কারণে আল্লাহর ক্রোধ অবধারিত হয়ে যায়।

৬. জিহাদ থেকে কখনো পালিয়ে যাবে না, যদিও সকল লোক মারা যায়।

৭. যখন মানুষের মধ্যে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে আর তুমি সেখানেই রয়েছ, তখন সেখানে তুমি অবস্থান করবে (পালিয়ে যাবে না।)

৮. শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করবে (কার্পণ্য করে তাদের কষ্ট দিবে না)।

৯. পরিবারের লোকদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষার জন্য কখনো শাসন থেকে বিরত থাকবে না।

১০. আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ২১৫৭০, সহিহ তারগীব, হাদিস, ২৩৯৪)

হাদিসটি বর্ণনাকারী সাহাবি মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন বিশিষ্ট সাহাবী। তিনি হাদিস বর্ণনা ও ইসলামের অন্যান্য শাখায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন একজন আনসারী সাহাবি। তিনি বদর যুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

তিনি মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. ১৮ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় আকাবায় রাসূল সা.-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণের মজলিসে তিনি উপস্থিত ছিলেন।

তিনি সবসময় রাসূল সা.-এর স্নেহ ও আদর লাভে ধন্য হয়েছেন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সা. তাকে ইয়েমেনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। হজরত আবু বকর এবং ওমর রা-এর শাসনামালেও ইসলামের নিরলস সেবক হিসেবে কাজ করে যান।

তিনি রাসূল সা.-এর কাছ থেকে সর্বমোট ১৫৭টি হাদিস বর্ণনা করেন।

মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ১৮ হিজরীতে ৩৮ বছর বয়সে হজরত ওমর রা-এর শাসনামালে প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে বায়তুল মাকদাস ও দামেশক-এর মধ্যবর্তী এবং জর্দান নদীর তীরবর্তী ‘বীসান‘ নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন