রবীন্দ্রনাথ কালো ছিলেন বলে তার মা তাকে কোলে নিতেন না — বিজেপি নেতার বক্তব্যে ভারতজুড়ে সমালোচনা

আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২১
0

ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে একটি মন্তব্য করায় বিতর্কের ঝড় বইছে।

ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মন্ত্রী ডা. সুভাষ সরকার রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, কবির গায়ের রঙ কালো ছিল বলে তার মা তাকে কোলে নিতেন না। খবর বিবিসির।

ঠাকুর পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, সাবেক ছাত্রছাত্রী বা সাহিত্যিক সবাই বলছেন কবির গায়ের রঙ কিছুটা চাপা ছিল ঠিকই, কিন্তু মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, এরকম কোনও তথ্য পাওয়া যায় না।

এই প্রসঙ্গ একেবারেই অনভিপ্রেত বলে তারা মনে করছেন। তবে মন্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছে তার দল বিজেপি।

মন্ত্রীর একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ক্লিপে ডা. সরকারকে বলতে শোনা গেছে, তার মা এবং তার বাড়ির অনেকে, রবীন্দ্রনাথ কালো বলে তাকে কোলে নিতেন না। সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষের হয়ে বিশ্ববিজয় করেছেন।

ওই ক্লিপে ডা. সরকার বিস্তারিতভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গায়ের রঙের প্রসঙ্গে বলেছেন। তিনি বুধবার শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর একটি অনুষ্ঠানে এ কথা বলছিলেন।

শান্তিনিকেতনের সাবেক ছাত্র ও প্রবীণ সাংবাদিক- লেখক রজত রায় বলছেন এরকম কোনও তথ্য তিনি পাননি কোথাও।

তিনি বলেন, আমি কোথাও পাইনি যে রবীন্দ্রনাথ মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দুটো বইয়ে উল্লেখ আছে যে মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন ছিল। একটি জীবনস্মৃতি, দ্বিতীয় বইটি ছেলেবেলা।

সেখানে এরকম কোনও ঘটনার উল্লেখ নেই যা থেকে মনে হতে পারে যে মাতৃস্নেহ থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছিলেন। উল্টোটাই বরং আছে। তার মা বালক রবীন্দ্রনাথকে ডেকে বলতেন. রামায়ণ, মহাভারতের মতো ধর্মগ্রন্থ পড়ে শোনাতে। রবীন্দ্রনাথ খুব উৎসাহের সঙ্গে মা এবং মায়ের বয়সী অন্যদের সামনে দুপুরবেলা সেগুলো পড়তেন।

আরও উল্লেখ আছে, বাড়িতে মাস্টারমশাইদের কাছে পড়তে হতো খুব কড়া নিয়মে। তাদের এড়াবার জন্য অনেক সময়েই রবীন্দ্রনাথ মায়ের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিতেন এবং মা সেটাকে প্রশ্রয় দিতেন।

কবি ও সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার বলছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে কোনও কথা বলার আগে সহজেই উপলব্ধ রবীন্দ্র জীবনী পড়ে নেওয়া উচিত, যাতে কোনও ভুল ভ্রান্তি না হয়। একজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়টা আরও বেশি।