যেসব পাপ নেক আমল নষ্ট করে দেয়

আপডেট: জুন ৩, ২০২২
0

জাওয়াদ তাহের

আল্লাহর প্রিয় বান্দারা আল্লাহর ভয়ে সর্বদা আল্লাহর অনুগত হয়ে চলার চেষ্টা করে। কখনো ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে তাওবা করে নিজেকে শুধরে নেয়। কিন্তু অনেকে নিজেদের অগোচরে এমন কিছু ভুল করে ফেলে, যার কারণে পুণ্যগুলো নিমিষেই আমলনামা থেকে হারিয়ে যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.) এমন কিছু পাপের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, যা করলে জীবনের সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে।

সে জন্য একজন মুমিনের উচিত এমন কোনো কাজে না জড়ানো। নিম্নে আমল বিনষ্টকারী পাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো—
আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা(To associate partners with Allah)

এক আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শিরক করা। যা নিজের জীবনের সব আমলকে নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেছেন, ‘আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি এই মর্মে ওহি পাঠানো হয়েছে যে যদি আল্লাহর সঙ্গে শরিক স্থির করেন, তাহলে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। ’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৬৫)

লোক দেখানো আমল ( The act of showing people)
: আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য আমল করা। যারা আমলের বিনিময়ে শুধু পার্থিব জীবনে সুখ-শান্তি, যশ-খ্যাতি প্রত্যাশা করে। লোক দেখানো মনোভাব নিয়ে কাজ করে। এমন আমল তার জীবনের সব নেক আমল বিনষ্ট করে দেবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ দুনিয়ার জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমরা তাদের কাজের পূর্ণ ফল দান করি এবং সেখানে তাদের কম দেওয়া হবে না। তাদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করেছিল আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে। আর তারা যা করত তা ছিল নিরর্থক। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ১৫, ১৬)

দান করে খোঁটা দেওয়া ( Donate and give a peg): কাউকে কোনো কিছু দান করে খোঁটা দেওয়া কিংবা অনুগ্রহ প্রকাশ করা। এটি একটি মন্দ অভ্যাস, যা সমাজের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। কিন্তু কেউ যদি এ কাজ করে বসে তাহলে তার জীবনের নেক আমল বাতিল হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, দানের কথা বলে বেড়িয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ওই ব্যক্তির মতো নিষ্ফল করো না, যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে এবং আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। ফলে তার উপমা হলো এমন একটি মসৃণ পাথর, যার ওপর কিছু মাটি থাকে, তারপর প্রবল বৃষ্টিপাত সেটাকে পরিষ্কার করে দেয়। যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগানোর ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

কাউকে ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না’ বলা : ভুলে কিংবা রাগের বশবর্তী হয়ে কারো মন্দ কাজ দেখে এ কথা বলা যে আল্লাহ তাআলা তোমাকে কোনো দিন ক্ষমা করবে না। কাউকে ক্ষমা করা বা না করার অধিকার একমাত্র পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার। তাই এমন কথা বলা অমার্জনীয় অপরাধ। জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ অমুক লোককে মাফ করবেন না।

আর আল্লাহ তাআলা বলেন, সে লোক কে! যে শপথ খেয়ে বলে যে আমি অমুককে মাফ করব না? আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার আমল নষ্ট করে দিলাম। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৫৭৫)

ইচ্ছাকৃত আসরের নামাজ ছেড়ে দেওয়া ( Deliberate abandonment of Asr namaz)
: মুমিনের কাছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রকৃত মুমিন কোনো নামাজ ছাড়তে পারে না। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে আল্লাহ তাআলা আসরের নামাজের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী (আসরের) নামাজের প্রতি। এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৮)

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। বুরাইদা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৩)

কথা অথবা কাজের মাধ্যমে আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেওয়া : আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদাররা, তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু কোরো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চ স্বরে কথা বলো তার সঙ্গে সেরূপ উচ্চ স্বরে কথা বলো না; এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সব কাজ বিনষ্ট হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না। (সুরা হুজরাত, আয়াত : ২)

যারা রাসুল (সা.)-এর মজলিসে ওঠাবসা ও যাতায়াত করত, তাদের এ আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল নবীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তার সময় যেন ঈমানদাররা তাঁর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি একান্তভাবে লক্ষ্য রাখেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো, আর তোমরা তোমাদের আমল বিনষ্ট কোরো না। ’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ৩৩)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।