রেলওয়ের ১৬টি গাছ কেটে সাবারের চেষ্টা আইওডাব্লুর তৎপরতায় উদ্ধার, মামলা প্রক্রিয়াধীন

আপডেট: মে ৮, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের জায়গার ১৬ টি গাছ কেটে সাবার করার ২ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করেছে রেলওয়ের ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) মোঃ শরিফুল ইসলাম। ৮ মে শনিবার বিকাল ৪ টায় সৈয়দপুর পৌরসভা ১০ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া মনসুরের মোড় সংলগ্ন খরখরিয়া খালের পাশের বিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধারকৃত গাছগুলো জব্দ করে আইওডাব্লু অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জানা যায়, পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে মোঃ আইনুল ইসলাম তার বাবার নামে লীজ নেয়া রেলওয়ের জমিতে বেড়ে ওঠা বিশালাকৃতির ১৬ টি ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে পাইকার মকবুলের কাছে বিক্রি করে। শনিবার সকালে পাইকার মকবুল ও বিক্রেতা আইনুল উপস্থিত থেকে কাঠুরে কাল্ঠাসহ আরও ৩ জন দিনমজুরকে নিয়ে গাছগুলো কাটে।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে দুপুর ২ টায় পৌঁছলে দেখতে পায় আইনুলের সহযোগিতায় মকবুল গাছ কেটে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছে। এসময় রেলওয়ের জায়গায় লাগানো গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে আইনুল বিশাল চড়া দেখিয়ে বলে, এগুলো রেলওয়ের জমি হলেও এখন আমাদের। আমার বাবা ১ শ’ বছরের জন্য লীজ নিয়েছে। এখানে যেমন ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে আমরা খাই। তেমনি করে বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছি। যেগুলো প্রয়োজনে কেটে বিক্রি করে বা বাড়ির কাজে লাগাই তাতে কি হয়েছে?

রেলওয়ের কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এভাবে গাছ কেটে বিক্রি করা কি ঠিক? এমন প্রশ্ন করলে সে জানায়, পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলরের স্বামী সাংবাদিক মহসিন আমাদের আত্মীয়। তিনি সকালে উপজেলা সামাজিক বন কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে এখানে এসেছিলেন এবং সব শুনে কাজ করার জন্য অনুমতি দিয়ে গেছেন। তাই এ ব্যাপারে কিছু জানার থাকলে তার সাথে কথা বলেন। একথা বলেই সে তার মোবাইল থেকে কল দিয়ে সাংবাদিক মহসিনের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলটা এগিয়ে দেয়। তখন সাংবাদিক টুটল কথা বললে মহসিন বলেন, ওখানে কেনো গেছেন? কোন ডিস্টার্ব না করে চলে যান। পারলে ছবি তুলে রিপোর্ট করেন। দেখি আপনারা কি করতে পারেন!

এতে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা বিষয়টি সম্পর্কে আইনী নিয়ম নীতি জানতে মুঠোফোনে রেলওেয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (ভূসম্পত্তি) আইওডাব্লু মোঃ শরিফুল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী (সেতু/ময়দান) এইএন মোঃ আহসান উদ্দিন এর জানতে চান। এতে তাঁরা জানান, রেলওয়ের জমিতে লাগানো গাছ রেলওয়েরই সম্পদ। এটি কেউ কোনভাবেই বিনা অনুমতিতে কেটে নিতে পারবেন না। তখন তাঁরা লোকেশন জেনে নিয়ে তাৎক্ষণিক আইওডাব্লু অফিসের নৈশ প্রহরীসহ ৩ জন কর্মচারীকে ঘটনাস্থলে পাঠান।

এদিকে আইওডাব্লু এবং এইএন এর সাথে সাংবাদিকদের কথা বলার সময় অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি করে গাছ বোঝাই ভ্যান নিয়ে সটকে পড়ে পাইকার। যাওয়ার সময় গাছের মূল অংশ বড় আকারের কান্ডগুলো (গোলাই) গাছ বিক্রিকারী আইনুল ও ইউসুফ আলীর বাড়ির উঠানে ভ্যান থেকে নামিয়ে রেখে যায়। তবে ডালপালা নিয়ে শহরের কাজীপাড়ায় জামেয়া আরাবিয়া মাদরাসা গেট সংলগ্ন ভোলার খড়ির গোলায় নামিয় দেয়।

পরে বিকাল ৪ টায় আইওডাব্লু অফিসের কর্মচারীরা এসে পৌছলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে গাছের গোলাইগুলো দেখতে পায়। এসময় আইনুল ও তার বাবা ইউসুফ পালিয়ে যায়। ফলে প্রায় ১ লাখ টাকা মূল্যের উদ্ধারকৃত ১৬ টি গাছের টুকরো করা কান্ডগুলো জব্দ করে আইওডাব্লু অফিসে নিয়ে যায়।

এরপর সাংবাদিক মহসিন সহকর্মী সাংবাদিক সাদিকুল ইসলাম সাদিক কে মুঠোফোনে কল করে বলেন, কাজটা ঠিক কর নাই। গরীব মানুষের কাজে বাধা দিয়ে কি লাভ হলো। এর ফল পাবে তোমরা বলেও হুশিয়ারি করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ আইনুল প্রায়শই গাছ কেটে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করে ওই মহিলা কাউন্সিলরের স্বামীসহ অবৈধ আর্থিক সুবিধাভোগী কয়েকজন।

এ ঘটনায় গাছ কেটে সাবার করার অপচেষ্টার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান, এইএন মোঃ আহসান উদ্দিন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

শাহজাহান আলী মনন
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি