রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারে অচেনা দূর দেশেও স্বস্তির অধিকার নাই ডা. জুবাইদা রহমানের

আপডেট: আগস্ট ১, ২০২৩
0

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। কিন্তু তিনি রাজনীতি থেকে থেকেছেন দূরে। কখনও কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেননি। তারপরও তিনি এখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

মানসিক নির্যাতন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। দেশ থেকে দূরে, পরিবারের সদস্যদের থেকে বহুদূরে প্রবাসে নিভৃতে একজন গৃহবধূ সাংসারিক জীবনযাপন করছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, এমন কি কখনও কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করেননি। মেধাবী শিক্ষাবিদ, চিকিৎসাবিদ ও অরাজনৈতিক জীবন ধারণ করেও ক্ষুদ্র চাকরি থেকে তাকে বরখাস্ত করা হলো। রবি ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ কবিতা হয়তো এখানে প্রযোজ্য।

একজন নারী যিনি বাল্যকালে পিতৃহারা হয়েছেন, বাবার মৃত্যুর পর যিনি দেখেছেন সাদা শাড়ি পরিহিতা বিধবা মাকে প্রতিদিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে। তবুও মনকে শক্ত করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রের মতো কঠিন বিষয়ে অধ্যবসায় করেছেন। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একজন নারীর জন্য তার চাকরি কতো প্রিয়, কতো সাধনার সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু শুধু চাকরিচ্যুত করেই শেষ নয়! মা দিবসে বাবা হারা কন্যা মা কিংবা শাশুড়ি মা কাউকে দেখতে পান না, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা প্রতিবছর আসে যায় কিন্তু মুসলিম প্রথানুযায়ী তিনি কোনো কিছুই মায়েদের সাথে পালন করতে পারেন না।

বছর ঘুরে নতুন বছর আসে, নিউ ইয়ার, পহেলা বৈশাখ কোনোদিনই দুই মায়ের মুখ দেখতে পান না! বাবা-শশুর কিংবা দেবর কারো মৃত্যুবার্ষিকী কোনো কিছুর মোনাজাতে শরিক হতে পারেন না। এক যুগের বেশি সময় ধরে পরম শ্রদ্ধেয় পিতা-শশুরের মাজারের মাটি ছুঁয়ে দেখতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন কিংবা বিয়ে কোনো আনন্দেই অংশগ্রহণ করতে পারেন না। কিন্তু তাও নীরবে দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে, ভিনদেশে অচেনা মানুষের ভিড়ে নারী হিসাবে এতটুকু স্বস্তির হয়তো অধিকার নাই! কারণ ব্যক্তিগত জীবন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে একজন মেধাবী শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসাবিদ নারীকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার অপচেষ্টা! কথায় বলে সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান করো, কিন্তু বর্তমান যুগে প্রতিষ্ঠিত নারীরাও মিথ্যা অপপ্রচার দ্বারা সম্মানহানির হুমকিতে। এর শেষ কোথায়? তাহলে কি এই দুটি প্রবাদই সঠিক ‘‘লেখাপড়া করে যে গাড়িচাপা পড়ে সে’’ কিংবা ‘‘জ্ঞানের কোনো শেষ নাই, জ্ঞানের চেষ্টা বৃথা তাই’’!

তাহলে সব কন্যা শিশু যারা বাবাকে বলেছে বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে, বিধবা মাকে বলেছে মায়ের স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত হবে- সবাই মিথ্যা স্বপ্নে বিভোর হয়েছে।

করোনাকালীন দুঃসময়ে শিশু-কিশোরসহসমাজের নিপীড়িত মানুষের পাশে ডা. জুবাইদা রহমান: ডা. জুবাইদা রহমান শিশু-কিশোর ও সমাজের নিপীড়িত মানুষের জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। শৈশবে ছাত্রী থাকা অবস্থায় যখনই ছুটি থাকতো তখনই তিনি সমাজের অবহেলিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষা প্রদানে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। স্কুলজীবনে তিনি মেডেল অব অনার, গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন। কিন্তু দাম্ভিক না হয়ে বরং স্কুলজীবন থেকেই তিনি দেশের অবহেলিত শিশুদের সাথে অবাধে সময় কাটাতেন, বুঝতে চাইতেন তাদের কষ্টগুলো।

বিজ্ঞানপ্রেমী জুবাইদা শৈশবে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য স্কুল থেকে পেয়েছিলেন স্বর্ণপদক। হলিক্রস কলেজে অধ্যয়নকালে টিম লিডার হিসেবে প্রথম পুরস্কারে ভূষিত হন ‘জাতীয় বিজ্ঞান মেলায়’। তাঁর নির্মিত প্রজেক্টটির নাম ছিল ‘প্রাণায়িত ছবি’-short animation on Germination. শিক্ষা জীবনে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায়ই মেধা তালিকায় স্থান পান তিনি। পরবর্তীতে সম্মান হিসেবে পান চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড। ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ডিএমসি) এমবিবিএস পড়াকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন প্রফেশনাল পরীক্ষায় হনার্স পান এবং ফাইনাল পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য তিনি মাহবুব মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। বিসিএস হেলথ ক্যাডারদের প্রশিক্ষণকল্পে অনুষ্ঠিত ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন। প্রবাসে অবস্থানের এই সময়ে ডা. জুবাইদা রহমান দেশের মানুষকে দূরে ফেলে এলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। Save the children, Great Ormond Street Hospital, Sight Savers, UNICEF-সহ বিভিন্ন সংস্থাকে সাধ্যমতো স্বল্প পরিসরে সহায়তা করে যাচ্ছেন।

আমাদের দেশে স্যানিটেশন একটি বিরাট সমস্যা, তাঁর উদ্যোগে দেশে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্যানিটেশন পদ্ধতি স্থাপন করা হয়েছে। দেশের শিশু-কিশোরদের দৃষ্টিশক্তির দিকে লক্ষ্য দিয়ে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরদের চোখের চিকিৎসা ও পরবর্তীতে চশমার ব্যবস্থা করে দেন। ধার্মিক, মেধাবী ডা. জুবাইদা ২০১৬ সালে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি, মা, মেয়ে ও বোনের সাথে একত্রে পবিত্র হজব্রত পালন করেন। এছাড়া বিয়ের পূর্বে তিনি চারবার ওমরাহ পালন করেন। দেশে ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তারেও তিনি কাজ করছেন। শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় পুস্তক প্রদানসহ বিভিন্ন রকম সহায়তা করেন ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি করোনা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাঁর বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে বহু মসজিদে মাস্ক ও সাবান সরবরাহ করেন।

করোনার এ দুঃসময়ে বিশ্বের শিশু-কিশোরদের স্কুল বন্ধ। এ সময় তাদের মনোবল বৃদ্ধি ও তারা যেন মানসিক বিষোণ্ণতায় না ভোগে সে জন্য তিনি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন এবং বর্তমানে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিশু-কিশোরদের কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও এর প্রতিরোধকল্পে ডা. জুবাইদা রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় বিজ্ঞানধর্মী ফেসবুক গ্রুপে (Conquer Covid-19-A Global Initiative) এ সকল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে ডা. জুবাইদা লেখালেখি করেন ও কবিতা রচনা করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ সময়ে কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার শেষের দুটি পঙক্তি মনে পড়ে যাচ্ছে- ‘স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান বয়েসি বটের ঝিলিমিলি পাতা, যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’

প্রথম নিউজ