রাত পোহালেই শত্রু শত্রু খেলা কোপা আমেরিকার

আপডেট: জুলাই ১১, ২০২১
0

রাত পোহালেই কোপা আমেরিকার স্বপ্নের ফাইনাল। রোববার ভোরে মারকানায় রুদ্ধশ্বাস মহারণ। মুখোমুখি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। শুধু মেসি-নেইমারের দ্বৈরথ নয়, বাঙালির আবেগ, চিরন্তন লড়াই। বাঙালি দুদলে ভাগ হয়ে গলা ফাটাবে। কেউ বেছে নেবেন হলুদ, কারোর পছন্দ সাদা-নীল। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬ টায়।

এক-দুই বছর নয়, দীর্ঘ ১৪ বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। যে মাঠে দুদলের লড়াই হবে, গেল আসরে এই মাঠেই কোপার মুকুট পরেছিল ব্রাজিল। সেখানে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে আর্জেন্টিনার। এই মারাকানাতেই ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে শিরোপা জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। একই মাঠে মেসিরা কেঁদেছিল গেল আসরেও। সেবার স্বাগতিক ব্রাজিলের কাছে হেরে শেষ চার থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা।

তবে এবারের সুপার ক্ল্যাসিকোতে কে জিতবে, ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত তোলা থাক। তবে তাঁর আগে দেখে নেওয়া যাক দুদলের অতীত ইতিহাস।

কোপার ফাইনালের মূল আকর্ষণ দুদলের দুই বড় তারকা – নেইমার ও লিওনেল মেসি। দুজনেই এখনো জাতীয় দলের হয়ে বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি।

সেরা খেলোয়াড়ও হতে যাচ্ছেন দুজনের একজন। এবারের কোপার ফাইনালে দলকে তুলতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁদের। এ ক্ষেত্রে সেরা বাছাই করার উপায় কিছুটা সহজ হতে পারে। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চার গোল করেছেন মেসি। গোল করানোর দিক দিয়েও এগিয়ে তিনি। টুর্নামেন্টে পাঁচবার সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন তিনি।

এই তালিকায় নেইমারের অবস্থান তিন নম্বরে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত দুই গোল করেছেন তিনি। মেসি-নেইমারের মাঝে আছেন আর্জেন্টিনার লাউতারো মার্তিনেজ। তিনি করেছেন তিন গোল। তবে অ্যাসিস্টে মেসির পর আছেন নেইমারই। তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন ব্রাজিল সুপারস্টার।

১৯৯৩ সালে কোপা জয়ের পর আর ট্রফি না জেতা আর্জেন্টিনা মুখিয়ে আছে শিরোপার স্বাদ পেতে। কোচের ভাষায়, ‘অবশ্যই আমরা জিততে চাই। জিততে চাই আমাদের জন্য, আমাদের মানুষের জন্য এবং এতদিন ধরে আমরা যারা একসঙ্গে আছি ও সুরক্ষা-বলয় না ভাঙায় মনোযোগ ধরে রাখছি, সবার জন্য।’

এবার আসা যাক দলীয় হিসেবে-নিকাশে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ১০৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। যেখানে জয়ের পাল্লা ভারী ব্রাজিলের। ৪৩টিতে জয় পেয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা জিতেছে ৩৯টিতে, বাকি ২৫ ম্যাচে ড্র।

কোপার মঞ্চে অবশ্য জয়ের দিক দিয়ে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। কোপায় দুদলের ৩৩ দেখায় ১৫টিতে জিতেছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের জয় ১০টিতে। ৮টিতে ড্র।

চলতি আসরে দুদলের চলার পথ ছিল একই সমান্তরালে। ফাইনালে ওঠার আগ পর্যন্ত মোট ৬ ম্যাচের ৫টিতে জিতেছে আর্জেন্টিনা, একটিতে ড্র। ব্রাজিলেরও একই সমীকরণ। ৫ জয় ও এক ড্র। ৬ ম্যাচে ব্রাজিল প্রতিপক্ষকে দিয়েছে ১২ গোল, হজম করেছে দুই গোল। অন্যদিকে ১১ গোল দিয়ে আর্জেন্টিনা হজম করেছে তিন গোল। আসরে ১৩টি হলুদ কার্ড দেখেছে আর্জেন্টাইনরা। বিপরীতে আটটি হলুদ কার্ড দেখেছে ব্রাজিলিয়ানরা।

ফাইনালে ব্রাজিলকে দেখা যেতে পারে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে। গোলপোস্ট সামলাবেন এডারসন। ডিফেন্সে থাকতে পারেন দানিলো, থিয়াগো সিলভা, মারকি মার্কুইনহোস। মিডফিল্ড সামলাবেন ফ্রেড ও কাসেমিরো। আর রক্ষণে তো আছেনই নেইমার, লুকাস পাকুয়েতা, এভার্টন ও রিচার্লিসন।

অন্যদিকে ফাইনালের লড়াইয়ে আর্জেন্টিনাকে হয়তো দেখা যেতে পারে ৪-৩-৩ ফরমেশনে। এই ফরমেশনেই বেশি সাফল্য পেয়েছে আকাশীরা। তবে ফাইনালে ডি মারিয়াকে নিয়ে অগ্নি পরিক্ষা দিতে পারেন স্কালোনি। শুরুর একাদশেও নামিয়ে দিতে পারেন তাঁকে। মিডফিল্ডে মেসির আস্থা এখন ডি পল, পারেদেস ও রদ্রিগেজে। শুরু থেকেই মাঝমাঠে থাকতে পারেন তারা।

ডিফেন্স নিয়ে চিন্তায় থাকা আর্জেন্টাইনদের দেওয়াল হতে পারেন মোলিনা, পিজ্জেলা, ওটামন্ডি ও ট্যাগলিফ্যালিকো। আগের ম্যাচের নায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ তো নিশ্চিতভাবে থাকছেন গোলপোস্টের দায়িত্বে। সেই সঙ্গে আক্রমণে গঞ্জালেস, মার্তিনেজের সঙ্গে মেসির পায়ের জাদু তো আছেই। কারণ ফুটবলে বেলা যে ফুরাচ্ছে তাঁর। এটাই হয়তো তাঁর শেষ কোপা আমেরিকা। তাই শেষ বেলায় একটা ট্রফি যে চাই-ই-চাই। নাহলে রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের তকমা পাওয়া মেসির ফুটবল জীবন যে থেকে যাবে অপূর্ণ।