রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন : পিআরআই

আপডেট: মে ১৪, ২০২৩
0

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধুমাত্র শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মৌলিক সংস্কারই বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতকে উন্নত করতে পারে। রোববার প্রাক-বাজেট প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঋণের সুদ পরিশোধ, পেনশন সুবিধা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট ব্যয় হয়েছে।

মনসুর বলেন, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান রাজস্ব ও কর নীতির ব্যর্থতার কারণে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এবং অর্জনের মধ্যে ব্যবধান প্রতি অর্থবছরে বাড়ছে।

এই অর্থনীতিবিদ জানান, ব্যাংক, এনবিআর, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রকদের ব্যাপক সংস্কার ছাড়া এই খাতে আইএমএফের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব।

একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত নয় মাসে প্রায় ৩৩ ভাগ আমদানি কমিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে। বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার এবং পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।

ড. রাজ্জাক চলতি অর্থবছরের বিভিন্ন খাতে অর্জন এবং সরকারের ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রেজেন্টেশন দেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, চলতি বছরে তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালের ৮মে রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।

তীব্র মুদ্রাস্ফীতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের আগস্টে ৯ দশমিক ৫ ভাগে পৌঁছেছিল এবং পরবর্তী ১০ মাসে গড়ে ৮ দশমিক ৯ ভাগ বজায় রয়েছে এবং বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ৩ দশমিক ৫ ভাগ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে।

অন্যদিকে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জমা করা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। ২৩’ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ হবে ২১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে এই সংখ্যাটি এখনো মুদ্রানীতি বিবৃতিতে বর্ণিত সংশোধিত রেমিট্যান্স লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম।

২০২২ সালের জুলাই থেকে ২৩’ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত, রফতানি থেকে মোট আয় ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন দশমিক ৪৬ ভাগ কম।

দেশের আর্থিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে আইএমএফ তার ঋণ প্যাকেজের সাথে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে।

আইএমএফর মূল চাওয়ার মধ্যে একটি হলো ২৪’ ও ২৫’ উভয় অর্থবছরে বার্ষিক জিডিপির অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৫ ভাগ দ্বারা রাজস্ব সংহতি প্রচেষ্টা জোরদার করা, তারপর ২৬’ অর্থবছরে আরো শূন্য দশমিক ৭ ভাগ বৃদ্ধি করা।

এর অর্থ হলো কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমান জিডিপির ৭ দশমিক ৮ ভাগ থেকে ২৪’ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩ ভাগ, ২৫’ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৮ ভাগ এবং অবশেষে ২৬’ অর্থবছরের মধ্যে ৯ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করা।

আইএমএফ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক ও ভ্যাট শাখার মধ্যে কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট স্থাপনের সুপারিশ করেছে।

রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য পিআরআই কিছু সেক্টরের সংস্কারেরও সুপারিশ করেছে-রাজস্ব সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেয়া, ট্যাক্স নেট প্রসারিত করা, কর ছাড় কমানো, কর্পোরেট ট্যাক্স এবং ব্যক্তিগত আয়করের সাথে সম্মতি বৃদ্ধি করা, ভ্যাট আয়ের সংস্কার, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং ব্যয়ের গুণমান উন্নত করা।

সূত্র : ইউএনবি